ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নাট্যশালায় চীনা নববর্ষ উৎসবের নান্দনিক পরিবেশনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

নাট্যশালায় চীনা নববর্ষ উৎসবের নান্দনিক পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতল সন্ধ্যায় চীনের ঐতিহ্যবাহী রকমারি পরিবেশনায় মুগ্ধ হলো মিলনায়তন ভর্তি দর্শক। অনবদ্য শারীরিক সক্ষমতার প্রকাশে এ্যাক্রোবেটিক, ক্যারিশমাটিক মার্শাল আর্টের সঙ্গে উপস্থাপিত বৈচিত্র্যময় নাচ-গান ও সুরেলা যন্ত্রসঙ্গীত। আর এসব কিছু ছিল চীনা নববর্ষ ও বসন্তোৎসবের আয়োজন। ‘বিউটিফুল তিয়ানজিন’ শীর্ষক পরিবেশনায় অংশ নেয় চীনের সাংস্কৃতিক দল তিয়ানজিন আর্ট ট্রুপ। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ ছিল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন। দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশীপ সেন্টার, ঢাকার চীনা দূতাবাস ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং। স্বাগত বক্তব্য রাখেনÑ একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। এছাড়াও সংক্ষিপ্ত কথনে অংশ নেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশীপ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট দেলওয়ার হোসাইন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মা মিং চিয়াং বলেন, বাংলাদেশকে আমার দ্বিতীয় বাসস্থান মনে হয়। এ দেশের প্রতি রয়েছে আমার বিশেষ ভালবাসা। সোনার বাংলা গড়তে বাংলাদেশের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করবে চীন সরকার। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে শুরু হয় মন মাতানো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুরুতেই ছিল হাজার বছরে চীনা সভ্যতার ঐতিহ্যের স্মারক মার্শাল আর্ট। ‘ফিস্ট অব লিজেন্ড’ শীর্ষক উপস্থাপনায় শিশু শিল্পীরা অনবদ্য দক্ষতায় মেলে ধরে চীনের বীরত্বের সাক্ষ্যবহ শিল্পটির নানা কৌশল। এরপর ছিল অ্যাক্রোবেটিক পরিবেশনা ‘রোটেড ব্লানকেট’। চীনের অপেরা শিল্পী যারা হুয়াডান্স নামে পরিচিত তারা নানা রকম শরীর কসরত প্রদর্শন করে। এরপর সুয়না নামে পরিচিত যন্ত্রশিল্পীরা বাঁশির সুরের সঙ্গে ঢোলের তালে আবাহন করেন বসন্তকে। সুরের মূর্ছনা শেষে ‘ওড টু লোটাস’ নামের পরিবেশনায় মেয়েরা নাচের ভঙ্গিমায় পদ্মফুলের রূপ তুলে ধরে মোহাবিষ্ট করে দর্শকদের। সাইকেলে চড়ে হাতে পায়ে বল হাতে নানা কৌশল প্রদর্শন করেন শিল্পীরা। চীনের ঐতিহ্যবাহী বক্সিং আদলে উপস্থাপিত হয় মার্শাল আর্ট। পরিবেশিত হয় ‘দ্য সিল্ক রোড ক্যামেল’ নামের একটি যন্ত্রসঙ্গীত। ফুলগুলো কেন এত লাল শিরোনামে তাজিক নাচে পরিচিত লোকসঙ্গীতের সুরে ফুলের প্রতি মানুষের ভালবাসা ও মুগ্ধতার প্রকাশ পায় নৃত্যের ছন্দে। ‘জিজিটসু’ নামের অ্যাক্রোবেটে জটিল সব শারীরিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শারীরিক সক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। চীনা ভাষায় এটিকে বলা হয় থি চি। এ প্রাচীন নৃত্য ঢংয়ে উঠে আসে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে বার্তা। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল চীনা শিল্পীদের কণ্ঠে বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের পরিবেশনা। বসন্তভিত্তিক চীনের লোকগানের ওপর সৃষ্ট যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনাটিও দর্শকের মাঝে ছড়ায় ভাল লাগার আবেশ। এরপর উপস্থাপিত কিছু চ্যালেঞ্জিং অ্যাক্রোবেটিক ও মার্শাল আর্ট পরিবেশনা। আজ শনিবার একই স্থানে একই সময়ে পরিবেশিত হবে চীনের শিল্পীদের অংশগ্রহণে উৎসবের দ্বিতীয় দিনের পরিবেশনা। তবে আয়োজনটি উন্মুক্ত নয়, শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিরা সুযোগ পাবেন অনুষ্ঠানটি উপভোগের। জয়নুল গ্যালারিতে চীনা ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনী ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনী। রবিবার চারুকলার বকুলতলায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে চীনা বর্ণমালার ক্যালিওগ্রাফি নির্ভর ব্যতিক্রমী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। প্রদর্শনীর যৌথ আয়োজক হচ্ছে বাংলাদেশ-চায়না পিপলস ফ্রেন্ডশিপ এ্যাসোসিয়েশন, চায়নিজ এ্যাসোসিয়েশন ফর ফ্রেন্ডশিপ উইথ ফরেন কান্ট্রিস, আনিয়ান মিউনিসিপাল গবর্নমেন্ট অফ হেনান প্রভিন্স ও ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব চায়নিজ রাইটিং এবং পেইন্টিং এ্যান্ড ক্যালিওগ্রাফি একাডেমি । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। এছাড়া অনুষ্ঠানে আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং উপস্থিত ছিলেন। হাসানুল হক ইনু বলেন, চীন ও বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক আরও গভীর করতে এ আয়োজন। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে থেকেই দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। বৌদ্ধ ধর্মকে কেন্দ্র করে এ সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। দুই দেশের সম্পর্কে ভাষা খুব গুরুত্বপূর্ণ, ক্যালিওগ্রাফি ভাষার বিকাশ ঘটাতে পারে। সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও ত্বরান্বিত হতে পারে। চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং বলেন, চীনা বর্ণ হাজার বছর ধরে অবিকৃত রয়েছে। এসব বর্ণ ও ক্যালিওগ্রাফি সভ্যতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এর দ্বারা প্রাচীন মানুষের অসাধারণ প্রতিভাও প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনÑ চায়নিজ এ্যাসোসিয়েশন ফর ফ্রেন্ডশিপ উইথ ফরেন কান্ট্রিসের কর্মকর্তা জি ওয়ে, বাংলাদেশ-চায়না পিপল ফ্রেন্ডশিপ এ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ বশির উল্লাহ, এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার জামান সুমন ও সদ্য বিদায়ী সভাপতি আনোয়ারুল আমিন প্রমুখ। আলোচনা শেষে ২ দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অতিথিরা। আজ সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত জয়নুল গ্যালারিতে এ ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ॥ চৌদ্দতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চতুর্থ দিন রবিবার ৫টি ভেন্যুতে ৪৬টি চলচ্চিত্র দেখানো হয়েছে। উৎসবের অংশ হিসেবে এদিন ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা সামিয়া জামানের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ ফ্লিমস : ফাইন্ডিং গ্লোবাল অডিয়েন্স’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনার। ইণ্টারন্যাশনাল ইমার্জিং ফিল্ম ট্যালেন্ট এ্যাসোসিয়েশন্স (এইএফটিএ) উদ্যোগে চারটি অধিবেশনে সাজানো এ সেমিনারে অংশ নেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, চলচ্চিত্র নির্মাতা মুস্তাফা সরয়ার ফারুকী, রুবাইয়াৎ হোসেন, আবু শাহেদ ইমন প্রমুখ। উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেনÑ উৎসব পরিচালক সামিয়া জামান ও এইএফটিএ এর পরিচালক মার্কো অরসিনি। সমাপনী অধিবেশন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সেমিনারে বক্তারা বলেনÑ ‘ভাল দর্শক পেতে হলে অবশ্যই ভাল মানের ছবি তৈরি করতে হবে। একটি চলচ্চিত্র যে কোন দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, যদিও সেই ছবিটি নির্মিত হয় ভাল গল্পের ভিত্তি করে। দর্শকদেরও রুচিবোধ পরিবর্তন আনতে হবে। উৎকৃষ্ট মানের দেশী-বিদেশী ছবি দেখতে হবে। তবেই চলচ্চিত্রের সমন্বিত উন্নয়ন হতে বাধ্য’।
×