ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, হাসপাতালে ভিড়

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, হাসপাতালে ভিড়

নিখিল মানখিন ॥ গরম ও ঠা-া আবহাওয়ায় রাজধানীতে সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। নগরীর অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এমন মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তরা ভিড় জমাচ্ছে। রোগীর কাশি অনেক সময় রূপ নিচ্ছে শ্বাসকষ্টে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মৌসুমী জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতি বছরই এমন সময় সর্দি-কাশি জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ জ্বরের চিকিৎসা লাগে না। এ জ্বরে আক্রান্ত হলে মাথাব্যথা হতে পারে। তিন দিন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক হবে না। প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর গা হাল্কা ঠা-া পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার মুছে দিতে হবে। তিন দিন পরও জ্বর না কমলে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে। ছোঁয়াচে হওয়ায় এ ধরনের জ্বর থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি রয়ে গেছে শীতের আমেজ। সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বিরাজ করে শীতের আবহ। বর্তমানে গরম ও শীতের মাঝামাঝি অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছরই এমন সময়ে মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মৌসুমী জ্বরে একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের কোন সদস্যই রেহাই পাচ্ছে না। সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও বিএমএ সিনিয়র সহ-সভাপতি ডাঃ আব্দুর রউফ সর্দার বলেন, সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বেড়েছে। প্যারাসিটামল ও এন্টিহিস্টাসিন খেলেই এটি ভাল হয়ে যায়। ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়াই ভাল। বিশ্রামে থাকতে হবে। হাঁচি দেয়ার সময় রুমাল বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে এমনটি হয়ে থাকে। নগরীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও (মিটফোর্ড হাসপাতাল) সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও এ সব রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, আগের তুলনায় মৌসুমী জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। আমার ব্যক্তিগত চেম্বারেও এ ধরনের রোগীর আগমন বেড়েছে। সব বয়সের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে। চেম্বারে প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০ জন রোগী আসছে। তিনি জানান, এটি ভাইরাসজনিত রোগ। আর ভাইরাসবাহিত এ সব রোগ অন্য আরেকটি রোগে আক্রান্ত হতে সহায়তা দেয়। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের কারণে এ সব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রোদে ঘোরাফেরা কমাতে হবে। বাইরের খোলা জায়গার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়া উচিত। নিয়মিত শরীর মুছে দিতে হবে। জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর কমানোর ও শরীরের ব্যথা কমার ওষুধ খেতে পারেন। খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক রাখতে হবে। শরীরে যাতে পুষ্টির অভাব না হয়, সে জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় পুষ্টিকর খাবার। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকলে সেই ক্ষমতা দিয়ে সাধারণ ভাইরাল জ্বর ভাল হয়ে যায়। অসুস্থ ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন এ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ। সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া জনকণ্ঠকে জানান, মিশ্র আবহাওয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গ্রীষ্মকালের পুরো আবহ না আসা পর্যন্ত এটা চলতে থাকে। এ জ্বরে আক্রান্তদের নিয়ে চিন্তার কিছুই নেই। ভাইরাল জ্বরের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের পেশিতে প্রচ- ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, মাথা ভারি মনে হওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। তবে শিশুদের মুখ লাল হয়ে যায়, শরীরের তাপমাত্রা বেশি, মাথা ব্যথা, সর্দি ও কাশি হতে দেখা যায়। রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) এর জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক মুশতাক হোসেনও সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, সর্দি-কাশি জ্বর নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েক দিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। আতঙ্কের কিছু নেই। তবে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না। ভাইরাসবাহিত অসুখে আক্রান্ত হলে বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না। পেটের পীড়া ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর গা হাল্কা ঠা-া পানি দিয়ে দিন কয়েকবার মুছে দিতে হবে। এ সময় মাথাব্যথা হতে পারে। জ্বর সাধারণত ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে বড়দের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াতে হবে। জ্বর হলে স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। হাঁচি-কাশি দেয়া এবং নাক দিয়ে পড়া পানি মুছতে পরিষ্কার রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। রোগটি ছোঁয়াচে বলে এ ক্ষেত্রে সাবধানও থাকতে হবে। কিছুতেই ফ্রিজে রাখা ঠা-া বা পচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। জ্বর তিন থেকে চার দিন অব্যাহত থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে বলে তিনি জানান।
×