ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নয় দিনব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

নয় দিনব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছবিপ্রেমীদের জন্য চমৎকার এক উৎসব। একসঙ্গে রাজধানীর চারটি ভেন্যুতে চলবে উৎসব। আটটি বিভাগে দেখানো হবে বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের ১৮০টি চলচ্চিত্র। সেলুলয়েডের পর্দায় উপস্থাপিত হরে দর্শককে ভাবনার খোরাক জোগানো নানা বিষয়ের ছবি। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো নয় দিনের ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ‘বেটার ফিল্ম, বেটার অডিয়েন্স, বেটার সোসাইটি’ স্লোগানে চতুর্দশতম এ উৎসবের আয়োজক রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। উৎসব চলবে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের মিলনায়তন, সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেস মিলনায়তন ও আমেরিকান ইএমকে সেন্টার মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে উৎসবের ছবিগুলো। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সিরীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ মালাস ও নরওয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা আনিয়া ব্রেইন মঙ্গল। সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ও উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উৎসব কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ম. হামিদ। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্ব¡লনের মাধ্যমে উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, এ উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে বেড়েছে শহরের সৌন্দর্য। চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। এর অনেকগুলো দিক রয়েছে। চলচ্চিত্র অবলোকনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে চিন্তার ফোয়ারা তৈরি হয়। তাই এই শিল্প মাধ্যমটিকে চাইলেই কোন রাজনীতিবিদ বা চিন্তাবিদ অবহেলা করতে পারেন না। একটি চলচ্চিত্র অনেক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য তৈরি হওয়ার পর নির্মাণ শেষে হয়ে উঠে আর্কষণীয়। সাম্র্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরিতে চলচ্চিত্রের বিকল্প নেই। এই গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। তিনি আরও বলেন, মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন সৃষ্টিতেও রয়েছে চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মানব জীবনের চালচিত্র তুলে ধরা এ শিল্প মাধ্যমটি সহজেই প্রফুল্ল করে দর্শকের মনকে। বিশ্বের সমস্যা মোকাবেলায়ও চলচ্চিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। রাজনীতিকরা যখন হোঁচট খান, তখন সমাজকে এগিয়ে নেয় চলচ্চিত্র। ক্ষমতার জন্য রাজনীতিকরা আপোস করলেও চলচ্চিত্রকাররা কখনোই তা করেননি। তাই শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে রাজনীতিবিদ ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজ করতে হবে একসঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের সংগ্রামের ওপর সার্বিক কোন ছবি হয়নি। পুরো একাত্তরের ক্যানভাসকে উপজীব্য করে একটি ছবি নির্মিত হলে বিশ্ববাসী জানতে পারত কিভাবে একটি দেশের জন্ম হয়। সভাপতির বক্তৃতায় শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি চলচ্চিত্র অঙ্গনের লোক নই, কিন্তু আমি এই উৎসব আয়োজনে যথাসাধ্য সহযোগিতার চেষ্টা করেছি। এ ধরনের আয়োজন অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবে। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সুরের ধারার শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে। অনেকগুলো কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে ওঠে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’, ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’, ‘মোরা ঝঞ্চ¦ার মত উদ্দাম’, ‘দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা’, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ও ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’। গানের সঙ্গে ছিল একক ও সম্মেলক নৃত্য পরিবেশনা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শিত হয় উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র। দেখানো হয় বাংলাদেশের রুবাইয়াত হোসেন নির্মিত ছবি ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’। মধ্যবিত্ত এক নারীর আত্ম-অনুসন্ধানের বিষয়কে উপজীব্য করে নির্মিত ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয করেছেন মিতা চৌধুরী, রিকিতা শিমু, শাহানা গোস্বামী ও রাহুল বোস। এরপর দেখানো হয় আর্জেন্টাইন পরিচালক ফারনান্দো মোলনার ছবি ‘শো-রুম’। এবারের উৎসবের চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হবে অস্ট্রেলেশিয়া (অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া) প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগ, ট্রিবিউটস, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেনস বিভাগ, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, উইমেন ফিল্মস ও ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মস বিভাগে। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগটি সাজানো বিশ্বনন্দিত নারী পরিচালক আনা ব্রিয়েন ও এ্যাগনেস ভার্দার চলচ্চিত্র দিয়ে। সব মিলিয়ে এবারের উৎসবে অংশ নিচ্ছেন ৮৮ জন বিদেশী অতিথি। এর মধ্যে ৬০ জন অতিথি হাজির হয়েছেন উৎসবে। উৎসবের অংশ হিসেবে ‘ষষ্ঠ ঢাকা আন্তর্জাতিক সিনে ওয়ার্কশপ’ অনুষ্ঠিত হবে ১৬ থেকে ২১ জানুয়ারি। তুর্কি বংশোদ্ভূত নরওয়েজিয়ান চলচ্চিত্রকার নেফিসে ওজকাল লরেন্টজিনের তত্ত্বাবধানে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) সহযোগিতায় এতে বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান, ইরান ও ফিনল্যান্ডের ২৫ নবীন চলচ্চিত্র শিক্ষার্থী, সমালোচক ও সাংবাদিক অংশ নেবেন। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে উৎসবে নারীর ভূমিকাবিষয়ক সম্মেলন হবে ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ভেন্যুর ছবি দেখতে কোনো টিকিট বা পাস লাগবে না। তবে অন্যসব ভেন্যুতে ৫০ টাকার মূল্যের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। শিশু ও শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। প্রদর্শনীর টিকিট ভেন্যুতে পাওয়া যাবে। উৎসবের মূল হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন। শিল্পকলায় চীনা নববর্ষের আয়োজন ॥ বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে চীনা শুভ নববর্ষ ও বসন্ত উৎসব উপলক্ষে ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে দুই দিনের আয়োজনই শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। দুই দিনব্যাপী এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবে চীনের তিয়ানজিন থেকে আগত সাংস্কৃতিক দল। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাকরাইন ও পৌষ সংক্রান্তি উৎসব ॥ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেবদার ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজির অনুষ্ঠিত হলো সাকরাইন ও পৌষ সংক্রান্তি উৎসব। আকাশে রঙ্গিলা ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নানা বিষয়কে যুক্ত করে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাবাসী সংগঠন আয়োজিত উৎসবে অতিথি ছিলেন ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান খান ও বাংলাদেশে রিপাবলিক অব সেসেলস দেশের অনারারি কনসাল আমীরুজ্জামান। জাবিতে সেলিম আল দীনের প্রয়াণ দিবস পালিত ॥ রবীন্দনাথ পরবর্তী বাংলা নাটকের অনন্য নাট্যকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সেলিম আল দীনের অষ্টম প্রয়াণ দিবস পালিত হয়েছে। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণ করা হয় এই নাট্যপুরোধাকে। জনকণ্ঠের জাবি সংবাদদাতা দীপঙ্কর দাস জানান, বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় স্মরণ শোভাযাত্রা উদ্বোধনের মাধ্যমে মহাপ্রয়াণ দিবস শুরু হয়। শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। শোভাযাত্রাটি পুরাতন কলাভবন থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশদ্বারে পাশে অবস্থিত সেলিম আল দীনের সমাধিস্থলে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সেলিম আল দীনের সহধর্মিণী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠনের কর্মীরা। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন সেলিম আল দীনের নবনির্মিত সমাধি উদ্বোধন করেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। উদ্বোধন শেষে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাবি উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম, জাবির নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, নাট্য সংসদ, ঢাকা থিয়েটার, আরশিনগর থিয়েটার, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বুনন থিয়েটার, তালুকনগর থিয়েটার, রঙ্গন মাইম একাডেমি, পুতুল নাট্য গবেষণা কেন্দ্র, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, স্বপ্নদলসহ নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, সেলিম আল দীনের শারীরিক উপস্থিতি না থাকলেও তাঁর কাজের মধ্যদিয়ে তিনি আমাদের মাঝে বিরাজমান। তিনি রেখে গেছেন কালজয়ী নাট্যকর্ম। তার কর্মের মাধ্যমে সবার মাঝে ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি। সেলিম আল দীনের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে মঞ্চস্থ হয় নাটক কবি। জাবির এ্যালামনাই ডে মিলন মেলা আজ ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের চার দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার সমাপনী দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাই ডে মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। জাবি সংবাদদাতা জানান, দিনব্যাপী এ মিলন মেলায় সকাল নয়টায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বর থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। এরপর সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে স্মৃতিচারণ, প্রথম ব্যাচে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, ফানুস উড়ানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা এবং র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
×