ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাভেদ বিন-এ-হাকিম

দৈনন্দিন জীবনে পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

দৈনন্দিন জীবনে পারিবারিক  শিক্ষার গুরুত্ব

যাপিত জীবনে প্রত্যেক মানুষের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো, পারিবারিক শিক্ষা। আর এগুলো রপ্ত করতে/করাতে হলে সর্বপ্রথম পরিবার থেকেই হতে হবে। কারণ সভ্যতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতা বোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-স্নেহ ও পরোপকারী এবং উদার মানসিকতা এগুলো কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খুব একটা অর্জন করা যায় না। শিশু যখন নিজ থেকেই হাত-পা নাড়তে শিখে, তখন থেকেই মূলত সে পরিবারের বড়দের কাছ থেকে শিখতে শুরু করে। আর তখন থেকেই তার সামনে বাবা-মা ও বড়দের কথা-বার্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাড়ন্ত শিশুকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ভাল-মন্দ বিষয়ে অবহিত করতে হবে। তার সঙ্গে নরম সুরে, মার্জিত আচরণে বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ার করতে হবে। শিশুদের মন-মানসিকতা থাকে খুবই কোমল, তাই খুব সহজেই যে কোন বিষয়ে তারা শিখে নিতে পারে। অনেক শিশুরাই দুষ্টমির ছলে মিথ্যা বলতে পছন্দ করে, বড়রা যখন বুঝতে পারবেন তখন তাদের কর্তব্য, আদর-স্নেহের মাধ্যমে বুঝিয়ে তার এই বদ-অভ্যাস থেকে বিরত রাখতে হবে। কোন অবস্থাই শিশুকে গালমন্দ করা যাবে না, এতে সে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে উঠবে। বড়দের দেখলে সালাম, তার চাইতে ছোটদের প্রতি ¯েœহ, সমবয়সীদের প্রতি সু-সম্পর্ক, অন্যকে তাচ্ছিল্য না করা এগুলো শিখাতে হবে। বিশেষ করে মায়েদের খেয়াল করতে হবে তার সন্তান অন্যদের প্রতি কতটুকু উদার। ছোট্ট বয়স থেকেই মুক্ত মন-মানসিকতা গড়ে না উঠলে তা আর পরবর্তী জীবনে আয়ত্ত করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। তাই একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সন্তানকে গড়ার জন্য বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মাঝে মধ্যে কাছে কিংবা দূরে কোথাও উদার করা প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যেতে হবে। ভ্রমণেও শিশু অনেক কিছু শিখতে পারে। বর্তমান শহুরে সমাজে পরিবারের দুজনই থাকেন নিজ কর্মস্থলে ব্যস্তÑ ফলে যতটুকু সময় সন্তানের প্রাপ্য তা থেকে সে হয় বঞ্চিত। যৌথ পরিবারের অভাবে, গৃহকর্মীর সান্নিধ্যে, ভার্চুয়াল জগতে মেতে থেকে শিশু হারায় তার সু-শিক্ষা পাওয়ার মতো সোনালি সময়। মনিটরে কার্টুন দেখা আর এ্যাডভেঞ্চার গেম খেলেÑ শিশুর মস্তিষ্কে ধারণ করে যত সব উৎভট চিন্তা। ধারণ করা সেই চিন্তাচেতনা থেকেই শিশু চায় তার বাস্তবায়ন। ছোট থেকেই যেন শিশু পেতে পারে পারিবারিক শিক্ষা, সেই লক্ষ্যে কর্মব্যস্ত ও প্রত্যেক পরিবারের সন্তানের বাবা-মা এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কর্তব্য প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সন্তানকে জিজ্ঞাসা করা- তার সন্তান ধর্মীয় কর্ম পালন করেছে কিনা। শুধু জিজ্ঞাসার মধ্যেই দায় সারলেই হবে না, রিতিমতো তাদের বাধ্য করাতে হবেÑ যেমনি করে আমরা অফিসে থেকেও বাড়িতে ফোন দিয়ে খোঁজ নেই, সন্তান স্কুলের হোমওয়ার্ক ঠিকমতো করেছে কি-না। প্রত্যেক ধর্মের অনুশাসনেই আদর্শ-সভ্যতা-নৈতিকতার শিক্ষা রয়েছে। আর ইসলামের আসমানি কিতাব কোরাআন তো পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। সুতরাং একমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশাসন মেনে চলার মাঝেই, সন্তানকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি অভিভাবকদের কর্তব্য তার আদরের সন্তানকে সেগুলোর চর্চা করানো। সংসারের দু-জনকেই আজকাল চাকরি/ব্যবসা করতে হয়। বাবা-মায়ের এই পরিশ্রম আদরের সন্তানদের নিষ্কণ্টক ভবিষ্যতের জন্য, তাদের বায়না মিটানোর জন্য। তাই তাদের ব্যক্তি জীবনও আলোকিত করার লক্ষ্যে শত ব্যস্ততার মাঝে কঠোর পরিশ্রমের ফাঁকেও সন্তানকে, সকালে স্কুলে পাঠানোর আগে বলে দিন শিক্ষক/শিক্ষিকা ও বড়দের দেখলে সালাম এবং তাদের সঙ্গে নম্রতার সঙ্গে শ্রদ্ধা-ভক্তি নিয়ে কথা বলার জন্য। সহপাঠীদের সঙ্গে বিনয়ী আচরণ ও সবার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা। যদি কোন ভুল করেও ফেলে তার পরেও যেন সে মিথ্যার আশ্রয় না নেয়, সেই বিষয়ে তাকে অভয় দেয়া। সে যদি কোন বিষয়ে তার বন্ধুদের সহযোগিতা পায়, তাহলে যেন সে তার/তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বর্তমান সমাজে কৃতজ্ঞতা জানানোর মধ্যে রয়েছে যত কৃপনতা। আর এই কৃপনতা থেকেই সৃষ্টি হয়Ñ যতসব অনৈতিকতার সূত্র। একজন অকৃতজ্ঞ সমাজে সবচেয়ে ধিকৃত। রক্তচক্ষুর বদলে পরম সোহগের সঙ্গে সন্তানের ভুল ত্রুটি শুধরিয়ে দিলে অনেক বেশি কাজে আসে। তাই বাবা-মাকে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করতে হবে, তাহলে দেখবেন সন্তান সবকিছুই আপনার সঙ্গে শেয়ার করবে। যে সন্তান শেয়ার করতে শিখবে সেই সন্তান কখনও আদর্শহীন হবে না। বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে, ঘরের পরিবেশ ভাল বলেই যে সন্তান সভ্য-ভদ্র ও আদর্শবান হবে এ রকম আত্মতৃপ্তিতে ভোগা ঠিক হবে না। কারণ সবসময় গ্রাম্য সেই প্রবাদ কাজে নাও আসতে পারে। তাই সন্তান কাদের সঙ্গে মিশল/বন্ধুত্ব করল সেদিকেও অনুসন্ধানী খোঁজ রাখতে হবে। তবে খোঁজ রাখতে গিয়ে যেন আবার সন্তানের সম্মানে আঘাত না হানে। এতে করে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মনে রাখবেন মোটামুটি পাঁচ/ছয় বছর বয়স থেকেই আপনার ছোট্ট সোনামণির নিজেস্ব সম্মানবোধ সৃষ্টি হয়। অবশ্যই ছোট থেকেই সন্তানকে/সন্তানের সামনে সু-শিক্ষার বিষয়ে আলোচনা ও তার মাঝে চর্চার প্রচলন ঘটাতে হবে। শিক্ষিত হওয়ার জন্য যেমন একাডেমিক শিক্ষার প্রয়োজন তেমনি সন্তানকে, সুস্থ মানসিকতার ধারক ও বাহক হওয়ার জন্য সভ্যতা-ভদ্রতা-নৈতিকতা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো মননের অধিকারী যেন হয় সেই বিষয়ে বাবা-মাকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রসঙ্গ লেখনীর মধ্যে একাধিকবার আসার কারণ হলো, যিনি তার পালন/সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সক্ষম- তিনি যেন জগতের সকল কর্মে সফল। মোদ্দা কথা বিচক্ষণ বাবা-মা বা অভিভাবকদের সন্তানরাই সমাজে আদর্শ মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
×