ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পৌষের শীতল সন্ধ্যায় শিল্পকলায় পুতুল নাট্য প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

পৌষের শীতল সন্ধ্যায় শিল্পকলায় পুতুল নাট্য প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিভে গেল মিলনায়তনের আলো। দর্শকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঞ্চে এলো কুশলীরা। বর্ণবহুল পোশাকের ক্ষুদে আকৃতির চরিত্রগুলো যেন লাফিয়ে লাফিয়ে আওড়ালো সংলাপ। সেই সঙ্গে নেচে-গেয়ে কাহিনীর বয়ান। ভিন্ন রকমের নাট্য কুশীলবদের অভিনয়ে মুগ্ধ হলো দর্শকরা। তবে এ নাটকে রক্ত মাংসের অভিনয়শিল্পীর পরিবর্তে অংশ নিলো মানুষের তৈরি অনেকগুলো পুতুল। শুক্রবার ছুটির দিনে পৌষের শীতল সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হলো পুতুলনাট্য প্রদর্শনী। মানুষ অভিনীত মঞ্চনাটকের বদলে মঞ্চস্থ হলো পুতুল অভিনীত পাপেট শো। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাট্যের পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ। মানব-সভ্যতার সমবয়সী শিল্পটির উপস্থানে পুতুলগুলোকে সুতা কিংবা কাঠির সাহায্যে নাড়িয়ে রূপ দেয়া হলো অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রীর। পুতুল মুখনিঃসৃত এ গল্পভ্রমণে প্রদর্শিত হলো মুনীর চৌধুরী রচিত ‘কুপোকাত’, জসীম উদ্্দীনের ‘টুনটুনি’ ও উপেন্দ্রকিশোর রায়ের ‘নাককাটা রাজা’। জনৈক গরুর সাক্ষাতকারে উপস্থাপনাটি হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয়। পুতুলনাট্যের পরিকল্পনা ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রশীদ হারুন। পরিবেশন করে বাংলাদেশ পুতুলনাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। পুতুল নির্মাণ, পুতুলের আঙ্গিক ও বাচিক অভিনয়ে অংশ নিয়েছেন হৃদয় বসাক, নওরীন নিপু, নিতাই কর্মকার, শুভ ম-ল, আহসান মহিউদ্দিন, জয়ন্তী খীসা, বর্ণা ভৌমিক, খান বাঁধন মীম, তানজিম তাজওয়ার, অর্থী দাস, কাজী জাওয়াদ অন্তু, তাহ্সিন নিশাত অদ্বিতীয়া, সাকিনা ইসলাম ঈষিকা, রাকিবুল ইসলাম রাসেল, এস এম মুজিবুল ইসলাম ও খন্দকার রাকিবুল হক। চন্দন রায়ের পুতুল চিত্রণে সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন ফাহমিদা মল্লিক মিতা। প্রদর্শনীর আগে ছিল উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। শিল্পকলা একাডেমির মাহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ড. রশীদ হারুন। শামসুজ্জামান খান বলেন, পুতুলনাচ বাঙালীর আদিম শিল্পকলা। এটি শুধু বিনোদনের বিষয় নয়, এটি সমাজের নানা অসঙ্গতিকে গভীরভাবে প্রকাশ করে। অধ্যাপক রশীদ হারুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটকের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পুতুল বানানো থেকে শুরু করে মঞ্চায়ন পর্যন্ত এই প্রদর্শনীর যাবতীয় আয়োজন। আশা করি, ভবিষ্যতে পুতুলনাট্যকে নাট্যকর্মীরা পেশা হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাট্য শিল্পের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে ২০০৭ সাল থেকে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে শিল্পকলা একাডেমি। সেই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এর আগে একাডেমির আয়োজনে চারটি পুতুলনাট্য উৎসব ও দুটি আবাসিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নাটক বিষয়ে অধ্যয়নকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে একটি প্রযোজনা দল। ১৮Ñ২০ জনের এ দলটি দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস তাদের একাডেমিক কাজের পাশপাশি দিনরাত শ্রম ও মেধা খাটিয়ে নির্মাণ করেছে বর্তমান প্রযোজনাটি। জীবনানন্দকে নিবেদিত ভূমেন্দ্র গুহ স্মারক বক্তৃতা ॥ রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ প্রসঙ্গে গবেষক ভূমেন্দ্র গুহ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, বাজারে জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বিস্তর ভুল। যেসব বই বাজারে পাওয়া যায় এসবের মধ্যে শুধু ‘বোধ’ কবিতাতেই ৪৬টি ভুল রয়েছে। শব্দগত, বানান, বিরামচিহ্ন প্রভৃতি ভুলে ভরা। তিনি না থাকলে জীবনানন্দ দাশের কবিতার শুদ্ধতা রক্ষা করা যেত না। জীবনানন্দের মৃত্যুর পর ভূমেন্দ্র গুহের কারণেই তাঁর লেখা হারিয়ে যায়নি। জীবননান্দ দাশ ভূমেন্দ্র গুহের হাত দিয়েই মানুষের কাছে প্রকাশিত। শুক্রবার বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা আরও বলেন, ভূমেন্দ্র গুহ পাঁচ দশক ধরে জীবনানন্দের মূল পা-ুলিপি থেকে উদ্ধারে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। জীবনানন্দে নিমজ্জন ও ভালবাসা তাঁর জীবনসাধনার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রসঙ্গত, কবি ভূমেন্দ্র গুহ স্বনামধন্য চিকিৎসক যিনি কবি জীবনানন্দ দাশের মূল পা-ুলিপি থেকে পাঠোদ্ধারের যে কাজ করেছেন তা বাংলা সাহিত্যেও এক বিরল দৃষ্টান্ত। জীবনানন্দ গবেষক ভূমেন্দ্র গুহ সম্পাদনায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রকাশ করেছে দুই খ-ে ভূমিকা ও কবিতা মূলানূগ পাঠ। শুক্রবার বিকেলে ধানম-ির বেঙ্গল ক্যাফেতে এ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও ভূমেন্দ্র গুহ ও জীবনানন্দ প্রসঙ্গে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক বিশ^জিৎ ঘোষ ও জীবনানন্দ গবেষক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল পাবলিকেশন্সের নির্বাহী পরিচালক কবি আবুল হাসনাত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। দাদুভাইয়ের জন্মদিন উদ্্যাপন ॥ নানা আনুষ্ঠানিকতায় শুক্রবার উদ্যাপিত হলো শিশু সাহিত্যিক ও ছড়াকার রফিকুল হক দাদুভাইয়ের ৮০তম জন্মদিন। বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। চাঁদের হাট কেন্দ্রীয় পরিষদের আয়োজনে শিশু একাডেমি থেকে বাংলা একাডেমি পর্যন্ত চলে এ শোভাযাত্রা। এরপর সকালের পর্বে অতিথিরা লাল-সবুজ বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ ছিল বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তন। প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে সকালের পর্বে দাদুভাইকে নিয়ে কথা বলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, নাট্যব্যাক্তিত্ব আফজাল হোসেন, ছাড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম, ছড়াকার আমীরুল ইসলাম, প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার প্রমুখ। উন্মোচন করা হয় ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে স্মারক গ্রন্থ ‘হাসিতে হাসিতে আশিতে’। আইজিসিসিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের সন্ধ্যা ॥ অবিনাশী এক কণ্ঠস্বরের কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাই তো তাঁর গাওয়া কালজয়ী গানগুলো আজো আলোড়িত করে শ্র্রোতাদের। শুক্রবার সন্ধ্যায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই অমর গানগুলো নিয়ে সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজন করে ভারতীয় কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি)। এ সঙ্গীতাসরে হেমন্তের গান শুনিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী সৌমেন মুখোপাধ্যায়।
×