ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সীমারা জানে না আজ নারী দিবস, কাজ পেয়েই খুশি

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৮ মার্চ ২০১৬

সীমারা জানে না আজ নারী দিবস, কাজ পেয়েই খুশি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৭ মার্চ ॥ অসুস্থ স্বামী আলমগীর হোসেনের দেখাশোনা ছাড়াও দুই সন্তান চতুর্থ শ্রেণীর আরিফা ও প্রথম শ্রেণীর রিয়া মণিকে নিয়ে সংসার সীমা বেগমের। অতিদরিদ্র নারী পরিবারে নিজেই ভরসা। আগে হাইলা-কামলা, শ্রমজীবী থেকে ঝিয়ের কাজ করতেন। এখন রাস্তার মাটিকাটা শ্রমিক। সকাল আটটা থেকে বিকেল দুইটা পর্যন্ত রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করেন। বাড়ি ফিরতে বিকেল; কখনও সন্ধ্যা। এরপর রান্না-বান্না, তারপর খাওয়া। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে পরিশ্রম। কাকডাকা ভোরেই আবার রান্নার কাজ শেষ করে ছুটে চলেন তিন মাইল দূরের রাস্তায় মাটি কাটার কাজে। মাটি কেটে মজুরি মেলে দৈনিক দেড় শ’ টাকা। এক শ’ টাকা করে মাস শেষে তিন হাজার টাকা পাচ্ছেন। দেড় হাজার টাকা করে মাসে জমানো প্রকল্পের মেয়াদ শেষে এককালীন পাবেন। এ হতদরিদ্র নারী দৈনিক ১৭ ঘণ্টা শ্রমের বিনিময় জীবন-সংসারের চাকা ঠেলছেন। ধানখালী ডিগ্রী কলেজ থেকে এমইউ স্কুল সড়কের দুই পাশের মাটি দেয়ার কাজ করছেন সীমা বেগম। শুধু সীমা বেগম ননÑ অঞ্জলী রাণী, শাহীনুর, সুজিনা, কোহিনুর, হোসনেয়ারা, রুমা, শেফালী, তাসলিমারা দুই বছরের জন্য এ কাজ পেয়েছেন। সতেরো কিংবা কুড়ি ঘণ্টার শ্রম বিকোনো কোন ঘটনা নয় এদের জন্য। কাজটিই মুখ্য। কারণ এর বিনিময়ে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার স্বামী কিংবা সন্তানের মুখে তুলে দিতে পারছেন। এসব নারীশ্রমিক এক সময় অন্যের জমিতে কেউ তরমুজ ক্ষেতে পানি দিতেন, কেউ ডাল তুলে দিতেন। কেউবা ঝিয়ের কাজ করতেন। সকলের বাড়ি ধানখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। দশজনের গ্রুপটি ২০ মাস শেষে মাসিক তিন হাজার টাকা করে প্রত্যেকে বেতন ছাড়াও মাসে জমানো দেড় হাজার করে এককালীন ৩০ হাজার টাকা পাবেন বলে জানালেন এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান। তিন বিধবাসহ এসব নারী জানেন না ৮ মার্চ নারী দিবস। শুধু নারী দিবস তো দূরের কথা ক’ঘণ্টা কাজ করতে হবে তাও জানেন না। শুধু পেটের প্রয়োজনে কাজ দরকার তা পেয়েই মহাখুশি। আর এককালীন কিছু টাকা পাবেন এটাতো তাদের কাছে মহাপ্রত্যাশা। তিনজন বিধবা এবং অপর সাতজনেরও স্বামী থেকেও নেই। অক্ষম, অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত। কেউ আবার প্রতিবন্ধী। প্রকৌশলী মান্নান আরও জানান, গ্রামীণ রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ কাজের মধ্য দিয়ে এসব দুস্থ নারীকে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়ায় মোট ১২টি ইউনিয়নের ১২০ নারী এ সুযোগ পেয়েছেন।
×