ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সুভাষ চন্দ্র বসু নিয়ে ১০০ গোপন নথি প্রকাশ করল ভারত

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

সুভাষ চন্দ্র বসু নিয়ে ১০০ গোপন নথি প্রকাশ করল ভারত

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা সুভাষ চন্দ্র বসু সংক্রান্ত ১০০ গোপন নথি শনিবার প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সুভাষ চন্দ্র বসুর ১১৯তম জন্মদিনে বসু পরিবারের সদস্যদের সামনেই ভারতের জাতীয় আর্কাইভ থেকে ওই ফাইলগুলোর ডিজিটাল কপি ওয়েবসাইটে তুলে দেয়া হয়। খবর বিবিসি বাংলার। এই নথিগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে থাকা ৩৯ ফাইল রয়েছে, যার মধ্যে চারটি ‘টপ সিক্রেট’ বা অতি গোপনীয় নথি। আছে ২০টি ‘সিক্রেট’ অর্থাৎ গোপন নথি আর পাঁচটি ‘ক্লাসিফায়েড’ ফাইল। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা বিভাগ আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকা সুভাষ বসু সংক্রান্ত ফাইলও প্রকাশ করা হয়েছে। ওই ওয়েবসাইটটি অবশ্য এখনও খোলা যাচ্ছে না, যার ফলে ওই নথিগুলো পড়ে দেখা সম্ভব হয়নি এখনও। এই অতি গোপন নথিগুলোর মাধ্যমে সত্যিই ৭০ বছর ধরে চলতে থাকা সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান হবে কী না, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘদিন ধরে বসু পরিবারের সদস্যরা দাবি করে আসছিলেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকা এই নথিগুলো প্রকাশ করা হলেই জানা যাবে যে, ১৯৪৫ সালে সত্যিই তাইহোকুতে একটি কথিত বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ চন্দ্র বসু মারা গিয়েছিলেন কী না। গত বছর সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার পুলিশ গোয়েন্দাদের হাতে থাকা ৬৪ ফাইল প্রকাশ করেছিল। তারপরেই প্রধানমন্ত্রী মোদি ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি আজ (২৩ জানুয়ারি) এই ফাইলগুলো প্রকাশ্যে আনবেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নথি প্রকাশ করার পরে বসু পরিবারের একাধিক সদস্য দাবি করেছিলেন যে, ওই নথির মাধ্যমে বোঝা গেছে যে, সুভাষ চন্দ্র তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি এবং তিনি অন্তত ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ পর্যায়ে তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে বহু মানুষেরই সন্দেহ আছে। যদিও তার প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সদস্যরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের ‘নেতাজী’র মৃত্যু হয়েছে। ভারত সরকার গঠিত দুটি তদন্ত কমিশনও ওই বিমান দুর্ঘটনায় বসুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নিয়েছিল। তবে সর্বশেষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন- মুখার্জী কমিশন নামে যা পরিচিত, তারা মতামত দিয়েছিল যে, ওই দুর্ঘটনায় সুভাষ চন্দ্র মারা যাননি। অন্যদিকে সুভাষ চন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক গবেষণা করে যে বই লিখেছেন, তাতে তিনি ওই বিমান দুর্ঘটনাতেই বসুর মৃত্যু হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে ওই দুর্ঘটনায় যদি সুভাষ চন্দ্র মারা না গিয়ে থাকেন, তবে তিনি কোথায় গেলেন, তা নিয়ে অনেক গুজব আর তত্ত্ব রয়েছে। কেউ বলে থাকেন যে, তিনি গোপনে চীন হয়ে রাশিয়ায় পৌঁছেছিলেন স্ট্যালিনের সাহায্য নিয়ে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তবে একসময়ে স্ট্যালিন তাকে বন্দী করেন। তাকে সাইবেরিয়ায় রাখা হয়েছিল। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী তাসখন্দ সফরে গিয়ে হঠাৎ মারা যাওয়ার ঠিক আগে দেশে ফোন করে তার আত্মীয়দের জানিয়েছিলেন, তিনি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে দেশে ফিরবেন, যার ফলে ইতিহাস বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু কী সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, তা জানা যায়নি। অনেকে মনে করেন সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান সম্পর্কিত কোন তথ্যই তার হাতে এসেছিল। আরও একটি তত্ত্ব রয়েছে যে, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার পার্শ্ববর্তী ফৈজাবাদ শহরে এক হিন্দু সাধুর ছদ্মবেশে দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন সুভাষ চন্দ্র বসু। রবিবার প্রকাশিত ফাইলগুলোর পর প্রতিমাসে ২৫টি করে গোপন নথি জনসম্মুখে আনা হবে এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এই ফাইলগুলো ছাড়াও রাশিয়ার কাছেও কিছু অতি গোপন নথি রয়েছে, যেগুলো প্রকাশ্যে আনার জন্য ভারত সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে।
×