ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ পাকিস্তানকে হারালে ফাইনালের আশা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২ মার্চ ২০১৬

আজ পাকিস্তানকে হারালে ফাইনালের আশা বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ ‘অগ্নিঝড়া মাস’, ‘স্বাধীনতার মাস’-বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের প্রেরণা পেতে আর কী লাগে! এ মাসেই প্রতিপক্ষ দলটি যদি হয় আবার পাকিস্তান। সেটি যে খেলাতেই হোক না কেন। যাদের সঙ্গে এই মার্চ মাসেই যুদ্ধের শুরু। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর যার শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রাত সাড়ে সাতটায় এশিয়া কাপে যখন পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ, তখন ক্রিকেট যুদ্ধই শুরু হয়ে যাবে। সেই যুদ্ধে জিতবে কে? ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে একবার জেতার পর বাংলাদেশ যে শুধু ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেই চলেছিল, ততদিন পাকিস্তানকে ফেবারিট হিসেবেই ধরা হচ্ছিল। বাংলাদেশ যে কোনভাবেই পাকিস্তানকে হারাতে পারছিল না। কিন্তু ২০১৫ সালে যখন আবার দুই দল মুখোমুখি হয়, তখন থেকে সেই হিসেব একেবারে ‘ওলট-পালট’ হয়ে যায়। বাংলাদেশ যে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে দেয়। এমনকি একটি টি২০তেও প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হারায়। প্রায় এক বছর পর আবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচটির আগে যতই পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি বলুক, ‘খেলার সঙ্গে রাজনীতি মেশাবেন না।’ মানে ‘যুদ্ধ-টুদ্ধ’ আনা ঠিক নয়। সেটি কী সম্ভব! যে দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয় মিলেছে, তাদের সঙ্গে যেখানেই দেখা হোক, যুদ্ধভাবত থাকবেই। আজও সেই ভাবখানা বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যেও থাকবে। তা পুরো দেশের জনগণের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়বে। সবার একটিই প্রত্যাশা থাকবে যে করে হোক আবারও পাকিস্তানকে হারিয়ে দিক মাশরাফিবাহিনী। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে যে এশিয়া কাপে আবারও ফাইনালে খেলার আশা জাগবে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা জেতার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন। বলেছেন, ‘আমাদের সামনে আসলেই ফাইনাল খেলার খুব ভাল সুযোগ আছে। সর্বশেষ দুটি ম্যাচ যেভাবে খেলেছি, সেভাবে খেলতে পারলে অবশ্যই সুযোগ কাজে লাগানো যাবে।’ সেই সুযোগ কাজে লাগানো মানেই হচ্ছে, জয় পাওয়া। জয় পেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ টি২০ ম্যাচ খেলে দুটিতেই জয় মিলবে। সর্বশেষ গত বছর এপ্রিলে যে দুই দলের মধ্যকার টি২০ লড়াই হয়েছে, তাতে বাংলাদেশই জিতেছে। এবারও কী তাই হবে? মিলতে পারে। যদি বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে মিলে। ভারতের কাছে হারের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি২০তে বাংলাদেশ সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। তাই মনে করা হচ্ছিল, আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয়টিই শেষ। আর হয়ত কোন দলের বিপক্ষে এশিয়া কাপে জয় মিলবে না। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। বদলে যাওয়া একটি দলকেই মিলেছে। সেই বদলের ছোঁয়া এরপর মিলেই গেছে। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলকেও কাত করেছে। এবার এশিয়া কাপে লঙ্কানদের যেভাবে হারিয়েছে বাংলাদেশ, তাতে বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার চিত্রই সবার সামনে ধরা পড়ছে। সেই ধারাবাহিকতা আজ বজায় থাকলে পাকিস্তান আবারও নাজেহাল হওয়ার কথাই। একটি স্থানেই শুধু ভয়। সেটি হচ্ছে, মোহাম্মদ আমির। এ পাক পেসারকেই সামলাতে হবে। আতঙ্কের আরেক নাম যেন আমিরও হয়ে উঠেছেন। আমিরকে সামলাতে না পারলে উল্টো বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। মাশরাফিও তা ভালই বুঝেন। তাই তো বলেছেন, ‘আমির তাদের (পাকিস্তানের) মূল খেলোয়াড়। সে শুরুর দিকে উইকেট নিতে পারে। সব ধরনের বোলিং করার ক্ষমতা আছে তার। আমরা যদি তাকে শুরুর দিকে উইকেট না দেই বা খেলে যেতে পারি, তাহলে ভাল হয়।’ সেটি এখন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা পারলেই হয়। পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্ক ছিল বাংলাদেশের একজন। কিন্তু সেই আতঙ্ক (মুস্তাফিজু রহমান) এখন এশিয়া কাপেই নেই। ইনজুরিতে এশিয়া কাপ খেলাই শেষ হয়ে গেছে মুস্তাফিজের। তবে মুস্তাফিজের পরিবর্তে যাকে (তামিম ইকবাল) নেয়া হয়েছে, তিনিও কম আতঙ্ক নন! ব্যাট হাতে যে কোন দলকে হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। তা হলেই এখন হয়। অগ্নিঝড়া মার্চে, পাকিস্তান ক্রিকেটারদের গায়েও লজ্জার আগুন ধরিয়ে দেক বাংলাদেশ, সেটিই এখন সবার চাওয়া। বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে মিললে, জয়ও মিলবে।
×