ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘হয়তো আমার সেই যোগ্যতা নেই’

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

‘হয়তো আমার সেই যোগ্যতা নেই’

প্রথমেই অভিনন্দন। আপনার অভিনীত দ্বিতীয় ছবি এবং একমাত্র ছবি যেটি নিয়ে শুরু থেকেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন, সেই ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ভারতে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে। এটি দিয়েই শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত চলচ্চিত্র বিনিময় প্রক্রিয়া। এই সাফল্যকে কীভাবে দেখছেন? প্রতিটি কাজেই তো সাফল্য আসুক, এটাই কামনা থাকে। ছবিটি যেহেতু দর্শক ইতিবাচকভাবে নিয়েছে, রেসপন্স করেছে; ওই জায়গা থেকে এটিকে আমি সাফল্য অবশ্যই বলতে পারি। তবে শুধু একা আমি নই, এই সাফল্যের দাবিদার পুরো টিম। আপনি তো ওইভাবে আন্তর্জাতিক কোনো কাজ করেননি। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ তাহলে তো দর্শক বাড়াচ্ছে আপনার... ‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এ যেটা হয়েছে আরও, অনেক নতুন দর্শক তৈরি হয়েছে। যারা অনেকদিন পরে, সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখেছেন, এমন অনেকের খোঁজ পেয়েছি আমরা। এটাও ছবিটির অনেক বড় সাফল্য... প্রশ্ন সেটি নিয়ে না। প্রশ্ন হচ্ছে, ছবিটি যেহেতু ভারতে যাবে, তার মানে দেশের বাইরেও আপনার একটি দর্শকশ্রেণী তৈরি হতে যাচ্ছে। হয়তো এভাবে দেখা যায়। এটা তো আমার জন্য গুডলাক। এটা তো সেন্সরের মাধ্যমে হয়েছে। তাছাড়া বিকল্প পদ্ধতিতে যে প্রদর্শনীগুলো দেশের বাইরে হয়েছে, সেখানেও কিন্তু অনেক আলোচনা হয়েছে। কিছুদিন আগে আমার ফুফু আমেরিকা থেকে এসেছে, আমার ভাইয়ের বিয়েতে। তিনি বলছিলেন, আমেরিকায় তাকে ‘মমর ফুফু’ এ হিসেবে অন্যরকম সম্মান তাকে দেওয়া হয়েছে। ওখানেও ছবিটি দেখেছেন সবাই, বাংলাদেশি কমিউনিটির ভেতরে। অনেকদিন ধরেই তো বাংলা ছবির দর্শক বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। কলকাতা থেকে অভিনেতা-প্রযোজকরা এসে এদেশে মিটিং করে গেছেন। এখন ছবির বিনিময়, অথবা যৌথ প্রযোজনা- এক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত অবস্থান কী? আমি তো চাই যে, নিয়ম অনুযায়ী যে বিনিময়, সেটি হলে কালচারাল আদানপ্রদান হয়। সেটা বাংলাদেশে অনেক আগেও ছিলো। মাঝখানে যৌথ প্রযোজনা বলে যে একতরফা প্রযোজনা হচ্ছে, এটার চেয়ে বিনিময় অনেকগুণ ভালো। তাহলে আমাদের দেশের স্কিলটাও ওখানে পরিচিত হয়। এটা সৌভাগ্য কী দূর্ভাগ্য জানি না, ওদেরকে আমরা চিনছি, কিন্তু ওরা কেউ আমাদেরকে চিনছে না। হ্যাঁ, তাদের যোগ্যতা আছে, কিন্তু আমাদের যোগ্যতা নেই, এটা অস্বীকার করতে আমি রাজি না। একদম না। কারণ, একটা জিনিস খুব স্বাভাবিক। তারা যে পরিমাণ পেশাদারিত্ব এবং বাজেট নিয়ে কাজ করে, সেটার কোনোটাই আসলে আমাদের নেই। তারপরও আমাদের তো এখানে এতো ভালো কাজ হওয়ার কোন দরকার নেই! তবে হচ্ছে কেন, হচ্ছে কারণ, আমরা অসম্ভব পরিশ্রম করতে পারি, এবং নিশ্চয়ই যোগ্যতা আছে। সেটার পরিচয় অবশ্যই ওদেশে হওয়া উচিত। নাহলে দাদারা শুধু চাপিয়ে দেবেন, আর কতদিন চাপ নেওয়া যায়! গত বছরের পুরোটা সময় আপনার এক ধরণের ক্রেজিনেস ছিলো সিনেমার প্রতি। যেটা এ বছর এসে, অতটা দেখা যাচ্ছে না। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ দর্শক ভালো দেখেছে, আপনারা বলছেন, অনেকেই বলছেন। তারপরও আরেকটি ছবি কেন পেলেন না আপনি? এটা কিন্তু একটা প্রশ্ন তৈরি করে, যেভাবে তৈরি করে ‘মনপুরা’ এবং ফারহানা মিলির ক্ষেত্রে... আসলে আমি কারণটা ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবো না। আমি নিজেও জানতে চাই যে, কেন? বাংলাদেশে ভালো ছবির ইতিহাসে কিন্তু আর্টিস্ট যারা ছিলো, তারা পরবর্তীতেও রান করেছে। আমি জানি না, হয়তো আমার সেই যোগ্যতা নেই। এটা ছাড়া তো আমার আর কিছু বলার নেই। তুমি নিজেও ভালো করে জান, বাস্তবতা কী রকম! ওই বাস্তবতা হয়তো মোকাবেলা করা টাফ হয়ে যাবে, জানি না আসলে সমস্যা কোথায়! কিংবা ভালো প্রডাক্ট পৌঁছানোটা জরুরী বোধহয় না! আমি হয়তো যোগ্য না- এটার চেয়ে ভদ্র উত্তর আমার আর জানা নেই। এটা কী তাহলে একটা হতাশার উদাহরণ তৈরি হবে না অন্যান্যদের ক্ষেত্রে? আবার আমি এটাও বলতে পারি, আমার কাছে কিন্তু কাজ আসেনি তা নয়। কাজ এসেছে। কিন্তু যে মাত্রার কাজ আশা করেছিলাম, সেটা আসেনি। যে ছবিগুলো পরবর্তীতে এসেছে, সেগুলো করলে খুব সাধারণমানের ছবিই হতো। তাহলে যারা টিভি নাটকে ভালো অভিনয় করছে, তাদেরকে যে পুরোপুরি সিনেমার হয়ে ওঠার কথা বলি আমরা। তাদের ওপায় কী! কারণ, একটি ভালো ছবি করে যে পরবর্তীতে আরেকটি ভালো কাজ তিনি পাবেন, এ রকম তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেমনটি আপনার ক্ষেত্রে হচ্ছে... আমার একটি বিষয় মনে হয়েছে। আমাদের দেশে, ধরো, অনেকদিন ধরে কাজ করে করে যখন তুমি অভিনেতা হিসেবে পরিপক্ক হবে, যখন তুমি আরও ভালো কাজ করার চেষ্টা করবে; তখন কেউ ওই চেষ্টায় সাহায্য করে না। তখন সবাই বলতে থাকে, ও তো অনেকদিন ধরে অভিনয় করছে, ওর তো অনেকদিন হয়ে গেছে। যেটা খুবই ভুল। দেখতে দেখতে এই যে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা। এটা কী দর্শকদের কাছ থেকে শুনেছেন? না, দর্শকদের কাছে আমরা পৌঁছাই কিন্তু পরিচালক-প্রযোজকের মাধ্যমে। পর্দায় আমাকে উপস্থাপন করবে, দশজন পরিচালক দশভাবে। এটা তো আমার দায়িত্ব না। আমি যদি একই রকম চিত্রনাট্য পেতে থাকি, তাহলে কতোবার আমি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবো? সেই জায়গা থেকে দর্শকদের কাছে যেন মনোটনি তৈরি না হয়, সে দায়িত্ব নিতে হবে পরিচালকদেরকে। দীর্ঘদিন ধরে তো নাটকে অভিনয় করছেন। অনেক ভালো নির্মাতার সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়েছে। এটাও হয়, যাদের কাজ আসলে আমি চোখ বুজে সেটে হাজির হন। আবার এমন অনেক নির্মাতা আছে, যারা আপনাকে পেলেই ভরসা পায়। তো, কিছু নির্মাতা তো আছে এ রকম। তাদেরকে কি আপনি সিনেমা বানাতে উৎসাহিত করেন? হ্যাঁ। আমি তো উৎসাহ অবশ্যই দিই। দেখো, আমি একটু আবেগী, কিন্তু মানুষ ভালো। তো, সেই জায়গা থেকে যেটা তোমার জন্য ভালো হবে, সেটা যদি আমার না-ও হয়, আমি উৎসাহ দেব। এমনও অনেককে দেখেছি, শুধু নিজের কথা চিন্তা করতে গিয়ে, অন্যদের কাজে ব্যাঘাত করে। আমি ওই রকম না। আনন্দকণ্ঠ ডেস্ক
×