ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টুঙ্গিপাড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

মানুষ পোড়ানোর দায়ে খালেদা জিয়ার বিচার হওয়া উচিত

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

মানুষ পোড়ানোর দায়ে খালেদা জিয়ার বিচার হওয়া উচিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোপালগঞ্জ, ৮ জানুয়ারি ॥ মানুষ পোড়ানোর দায়ে খালেদা জিয়ার বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা এদেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারে, মানুষ হত্যা করে। যার মধ্যে এতটুকুন মনুষ্যত্ব আছে তিনি জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারেন না। এত মানুষ তিনি পুড়িয়ে মেরেছেন যে, এজন্য তার তো ওই বিচারই হওয়া উচিত। তার ওই জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাসী আন্দোলনে বাংলার জনগণ সাড়া দেয়নি। একই কারণে পৌরসভা নির্বাচনে হেরেছে বিএনপি। জ্বালাও-পোড়াওসহ মানুষের ওই ধরনের ক্ষতি করেছে বলে মানুষ তাদের ভোট দেয়নি। শুক্রবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার কমপ্লেক্সের মুক্তমঞ্চে আয়োজিত বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দানকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি এবং এই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা থাকলে একটি দেশ যে উন্নত হতে পারে, আমরা তা প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের উন্নতি হয়েছে। এর আগে ’৭৫-এর পর থেকে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা শুধু নিজের ভাগ্য গড়েছে। তারা অর্থ-সম্পদ সব বিদেশে পাচার করেছে। নিজেদের ভোগ-বিলাসেই তারা ব্যস্ত ছিল। এরা এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছে, দেশের মানুষের অর্থ-সম্পদ লুটে খেয়েছে। আমরা যে সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি তার আজকে শুভফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। দীর্ঘদিন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে দেশে এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর পেয়েছে বলেই দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা স্বাধীনতা এনেছি। সেই স্বাধীন দেশের প্রতি কেউ কোন রকম অপবাদ দেবে বা অঙুলি দেখাবে, তা কখনও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না। আমরা বাঙালী জাতি। জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় আমরা একটি স্বীকৃতি পেয়েছি, আত্মমর্যাদা পেয়েছি। বাংলা ভাষায় আমরা কথা বলতে পারছি, একটি দেশ পেয়েছি, একটি রাষ্ট্র পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন খালেদা জিয়া। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রও অব্যাহত আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনও তা চলছে। তবে সবকিছু মোকাবেলা করেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের উৎপাদন বাড়াবো, আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাডে পৌঁছেন। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু মাজারে যাওয়ার পথে তিনি মাজার কমপ্লেক্স-সংলগ্ন ৫ একর জমির ওপর নির্মিত প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল পৌর শিশু পার্কের ফলক উন্মোচন করেন। এরপর সেখান থেকে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে এবং ১১টা ৫০ মিনিটে সমাধিবেদীতে ফুল দিয়ে তিনি তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। এ সময় তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহম্মদ আব্দুল্লাহ, রেড-ক্রিসেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম এমরান হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান, টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আব্দুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল বাশার খায়ের, নব-নির্বাচিত গোপালগঞ্জের মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, টুঙ্গিপাড়ার মেয়র মেয়র শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা, সাবেক মেয়র মোঃ ইলিয়াস হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মাজার কমপ্লেক্সের মুক্তমঞ্চে গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এরপর সেখানে তিনি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়া বাদ-জুমা মাজার কমপ্লেক্স মসজিদে এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেল ৩টায় টুিঙ্গপাড়া থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দুই কন্যার শ্রদ্ধা ॥ বিডিনিউজ জানায়, বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টায় টুঙ্গিপাড়া পৌঁছার পরই দুই বঙ্গবন্ধু কন্যা তার সমাধিস্থলে যান। সৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর দুই বোন কিছুক্ষণ নীরবে বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। ফাতেহা পাঠ করে বাবা, মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করেন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে।
×