ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা

সিলেটে অর্ধেক বনভূমি ॥ অবৈধ দখলে

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

সিলেটে অর্ধেক বনভূমি ॥ অবৈধ দখলে

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সিলেট বনবিভাগের বিপুল পরিমাণ ভূমি বেদখল হয়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে অনেক ভূমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। অনেক স্থানে বনবিভাগের অসাধু কর্মচারীদের সহায়তায় অবৈধ দখলদাররা ভূমি জবরদখল করে ভোগ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। গোয়াইনঘাট এলাকায় বনবিভাগের বিপুল পরিমাণ জমিতে অবৈধভাবে পাথর ক্রাশার স্থাপন করে ব্যবসা চালানো হচ্ছে। বনবিভাগের মোট জমির পরিমাণ এক লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৭ দশমিক ১৯ একর। বাস্তবে নিজেদের দখলে আছে মাত্র ৮১ হাজার ৯৮১ একর ভূমি। সে হিসাবে অর্ধেকের চেয়েও বেশি জমি বেদখল হয়ে গেছে। দখলীয় কিছু ভূমি নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান থাকলেও হাতছাড়া হয়ে যাওয়া এই বিপুল পরিমাণ ভূমি উদ্ধারে নেই তেমন কোন তৎপরতা। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বনবিভাগের বেদখলীয় ভূমি উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাঝপথেই থেমে যায় সে অভিযান। গোয়াইনঘাট উপজেলায় বনবিভাগের ২২ হাজার ২০৭ একর জায়গার মধ্যে ২০ হাজার ১৭২ একর বেদখল হয়ে গেছে। বনবিভাগের জমি দখল করে এখানে স্থাপন করা হয়েছে ক্রাশার মেশিন, কয়লা ও পাথরের ডাম্পিং ইয়ার্ড ও পাকাঘর। বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদাররা ভূমির গাছপালা নিধন, শ্রেণী পরিবর্তনসহ মাটি কেটে কিংবা ভরাট করে ভূমির আকৃতির পরিবর্তন সাধন করে ফেলছে, যা মামলা-মোকদ্দমায় বনবিভাগের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে। দখলীয় ভূমির গাছপালা নিধন, শ্রেণী পরিবর্তনসহ কোথাও মাটি কেটে কিংবা ভরাট করে ভূমির অবস্থার পরিবর্তনও করে ফেলেছে দখলদাররা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তামাবিল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানিকৃত পাথর, চুনাপাথর ও কয়লা ডাম্পিংয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছে বনবিভাগের ভূমি। বনবিভাগের টিলা কেটে, গাছ কেটে আবাদ করে এসব জায়গা অর্থের বিনিময়ে উচ্চমূল্যে আমদানিকারকদের ডাম্পিংয়ের স্থান হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এ কাজ করছেন একটি প্রভাবশালী মহল। সিলেট বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভাগের বাহুবল, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর, হবিগঞ্জ সদর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, জুরী, বড়লেখা, ছাতক, দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর, সিলেট সদর, কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট উপজেলায় থাকা বনবিভাগের বেশিরভাগ ভূমিই অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৫০ সালের জরিপে সিলেট বিভাগের চার জেলায় বনবিভাগের ভূমির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৭ দশমিক ১৯ একর। ১৯৬৫ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সিলেট ও সুনামগঞ্জে বনবিভাগের প্রায় ৪৮ হাজার ৫৮২ একর ভূমি সিলেট পেপার ও পাল্পমিলের অধীনে ছিল। দীর্ঘদিন অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকার কারণে সে ভূমির প্রায় ২৩ হাজার ২০০ একর ভূমি জবরদখল হয়ে গেছে। এছাড়া বিভাগের অন্যান্য এলাকায় থাকা ৫৯ হাজার ৫৬৬ দশমিক ৫৬ একর ভূমি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। বন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এবং অসাধু কিছু ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও বনকর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে বনের অর্ধেকের চেয়েও বেশি ভূমি দখল হয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকাবস্থায় ২০০৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৫৮১ একর জমি দখলমুক্ত করা হলেও বাকিটুকু এখনও জবরদখলে রয়ে গেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ভৌগোলিক অবস্থানের এক-চতুর্থাংশ বন থাকা আবশ্যক বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করলেও বনবিভাগের হিসেবে সিলেটে বনের পরিমাণ মোট ভূমির ৯ থেকে ১০ শতাংশ। অবশ্য এ জন্য অবৈধ দখলীয় ভূমি থেকে নির্বিচারে বৃক্ষনিধনকে দায়ী করা হচ্ছে। বনবিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বনের ভূমি জবরদখল হয়ে যাওয়া এখন তাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বনভূমি জরিপ বহির্ভূত থাকায় বনবিভাগের ভূমির মালিকানা নিয়ে দখলীয়দের সঙ্গে বিরোধ দীর্ঘদিনের। কোথাও বনবিভাগের ভূমি দখলের সঙ্গে আদিবাসীরা সম্পৃক্ত থাকায় এবং অনেক ভূমি নিয়ে মামলা বিচারাধীন থাকায় দখল উচ্ছেদমুক্ত করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বনবিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, বনবিভাগের এখন বড় সমস্যা ভূমি দখল। অনেক ভূমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। এছাড়া আধিবাসী ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠী বনবিভাগের বিপুলসংখ্যক ভূমি দখল করে আছে। দখলীয় ভূমির তালিকা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে।
×