ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের নতুন ঋণে ৩০ প্রকল্প বাস্তবায়ন

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১০ মার্চ ২০১৬

ভারতের নতুন ঋণে ৩০ প্রকল্প বাস্তবায়ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারত থেকে আরও ২০০ কোটি ডলার নমনীয় ঋণ পেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো খাতে বিশেষ করে রেল, বিদ্যুত, তথ্যপ্রযুক্তি, সড়ক পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নৌপরিবহন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ এ অর্থ ব্যবহার করতে পারবে। এসব কাজ বাস্তবায়নে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হবে তাতে অন্তত ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা অবশ্যই ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে এ ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন এবং ভারত সরকারের পক্ষে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক যদুভেন্দ্র মাথুর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ‘ডলার ক্রেডিট লাইন এগ্রিমেন্টের’ আওতায় ঋণচুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ওই দুইশ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে ভারত। এর আগে বাংলাদেশে সফরে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে দুইশ’ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ভারত দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশকে আরও দুইশ’ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। এর আগে ২০১০ সালে মনমোহন সিং সরকার একশ’ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ঋণের সুদের হার ও শর্ত আগের একশ’ কোটি ডলার ঋণের মতোই হবে। সে হিসেবে নতুন ঋণের সুদহারও হবে ১ শতাংশ। এ ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছর। ঋণচুক্তি শেষে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক যদুভেন্দ্র মাথুর বলেন, আমরা আজকে গর্বিত। রেল, বিদ্যুত, তথ্যপ্রযুক্তি, সড়ক পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নৌপরিবহন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ খাতে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে পেরে। দিনটা ঐতিহাসিকও বটে। কারণ এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে এত বড় ঋণচুক্তি হয়নি। এটা শুধু ঋণচুক্তি নয়, দুটি দেশের বন্ধনকে আরও বহুদূর এগিয়ে নেবে। ঋণচুক্তিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, দুইশ’ কোটি ডলার ঋণরেখাটিই এদেশে এ পর্যন্ত ভারতের সবচেয়ে বড় ঋণরেখা। এ চুক্তি স্বাক্ষর চিহ্নিত খাতের প্রকল্পের কাজ শুরু করার পথ করে দিয়েছে। অবকাঠামো ছাড়াও এ চুক্তি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অবদান রাখবে। এতে দুই দেশের অর্থনীতি আরও সংহত হবে এবং এসব ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে। ভারত সরকার ঋণরেখার অধীন প্রকল্প প্রস্তাবগুলোর দ্রুত অনুমোদন দিতে বদ্ধপরিকর। ভারতীয় এ ঋণে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামো, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতের অনেক প্রকল্পের প্রস্তাব ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) জমা পড়েছে। এর আগে স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চাহিদা ও গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে প্রকল্প তৈরি করতে বলেছিল ইআরডি। এর প্রেক্ষিতেই প্রকল্পের প্রস্তাব জমা পড়তে শুরু করেছে ইআরডিতে। ইআরডি সূত্র জানায়, ২০০ কোটি ডলারে সর্বমোট ২৫ থেকে ৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রস্তাবিত প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। পরে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ঋণের অর্থে কোন কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তা চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০ বছরের মধ্যে ভারতকে এ ঋণ শোধ করতে হবে। এতে ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। তবে প্রথম পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে কোন কিস্তি পরিশোধ করা লাগবে না। এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ভারত ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছিল। এর মধ্যে অনুদান ছিল ২০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ৮০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ৭০ কোটি ডলারই রেলখাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। এ ঋণে বাংলাদেশে মোট ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, এর মধ্যে ১৪টি প্রকল্পই রেল সংক্রান্ত। ইআরডি সূত্র জানায়, এর মধ্যে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো- ৩০০টি ডেকার, ডাবল ডেকার এসি আর্টিকুলেটেড বাস ক্রয় প্রকল্প, ৮১টি বগি ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, ১০টি লোকোমোটিভ সংক্রান্ত প্রকল্প, ১৬৫টি ব্রডগেজ (বিজি) ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, প্রকিউরমেন্ট অব ১৬টি লোকোমোটিভ প্রকল্প, ১৭০টি ফ্ল্যাট ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প, ৫০টি এমজি ফ্ল্যাট ওয়াগন ও ৫টি এমজি ভ্যান এয়ার ব্রেক কনটেনার সংগ্রহ প্রকল্প। এছাড়া সাতটি প্রকল্প চলমান আছে। এগুলো হলো- খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, নৌ-মন্ত্রণালয়ের আওতায় মংলা পোর্টে প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় প্রকল্প, ১২০টি বিজি কোচ সংগ্রহ গ্রকল্প, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প, বিএসটিআইকে আধুনিক ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ঢাকা-টঙ্গি রুটে তৃতীয় এবং চতুর্থ ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প এবং ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। এ সাতটি প্রকল্প আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে। তবে কিছু দিন পরই জানা যাবে নতুন ২০০ কোটি ডলারে কোন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার।
×