স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জোহান ক্রুইফ এখন শুধুই স্মৃতি, অতীত ইতিহাস। গত সপ্তাহে স্পেনের বার্সিলোনায় ডাচ্ ফুটবলের এ রাজপুত্র পরলোকে পাড়ি জমান। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। ফুসফুসের ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে বিদায় নিয়েছেন আধুনিক ফুটবলের জনক। তবে তার মৃত্যুতে বিশ্বফুটবলেই নেমে আসে শোকের ছায়া। ফুটবল বিশ্বই তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। আর তাতে মুগ্ধ-বিমোহিত জোহান ক্রুইফের ছেলে জোর্ডি ক্রুইফ। তিনি মন্তব্য করেছেন তার বাবা জোহান ক্রুইফ শুধু হল্যান্ডের নয় বরং গোটা বিশ্বের। এ বিষয়ে জোর্ডি ক্রুইফ বলেন, ‘আমরা খুব ভালভাবেই অনুভব করতে পেরেছি যে, জোহান ক্রুইফ শুধু আমাদের নন, তিনি বিশ্বের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট।’
ফুটবল কিংবদন্তি জোহান ক্রুইফের পরিবারের সদস্য হতে পেরেও গর্বিত বলে মন্তব্য করেছেন তার ছেলে জোর্ডি ক্রুইফ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তার মৃত্যুতে বিশ্বের মানুষ যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাতে আমরা পরিবারের সদস্যরা অবির্ভূত। আমরা খুবই আবেগাপ্লুত এবং আমাদের হৃদয়ে ব্যাপকভাবে দাগ কেটেছে।’ ক্লাব বার্সিলোনা, আয়াক্স এবং হল্যান্ডের জাতীয় দলও যেভাবে ক্রুইফের পাশে দাঁড়িয়েছে তাতেও সন্তুষ্ট জোর্ডি ক্রুইফ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বার্সিলোনা, আয়াক্স এবং জাতীয় দল হল্যান্ডকে নিয়েই ছিল তার ফুটবলীয়প্রেম। আর এ তিনদলই যেভাবে তাদের সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’
শ্রমজীবী পরিবারের দ্বিতীয় ছেলে হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার বছরখানেক পর জন্ম ক্রুইফের। আয়াক্স আমস্টারডাম ক্লাবের সে সময়কার স্টেডিয়াম দে মির থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে তার বাড়ি। ইউরোপের অর্থনীতি তখনো যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ক্রুইফের বাবা ফুটবল পছন্দ করতেন, অবসরে বড় ছেলে হেনরি আর ছোট ছেলে জোহান ক্রুইফের সঙ্গেও কখনও মেতে উঠতেন খেলার আনন্দে। বাবার মৃত্যুটা কিশোর ক্রুইফকে শোকাতুর করার বদলে ফুটবলার হতে আরও অনুপ্রাণিত করে। বাবার স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য তার জেদটা আরও বেড়ে যায়। অভাবের সংসারে ক্রুইফের মা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি নেন আয়াক্সের স্টেডিয়ামে। আর সেই মাঠেই তার ছেলে একসময় ফুটবল নৈপুণ্য দেখিয়ে আদায় করে নেন বৈশ্বিক শ্রেষ্ঠত্ব আর সম্মান। সত্তরের দশকে ‘টোটাল ফুটবল’ নামের ভিন্ন ধারার এক ধরন উদ্ভাবনের পর খেলোয়াড়-পরবর্তী জীবনে কোচ হিসেবেও ছিলেন দারুণ সফল। বার্সিলোনা আর হল্যান্ডকে এনে দিয়েছেন একের পর এক সাফল্য। একজন কুশলী খেলোয়াড় সত্তার বাইরে ক্রুইফের পরিচিতি ছিল একজন নেতা এবং ফুটবল চিন্তক ব্যক্তিত্ব হিসেবেও।
১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে এ ডাচ্ জাদুকরের ‘ক্রুইফ টার্ন’ চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল বিশ্ববাসীর, পরে যেটা বহুবার করার চেষ্টা করেছেন বিশ্বের বহু ফুটবলার এবং এখনও করে যাচ্ছেন। এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ক্রুইফের ‘ফ্যান্টম গোল’ এখনও বিখ্যাত, তার ভক্তরা এখনও চেষ্টা করেন ক্রুইফের মতো চোখধাঁধানো এ গোলের অনুকরণে গোল করতে। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে ক্রুইফের নেতৃত্বে টোটাল ফুটবল খেলা হল্যান্ড আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল এছাড়াও পূর্ব জার্মানিকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে এবং পশ্চিম জার্মানির শক্তিশালী দল বলে প্রথমবারের মতো পা ছোঁয়ানোর আগেই ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। যদিও পরে জার্মান যন্ত্রের কাছে হার মানে ডাচ্ শিল্পীরা। খেলোয়াড়ি জীবনের সাফল্য এনে দেয়া দর্শনকে কোচ হিসেবেও ক্রুইফ ছড়িয়ে দিয়েছেন আয়াক্স ও বার্সিলোনায়। সেখানেও তিনি সাফল্যম-িত হয়েছেন। ১৯৯৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতে আয়াক্স সেটা শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে হিসেবে নিবেদন করেছিল কোচ ক্রুইফকে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: