ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নানা রঙের পাখি

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১২ মার্চ ২০১৬

নানা রঙের পাখি

কোকিল কোকিল আমাদের দেশের একটি সুপরিচিত পাখি। এদের চমৎকার গান বসন্তকালকে মুখরিত করে রাখে। এরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পেড়ে চলে যায়, তাই এদের আরেক নাম পরভৃত। বাংলা ভাষায় কোকিল নিয়ে বেশকিছু বাগধারা চালু আছে, যেমন কোকিলকন্ঠী মানে হলো মধুর গানের গলা বিশিষ্ট, আবার বসন্তের কোকিল মানে হলো সুসময়ের বন্ধু। এটি কুকুলিডি (ঈঁপঁষরফধব) গোত্রের অন্তর্গত পাখি। পৃথিবীব্যাপী কোকিলের প্রায় ২৬টি প্রজাতির খোঁজ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ কোকিল লম্বা ও সরু গঠন বিশিষ্ট, এদের সামান্য বাঁকানো ঠোঁট, লম্বা লেজ এবং দীর্ঘ চোখা ডানা রয়েছে। উভয় পায়েই সামনে ও পেছনের দিকে দুটি করে আঙ্গুল বিদ্যমান। অধিকাংশ কোকিল বৃক্ষচর, তবে বেশ কয়েক প্রজাতির ভূচর কোকিলের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরা মরু ও মেরু অঞ্চল বাদে প্রায় সমগ্র পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত; বিষুবীয় অঞ্চলে এদের উপস্থিতি প্রকট। বেশ কিছু প্রজাতি আবার স্বভাবে পরিযায়ী। পোকামাকড়, শুককীট ইত্যাদি এদের মূল খাদ্য। এছাড়া ফলমূলও খায়। স্কারলেট ম্যাকাউ দক্ষিণ আমেরিকার ম্যাকাউ পাখিদের সঙ্গে রঙের বাহারে পাল্লা দিতে পারে, এমন টিয়া খুব কমই আছে। ওদের আবার স্ত্রী আর পুরুষের মধ্যে পালকের কোন ফারাক নেই। শিখিপুচ্ছ পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচাÑ ময়ূরকে সে কথা বলে দিতে হবে না। বর্ষা এলে, মেঘ ঘনালে ময়ূরের পেখম তুলে নৃত্য উপমহাদেশের একটি সুপরিচিত ও সুপ্রাচীন দৃশ্য। একই অঙ্গে দুটি রূপ সাধারণত পুরুষ পাখিরা বেশি রঙিন হয়, কারণ তাদের স্ত্রী পাখিদের মন ভোলাতে হয়। মধ্য আমেরিকার এই ‘শাইনিং হানিক্রিপার’ পাখিগুলোকে দেখলে তা বোঝা যায়। বলো তো, পুরুষ পাখি কোনটি? ঠিক ধরেছো, ডানদিকেরটা! প্রতিযোগী পাখি আকারে যত বড় হবে, ততই নাকি সেই প্রজাতির স্ত্রী পাখিদের রংচঙে হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে, বলছেন গবেষকরা। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে স্ত্রী পাখিদের বাহার বেশি হয়, কেননা তাদের পুরুষ পাখিদের মন জয় করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। পুরোপুরি আলাদা কখনও-সখনও বিশ্বাস করা শক্ত হয় যে, পুরুষ আর স্ত্রী পাখি দুটি একই প্রজাতির! ‘স্কারলেট-রাম্পড ট্যানেজার’ পাখিদের মধ্যে পুরুষ পাখিটা মূলত কালো, এক পিছনের দিকটা লাল হওয়া ছাড়া; সেই সঙ্গে রুপালি ঠোঁট আর ঘন লাল চোখের মণি। স্ত্রী পাখিগুলোর কিন্তু মাথাটা ধূসর, শরীরের ওপরের দিকটা জলপাই রঙের আর পাখাগুলো বাদামি। স্বর্গের পাখি নামই হলো বার্ডস অব প্যারাডাইস। এদের ক্ষেত্রে পুরুষ পাখিরা হয় যেমন রংচঙে, তেমনই তাদের লেজে দুটি লম্বা পালক থাকে। স্ত্রী পাখিদের মন জয় করার জন্য পুরুষ স্বর্গের পাখিদের নাচ একটা দেখার মতো জিনিস: লেজের পালক ঘোরানোটাও যেন অস্ট্রিচ ফেদার ঘোরানোর মতো। আবার গালগলা ফুলিয়ে গোল তুলোর বল হয়ে যাওয়াটাও তার মধ্যে পড়ে। কখনও সাদা কখনও রঙ্গিন দুনিয়ার অর্ধেক পাখি আসলে পাসিফর্মেস গোত্রের, অর্থাৎ যাদের পায়ের তিনটি নখর থাকে সামনের দিকে আর একটি থাকে পেছনের দিকেÑ ফলে দাঁড়ে বসতে সুবিধা হয়। এই প্যাসেরাইন পাখিদের বহু প্রজাতির স্ত্রী পাখিরা খুবই সাদামাটা, আবার কোন কোন প্রজাতি রঙ্গিন হয়। চিংড়ি খেয়ে লাল ফ্লেমিঙ্গো পাখিরা লাল হয় কী খেয়ে জানো? বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জলের ওপর থেকে লাল চিংড়ি আর প্ল্যাঙ্কটন ছেঁকে নেয় ‘আলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’-এর গল্ফ খেলার এই পাখিগুলো। লাল চিংড়ি খায়, তাই তাদের পালকের রং হয়ে যায় লাল।
×