ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলেও শীঘ্রই মন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন না বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারা। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এ ব্যাপারে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতেও রাজি নন দলটির চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকেও পদত্যাগ করছেন না এরশাদ নিজেই। অর্থাৎ সবকিছু চলবে আগের মতোই। এখন থেকে আপোস-আপোস রাজনীতিতে চলবে জাপা। বিরোধী দলের নেতা রওশনের নেতৃত্বে একটি পক্ষ সরকারের সঙ্গে থাকবে। এরশাদের নেতৃত্বে অপর পক্ষটি সরকারের সমালোচনায় মুখর থাকবে। এর মধ্য দিয়ে সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে চায় দলটি। ভবিষ্যতে সময় সুযোগ বুঝে মন্ত্রিপরিষদ ও বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সর্বোপরি এ মুহূর্তে সরকারে কোন অস্থিরতা সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেবে না জাপা। জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদদের মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত মনে করে দলটির তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে পার্টির মধ্যে বিভক্তি, টানাপোড়েন, আলোচনা চলছে বহুদিন ধরেই। দলের সভাপতিম-লীর সভায়ও এ ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন দলের চেয়ারম্যানপন্থী নেতারাও। যদিও পদত্যাগের বিষয়ে কোন সময় নির্ধারণ করা হয়নি। তাই এ নিয়ে চিন্তিত নন দলটির মন্ত্রীরাও। এ বিষয়ে তারা কোন মাথা ঘামাতেও রাজি নন। মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে এরশাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে দেন দরবার করবেন রওশন নিজেই। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এরশাদ। এরই ধারাবাহিকতায় পদত্যাগপত্র লিখে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চান তিনি। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় রহস্যজনকভাবে এরশাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। আলোচনা আছে, বিগত নির্বাচনের মতোই তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। তারপর এ ব্যাপারে সমঝোতা হলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। তাই দু’বছরের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত জাপার প্রেসিডিয়াম বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হলেও বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা জাপার তিন সাংসদ হলেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। রবিবার এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেছেন, দলের চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নিলে আমরা মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করব। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা আনুষ্ঠানিক কিছুই জানি না। দলের নেতাদের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সভাপতিম-লীর সভায় মন্ত্রিত্ব ছাড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। পার্টির চেয়ারপার্সন সময়সাপেক্ষে সবকিছু বুঝে শুনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার তাঁর। জনকণ্ঠকে জাপার মহাসচিব বলেন, সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি, কল্যাণের সঙ্গে থাকবে জাপা। সরকারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, এমন কিছু জাপা করবে না। দলে কোন্দলের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব বলেন, ছোটখাটো দ্বিমত হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে এসব ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে দলটির কো-চেয়ারম্যান জি. এম কাদের বরিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে দিনক্ষণ ঠিক করবেন চেয়ারম্যান নিজেই। তবে প্রেসিডিয়ামের সদস্যরা মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে একমত। তাই দলও মনে করে মন্ত্রিত্ব ছাড়া উচিত। ৩৪ জন প্রেসিডিয়ামের মধ্যে ২৪ জন বৈঠকে উপস্থিত থাকা মানের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত। দলের সঙ্কট নিরসন প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমার প্রথম কাজ হলো দলের নীতি ঠিক করা। এরপর সকল বিরোধ মেটানো। আমি চাই জাপার সবাই একসুরে কথা বলবেন। তারপর দলকে শক্তিশালী করার কাজে হাত দিতে হবে। দলের চেয়ারম্যানের পরিবারে দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে এরশাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সবাই। সেইসঙ্গে দলের নীতি চূড়ান্ত করারও প্রস্তাব এসেছে প্রেসিডিয়ামের বৈঠক থেকে। এ বিষয়ে এরশাদ বলেছেন, এ বিষয়ে ভাবনার কারণ নেই। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা মানবেন রওশন। তাছাড়া পারিবারিক বিরোধ থাকবে না বলেও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের জানান তিনি। মন্ত্রিসভায় থাকা জাপার একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের মন্ত্রিসভা ছাড়ার আপাতত কোন সম্ভাবনা নেই। তিনি যতদূর জানেন দলের সভাপতিম-লীর সভায় চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত চেয়ারম্যান তাঁদের কোন কিছু বলেননি। চেয়ারম্যান নিজেও মন্ত্রী পদমর্যাদায়, কাজেই আগে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। তাছাড়া পদত্যাগের বিষয়ে বিরোধী দলের নেতার পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত কোন আলোচনা হয়নি। এরশাদ এখন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের ডাকের অপেক্ষায় আছেন। মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রীন সিগন্যাল দিলে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন তিনি। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী দল চলবে। এরশাদের প্রেস সচিব সুলীল শুভ রায় জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরশাদের বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, বরিবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারা এমন কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না যাতে সরকার বিব্রত হয়। সরকারের অস্থিরতা বিরাজ করে। তাই ভেবেচিন্তে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ ছিল অনেক নেতার।
×