ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ায় পাচার নেপালী ও বাংলাদেশী নারীর করুণ কাহিনী

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১৪ মার্চ ২০১৬

সিরিয়ায় পাচার নেপালী ও বাংলাদেশী নারীর  করুণ কাহিনী

নেপালের সুনীতা মগর ভেবেছিলেন, কুয়েতে কারখানায় নিরাপদ পরিবেশে চাকরি করতে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু বিমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবতরণ করেÑ তখন তিনি বুঝতে পারলেন, খুব বড় ভুল করে ফেলেছেন। সুনীতা বলেন, এক সিরীয়র বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করতে হয়েছে তাকে ১৩ মাস। যেখানে তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হতো এবং দিনে একবার খেতে দেয়া হতো। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর দেশে ফেরার অনুমতি দেয়া হয় তাকে। দুই সন্তানের মা সুনীতা বলেন, আমি প্রচ-ভাবে মানসিক আঘাত পেয়েছিলাম এবং আমি কেঁদেছি দিনের পর দিন। ভাল কাজ পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছান অসংখ্য দরিদ্র নেপালী ও বাংলাদেশী নারী। সুনীতা তাদেরই একজন, যাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে পাচার করা হয়েছে পাঁচ বছরের যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায়। ওই অঞ্চলের নেপালের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক কৌশল কিশোর রায় বলেছেন, ফিলিপিন্স ও ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশের বিপুলসংখ্যক নাগরিক কাজ ছেড়ে সিরিয়া থেকে চলে যায় যুদ্ধের বিপদ থেকে বাঁচার জন্য। তখন থেকে মানবপাচারকারীদের দৃষ্টি পড়ে নেপালী ও বাংলাদেশীদের ওপর। কৌশল বলেন, সিরিয়ায় নেপালী নারীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। কায়রোভিত্তিক নেপালী কূটনৈতিক মিশনের প্রধান কৌশল বলেন, আমাদের হিসাব মতে, সিরিয়ায় প্রায় ৫শ’ নেপালী নারী রয়েছেন। নেপালের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের শাহিনূর বেগম এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকার একটি হাসপাতালে। যৌনদাসী হিসেবে সিরিয়ায় পাচারের পর ৭ মাস ধরে ধর্ষণের স্বীকার হন তিনি। দুই সন্তানের মা শাহিনুর বলেন, মিসরীয়র কাছে বিক্রি করে দেয়া হয় আমাকে। লোকটি প্রতিদিন আমাকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেছে। কখনও কখনও তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। আমি অনেক করুণা ভিক্ষা করেছি। কিন্তু পরিবর্তে তারা আমাকে এমন প্রহার করেছে যে আমার হাত ভেঙ্গে গেছে। ২৮ বছর বয়সের শাহিনুর ও আরও কয়েক নারী জর্দানে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে দালালদের সঙ্গে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। কিন্তু তাদেরও সিরিয়ায় পাঠানো হয়। যে দেশে গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ এবং ঘরছাড়া হয়েছে দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। শাহিনুর শেষ পর্যন্ত কিডনি রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দালালরা তার বৃদ্ধ মায়ের কাছে অর্থ দাবি করে শাহিনুরকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য। লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম সারওয়ার বলেছেন, র‌্যাবের একটি টিম শাহিনুর ও অন্য দুজনের ঘটনা তদন্ত করছে। যদিও আরও ৪৩ নারী একই ধরনের অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ক্রমেই নারী পাচারকারীদের সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছে। Ñএএফপি
×