ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘আকাশসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করলে জেল-জরিমানা’

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১ মার্চ ২০১৬

‘আকাশসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করলে জেল-জরিমানা’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশের আকাশসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশে তিন থেকে সাত বছরের কারাদ- ও কমপক্ষে ২ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া পরিবর্তন আসছে সরকারী ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরপত্র প্রক্রিয়ায়। দরপত্রে প্রাক্কলনের ১০ শতাংশ কমবেশি গ্রহণযোগ্য সীমা ধরে এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এ সীমা পার হলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে। এ লক্ষ্যে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি সর্বোচ্চ তিন বছর কারদ- ও এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইন বহির্ভূত কাজ করলে নার্স ও ধাত্রীদের নিবন্ধন বাতিল করার বিধানও থাকছে এই আইনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৬০ সালের দ্য সিভিল এ্যাভিয়েশন অর্ডিন্যান্সের’ পরিবর্তে নতুন আইনটি হচ্ছে। ১৯৬০ সালে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা যে পর্যায়ে ছিল, ২০১৬ সালের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আইন হালনাগাদ করতে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) কিছু নির্দেশনা ছিল। কিছু পর্যবেক্ষণসহ মন্ত্রিসভা আইনের খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, খসড়া আইনে ফ্লাইটে নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এটা আগে ছিল না। এছাড়া বিমান দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবারকে সহায়তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে আইনে। বেসামরিক বিমান হিসেবে রাষ্ট্রীয় বিমানের ব্যবহার, বেসামরিক বিমান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য বেআইনী আচরণের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদান, বেসামরিক বিমান পরিবহনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তা নিয়ন্ত্রণের বিধানগুলো নতুন আইনে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া শিকাগো কনভেনশনের পরিশিষ্ট এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসারে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও সেবার জন্য আবশ্যক সুরক্ষার মান নির্ধারণ সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করা হয়েছে খসড়ায়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ যেকোন এয়ারলাইন্স ও অপারেটর এবং অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এছাড়া বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী এয়ারলাইন্সে বিমান পরিদর্শন করতে পারে সে জন্য বিমান পরিদর্শনের অধিকারসহ দু’টি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। খসড়া আইনে বিদেশী রাষ্ট্র থেকে কোন বিমান লিজের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হলে অথবা বাংলাদেশ হতে কোন বিমান লিজের মাধ্যমে অন্য কোন বিদেশী রাষ্ট্রের বিমান সংস্থা ব্যবহার করলে ওই বিমানের নিরাপত্তা ও দায়-দায়িত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারী দরপত্র প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে ॥ সরকারী ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরপত্র প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে। দরপত্রে প্রাক্কলনের ১০ শতাংশ কমবেশি গ্রহণযোগ্য সীমা ধরে এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এ সীমা পার হলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে। এ লক্ষ্যে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় ক্রয়ের ক্ষেত্রে দাফতরিক প্রাক্কলিক মূল্য থেকে বেশি হারে কম বা বেশি দরপত্র মূল্য দেখানোর প্রবণতা রোধে আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে। এ জন্য কোন দরদাতা দরপত্রের দাফতরিক প্রাক্কলনের ১০ ভাগ কম বা বেশি মূল্য দরপত্রে উল্লেখ করতে পারবে। এর বেশি করলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে। সীমিত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় অভ্যন্তরীণ ক্রয়ের সীমা ২ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩ কোটি টাকা করা হচ্ছে। সংশোধিত খসড়া আইনের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাবের ওপর গুরুত্ব প্রদানে ঢালাওভাবে ৯০ঃ১০ অনুপাত প্রয়োগের নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ ক্ষেত্রে কখনও কখনও অনুপাতে কমবেশি করা হয়, এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়। ওয়েস্টেজটা যদি বেশি কারিগরির দিকে দেয় তবে আর্থিক ক্ষতি হয়। এটা যাতে ব্যালেন্স করা হয়, এজন্য নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন ॥ তিন বছর কারদ- ও এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন ২০১৬’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সামরিক শামনামলে প্রণীত ‘বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অর্ডিনেন্স ১৯৮৩’ রহিত করে কিছু সংশোধনীসহ এ আইন করা হচ্ছে। নতুন আইনে নার্সিংয়ের সঙ্গে ধাত্রীবিদ্যা (মিডওয়াইফারি) যুক্ত করা হচ্ছে জানিয়ে শফিউল বলেন, এ আইন পাস হলে ২৪ সদস্যের কাউন্সিল গঠন করা হবে। নার্সিং ও ধাত্রীবিদ্যায় যারা ডিগ্রী নেবেন এই কাউন্সিল তাদের স্বীকৃতি দেবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) মতো এটা কাজ করবে। বিদেশ থেকে যারা নার্সিং ও ধাত্রীবিদ্যায় ডিগ্রী পাবেন, এ কাউন্সিল তাদেরও স্বীকৃতি দিতে পারবে। তিনি বলেন, নার্স, ধাত্রী ছাড়াও তাদের সহযোগীদের সরকারের কাছে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া নার্স, ধাত্রী ও তাদের সহযোগীদের কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে আইনে। স্বীকৃতি ছাড়া নিজেকে নার্স, ধাত্রী বা সহযোগী হিসেবে পরিচয় দিলে তিন বছর কারদ-, এক লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয়দ-ে দ-িত হবেন। এছাড়া ভুয়া পদবি ব্যবহার করলে এক বছরের কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। এছাড়া আইন বহির্ভূত কাজ করলে নার্স ও ধাত্রীদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। নিবন্ধন বাতিলে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে সরকারের কাছে আপীল করতে পারবে।
×