ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভায় দাবি

নারীর প্রতি আচার-আচরণ পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

নারীর প্রতি আচার-আচরণ পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘের কনভেনশন অন দি ইলিমিনেশন অব অল ফরমস অব ডিসক্রিমিনেশন এগেনিস্ট উইমেন (সিডও) সনদের ওপর অব্যাহত সংরক্ষণ দেশের সংবিধান এবং নারী অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নারীর প্রতি সকল বৈষম্য নির্মূল এবং সকল জায়গায় নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে সিডও সনদের দুটি ধারার ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণ অনুমোদন দিতে হবে- যা আজ পর্যন্ত একটি প্রতিশ্রুতি হিসেবেই রয়ে গেছে। এই সংরক্ষণ রাখবার কোন আইনগত যৌক্তিকতা নেই, এর অসারতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। বৈষম্যমূলক সকল আইন ও আইনের ধারা সংশোধন কিংবা বাতিল করতে হবে। নারীর প্রতি সব ধরনের নেতিবাচক ও গৎবাঁধা ধ্যান-ধারণা ও আচার-আচরণ পরিবর্তনের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ, নারীর প্রতি সহিংসতা, পাচার ও যৌন শোষণ ইত্যাদি বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ভূমিকা পালন করতে হবে। সিডও সনদের যথাযথ বাস্তবায়নে জাতীয়ভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভা থেকে সরকারের প্রতি এসব দাবি জানানো হয়। এই সভার আয়োজন করে সিটিজেনস ইনিশিয়েটিভস্ অন সিডও-বাংলাদেশ (সিআইসি-বিডি)। গত বছরের ১৪ এপ্রিল তারিখে জাতিসংঘ সিডও কমিটির কাছে অষ্টম সাময়িক প্রতিবেদন পেশ করে। দেশের ৫৩টি বেসরকারী নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সিআইসি-বিডি সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে অষ্টম সিডও ছায়া প্রতিবেদন ২০১৫ তৈরি করে। সভায় এই প্রতিবেদনের ওপর সিআইসি-বিডির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। সংগঠনটি ২০০৭ সাল থেকে দেশে সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। সভায় সরকারের দেয়া প্রতিবেদন সম্পর্কে ১৭টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- দুটি ধারার ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার, বৈষম্যমূলক আইনের সংস্কার, প্রচলিত গৎবাঁধা ধারণা ও নেতিবাচক চর্চা মোকাবেলা, নারী নির্যাতন, পাচার ও যৌন শোষণ, রাজনীতি ও জনজীবনে অংশগ্রহণ, নাগরিকত্ব, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ নারী, সুবিধা বঞ্চিত নারী, বিয়ে এবং পারিবারিক সম্পর্ক ইত্যাদি। স্টেপ টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকারের পরিচালনায় এবং মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজ-ইউএন মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, ইউএনডিপির হিউম্যান রাইটস এ্যাডভাইজার মিকা কানেভাভোওরি, ইউএন উইমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন সুসান হান্টার, জাতিসংঘ সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপার্সন সালমা খান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম নাসিরুদ্দিন ভূঁইয়া, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. হামিদা হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্নেহাল ভি সোনেজি, উইমেন ফর উইমেনের সভাপতি জাকিয়া কে হাসান, ব্র্যাকের পরিচালক শীপা হাফিজা, সাংসদ শিরিন আক্তার প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে সিডও সনদের ওপর সংরক্ষণ প্রত্যাহারের দাবি জানান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এই সংরক্ষণ প্রত্যাহার করতে হবে। এই রিজার্ভেশন রাখবার কোন আইনগত যৌক্তিকতা নেই। নারীর অধিকার বাস্তবায়নে সকলের এক সঙ্গে কাজ করা দরকার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য সংস্থার লোকদের একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্ব অনেক। আমরা প্রায়ই বলে থাকি নীরবতাকে ভেঙ্গে ফেল। চিৎকার করো, আওয়াজ করো। নারীকে বলা হয়, তোমার আওয়াজ যেন শোনা যায়, তোমার প্রতিবাদ যেন শোনা যায়। কিন্তু আমরা আমাদের কাজে কতটুকু সফলতার পরিচয় দিয়েছি। শুধু রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে উত্তর পাওয়াটা সম্ভব নয়। সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, দেশের প্রচলিত ও গৃহীত শাসনতন্ত্রের পরিপন্থি একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর্টিকেল টু থেকে রিজার্ভেশন এই মুহূর্তে বিলুপ্ত করা হোক। নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিন্তু মৌলিক জায়গাগুলোতে সরকার বিভ্রান্তিতে ভুগছে। ত্রিশ বছর পর বাংলাদেশ জাতিসংঘ সিডও কমিটিকে জানাচ্ছে সমাজ প্রস্তুত নয়। এর আগে বলা হলো আইনটি বিবেচনাধীন, প্রক্রিয়াধীন, হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের কাছে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে যে সন্দেহ সেটি জাতিসংঘের কাছে ধরা পড়বে। যা আমাদের সকলের জন্য অসম্মানজনক। আমরা হয়ত শব্দ এবং তথ্যের চাতুর্যের মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে পারব। কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারব না। একদিন না একদিন এই সমস্যাকে আমাদের মোকাবেলা করতেই হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হলেও এটিকে কম গুরুত্বের সঙ্গে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দেশের ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী। তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকের তথ্য ও উপাত্তে জেন্ডার নিয়ে নানা অসংবেদনশীলতা রয়েছে। এগুলো দূর করতে নীতিনির্ধারকদের পাঠ্যপুস্তক প্রণেতাদের সঙ্গে বসতে হবে। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ কমানো যাবে না।
×