ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

৯৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন;###;নয় মাসে ৪১ শতাংশ বাস্তবায়ন

বাস্তবায়নে গতি না আসায় এডিপি কাটছাঁট

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৬ এপ্রিল ২০১৬

বাস্তবায়নে গতি না আসায় এডিপি কাটছাঁট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) সংশোধন করা হয়েছে। মূলএডিপি ১ লাখ ৯৯৭ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ফলে কমে গেছে প্রায় ৭ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। আরএডিপির মোট বরাদ্দের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ) থেকে ৬৪ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬৮ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। যদিও অর্থ বিভাগ থেকে সংশোধিত এডিপির আকার ৮৮ হাজার কোটি টাকা করার সুপারিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো চাহিদা পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দ বড়ানো হয়েছে। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন খাত, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুত এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা ও ধর্ম খাত। বাস্তবায়নে গতি না আসায় এত বড় অঙ্ক ছেঁটে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, আইএমইডির সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, এনইসি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বরাদ্দ কোন সমস্যা নয়, যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের যত চাহিদা রয়েছে সে অনুযায়ী ব্যয় করতে পারবে। প্রয়োজন হলে আরও বরাদ্দ দেয়া হবে। অর্থের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন সমস্যা হবে না। চাহিদা থাকলেও আমরা সে অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে পারিনি। তারপরও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বরাদ্দ দিয়েছি। আগামীতে নতুন এডিপির পরিমাণ আরও বাড়বে। পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে ৪১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে। ব্রিফিং এ জানানো হয়, সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন খাত। পরিবহন খাতে সংশোধিত এডিপির ২২ শতাংশ বা ১৯ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুত খাত। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, ঘোড়াশালের দুটি ইউনিটের রিপাওয়ারিং, পল্লী বিদ্যুতের ১৫ লাখ গ্রাহককে সংযোগ প্রদানসহ বড় কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে এ খাতে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাত। শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মানবৃদ্ধির লক্ষ্যে এ খাতে নয় হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে বরাদ্দ আরও বাড়তে পারে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন। কেননা এনইসিতে যে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলো সেগুলো থেকে এই তিন খাতেও বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রস্তবিত (এনইসিতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে) খসড়া অনুযায়ী, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ খাতে সাড়ে পাঁচহাজার কোটি টাকা এবং কৃষি খাতে ৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কাটছাঁট নিয়ে অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। অর্থমন্ত্রণালয় ব্যাপকভাবে এডিপির আকার কমাতে চাইলেও তাতে রাজি হয়নি পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। পরবর্তীতে এনইসি বৈঠকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেয়। এতে মূলএডিপি থেকে বরাদ্দ কমে যায় ৫ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হিসাবে চলতি অর্থবছরে কাটছাঁটের মূল কারণ এডিপি বাস্তবায়নে গতিহীনতা। সংস্থাটি জানায়, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে অর্থাৎ (জুলাই-মার্চ) এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৪১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এই সময়ে ব্যয় হয়েছে মোট ৪১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৩৬ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার অনেক বড়, তাই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শতাংশ কম মনে হচ্ছে। কিন্তু অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে।
×