ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াইজ করনী

সিরিয়ায় নাজুক যুদ্ধবিরতি

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৯ মার্চ ২০১৬

সিরিয়ায় নাজুক যুদ্ধবিরতি

সিরিয়ায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। সিরিয়া সঙ্কটের সমাধানের জন্য ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক কুশীলবদের গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়া সাপোর্ট গ্রুপ (আইএসএসজি) নিরাপত্তা পরিষদের ২০১৫ সালের এক প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই যুদ্ধবিরতির আয়োজন করে। তত্ত্বগতভাবে এই যুদ্ধবিরতি সিরিয়ার সর্বত্র প্রযোজ্য হওয়ার কথা। তবে রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে যে মিত্র শক্তিগুলো তার আইসিস ও আল-নুসরা ফ্রন্টের উপর আঘাত হানার অধিকার থাকবে। কারণ এরা যুদ্ধবিরতির কাঠামোর বাইরে। এর অর্থ যুদ্ধবিরতি ভৌগোলিক দিক দিয়ে চিহ্নিত নয় এবং তার ফলে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারটা অতিমাত্রায় সমস্যা সঙ্কুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন এলাকায় যুদ্ধবিরতি পালিত হচ্ছে কি না তা নির্ধারণের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করছে বটে। তবে চুক্তির সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা নিয়ে তারা এখনও একমত হতে পারেনি। এতে করে রাশিয়ার সামরিক দিক দিয়ে এক সুবিধাজনক অবস্থায় থাকেব। আর বাস্তব অর্থে সিরিয়ার এক বিশাল ভূখ- বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তর পশ্চিম অঞ্চল যেখানে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো তৎপর সেগুলো সংঘর্ষের সক্রিয় এলাকা হিসেবে থেকে যাবে। সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছে যে যুদ্ধবিরোধী কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও সরকারী বাহিনী তুর্কি সীমান্তের কাছে প্রচ- আক্রমণ চালিয়েছে। আইসিস ও আল-নুসরার মতো সংগঠন ছাড়াও যেসব গ্রুপ এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাইরে যেমন আহন্ার আল শামস ও এ জাতীয় অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী গ্রুপ সেগুলো হোমস ও হামা প্রদেশের অংশ বিশেষে এবং দামেস্কের কাছেও উপস্থিত। তার মানে এই এলাকাগুলোও যুদ্ধবিরতি এলাকার বাইরে পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। জানা গেছে যে একশরও বেশি বিদ্রোহী সংগঠন যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি মেনে চলতে রাজি হয়েছে। কিন্তু রাজি না হওয়া এবং সন্ত্রাসী হিসেবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাঠামোর বাইরে থেকে যাওয়া সংগঠনের সংখ্যাও কম নয়। এরাই যে পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর অনেকের সঙ্গে এদের সহযোগিতামূলক সম্পূর্ক বিদ্যমান। সিরিয়ার এই যুদ্ধবিরতি কি টিকবে? টিকলে তা কতদিন? সিরিয়ার অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে এই প্রশ্নগুলো স্বাভাবিকভাবেই আসছে। তবে যুদ্ধবিরতি না টিকতে পারার প্রধান তিনটি কারণ আছে। যেমন রাশিয়া ও তার মিত্ররা যুদ্ধবিরতির বাইরে থাকা শক্তিগুলোকে আক্রমণ করার অধিকার সংরক্ষিত রেখেছে। তার মানে রাশিয়া বা বাশারের বাহিনী স্থলভাগে যে কোন ধরনের আক্রমণ বা সহিংসতা চালালে সেটাকে আইসিসবিরোধী লড়াইয়ের অজুহাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় যৌক্তিক বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। দ্বিতীয়ত: সিরিয়ায় হাজার হাজার ছোট ছোট সংগঠিত ব্রিগেড আছে সেগুলোর এই যুদ্ধ বা সংঘর্ষ বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ কিংবা উৎসাহ নেই। সশস্ত্র গ্রুপগুলোর এই নেটওয়ার্ক সংঘর্ষ থেকে প্রভূত লাভবান হয়েছে। সংঘর্ষের অবসান হলে এই গ্রুপগুলোর তৎপরতা ও অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। তৃতীয়ত: সিরিয়ার ভিতরকার বেশিরভাগ বিদ্রোহী গ্রুপ রণাঙ্গনে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতায় লিপ্ত। এই সহযোগিতার রাজনৈতিক ও আদর্শিক উদ্দেশ্য যেমন আছে যেমনি আছে তেমনি আছে সামরিক সুফল হাসিল করার প্রয়োজনীয়তা। সিরিয়ার ভিতর অন্য গ্রুপ থেকে স্বাধীনভাবে কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এবং নিজেদের মধ্যে পার্থক্য মুছে ফেলেছে এমন সশস্ত্র গ্রুপের সংখ্যা খুবই সামান্য। কাজেই বাস্তব অবস্থা হলো সিরিয়ায় যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে সেটা অতি নাজুক যুদ্ধবিরতি এবং তা টিকে থাকার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। তবে এর একটা তাল বা ইতিবাচক দিক হলো এই যুদ্ধবিরতির সুযোগে সারাদেশে মানবিক ত্রাণ সাহায্য পৌঁছে দেয়ার সম্ভাবনা জোরদার। এসব সাহায্য অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে হেলিকপ্টারে করে পৌঁছে দেয়া যাবে। তাছাড়া সরকার ও বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে যে উভয়পক্ষ নির্দিষ্ট কতিপয় শহর ও গ্রাম থেকে অবরোধ তুলে নেবে। সর্বশেষ যে অবস্থার কথা জানা গেছে তাতে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি এখনও নাজুক। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত লড়াই চলছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ক্রমবর্ধমান অভিযোগ উঠছে। ওদিকে সিরিয়া সরকার ও সৌদি আরবের মধ্যে বাকযুদ্ধ উত্তেজনা বাড়াতে নতুন ইন্ধন যোগাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন স্বীকার করেছেন যে বাশার সরকার, রাশিয়া, ইরানের দিক থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। বিরোধীপক্ষ বলেছে যে উত্তর সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা হচ্ছে এবং এভাবে যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘিত হতেই থাকে তাহলে জাতিসংঘ আয়োজিত জেনেভা শান্তি আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন যে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা সরকার পক্ষ ও সরকারবিরোধী সবার দিক থেকেই হচ্ছে। তবে যুদ্ধবিরতির আগে সহিংসতার মাত্রা যা ছিল তার বিচারে বলা যায় সেই সহিংসতা নাটকীয়ভাবেই হ্রাস পেয়েছে।
×