ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

টি ইসলাম তারিক

‘এমএসএন’ বনাম ‘বিবিসি’র লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

‘এমএসএন’ বনাম ‘বিবিসি’র লড়াই

গত মৌসুম থেকে লড়াই জমে উঠেছে ‘এমএসএন’ বনাম ‘বিবিসি’র। ফুটবলবিশ্বে এমএসএন হিসেবে পরিচিত বার্সিলোনার আক্রমণভাগের তিন তারকা লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ ও নেইমার। আর বিবিসি হিসেবে খ্যাত রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণভাগের ত্রয়ী গ্যারেথ বেল, করিম বেঞ্জামা ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। আগের মৌসুমের মতো এবারও আক্রমণভাগের দুই ত্রয়ীর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই চলছে। মেসি ও রোনাল্ডো হালের সবচেয়ে সেরা দুজন ফুটবল তারকা। ফিফার সর্বশেষ সাতটি ব্যালন ডি’অর নিজেদের শোকেসে তুলেই প্রমাণ দিয়েছেন কেন তারা সেরা। ইউরোপের অন্যতম সেরা দুই ক্লাব বার্সিলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা। তবে সময়ের সেরা সেনসেশনদের মধ্যে কে সেরা? এই বির্তকটা দীর্ঘ দিন ধরেই বহমান। বার্সা ও রিয়ারের সাম্প্রতিক সাফল্যের মূল নায়ক এরা দুজন। তাদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েই পুরো দলের নাটাই সাজিয়ে থাকেন ক্লাবের কোচ ও কর্তা ব্যক্তিরা। শেষ কয়েক বছরের মতো এবারও তাদের কাছ থেকে সেরা নির্যাসটা নিয়ে সাফল্যের অপেক্ষায় স্প্যানিশ দুই ক্লাব। এবারের মৌসুমের শুরুতে গুঞ্জন রটে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছেন দলটির আক্রমণের সেরা দুই তারকা গ্যারেথ বেল ও করিম বেঞ্জামা। শোনা যায়, ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক নেইমারের বার্সা ছাড়ার কথাও। কিন্তু বেলা শেষে আগের ঠিকানাতেই রয়ে গেছেন ইউরোপীয় লীগ কাঁপানো এই তারকারা। গত কয়েকবছর ধরে দারুণ সাফল্যের প্রমাণ দিচ্ছেন রিয়ালের রোনাল্ডো-বেল-বেঞ্জামা ত্রয়ী। লস ব্লাঙ্কসদের লা ডেসিমা জয়ে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা ছিল এই ত্রিফলার। ২০১৫ সালে উল্লেখযোগ্য কোন শিরোপা না জিতলেও সব প্রতিযোগিতায় এই ত্রয়ী মিলে শত গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তাই এবার ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন উঠলেও সোনার ডিমপাড়া হাঁসদের হারিয়ে ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি সান্টিয়াগো বার্নাব্যুর ক্লাবটি। বার্সিলোনার হয়ে এমনিতেই ক্যাম্পে কাঁপিয়ে চলছিলেন মেসি-নেইমার। ২০১৪ সালে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল ছেড়ে লুইস সুয়ারেজ বার্সাতে আসলে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে ক্যাটালান ক্লাবটির আক্রমণভাগ। নিজেদের প্রতিভার জোরে একসঙ্গে জ্বলে উঠেন তিনজনই। আর এই ত্রয়ীর মিলিত প্রচেষ্টায় বার্সা হয়ে উঠে দুর্দান্ত। ফলে ২০১৪-১৫ মৌসুমে স্প্যানিশ লা লীগা, কোপ ডেল’রে ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের মতো শিরোপা জিতে ট্রেবল জয়ের স্বাদ দেয় বার্সা সমর্থকদের। গতবার বার্সিলোনার হয়ে সবমিলিয়ে ৫১ ম্যাচ খেলেন মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ ত্রয়ী। ত্রয়ী হিসেবে ১২২ গোল করে নতুন স্প্যানিশ রেকর্ড গড়েন তারা। এবারও দারুণ ফর্মে আছেন বার্সার মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ এবং রিয়ালের রোনাল্ডো-বেল-বেঞ্জামা ত্রয়ী। নেই কোন ইনজুরির ধকলও। তাই নিজেদের সেরাটা প্রমাণ দিতে এবারও যে দারুণ কিছু করে দেখাতে পারেন সেটা সহজেই অনুমেয়। ২০১৩-১৪ মৌসুমে বেল-বেঞ্জামা-রোনাল্ডো সম্মিলিতভাবে গোল করেছিলেন ৯৭টি; যার ২৮টি ক্লাবের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ অভিযানে। রোনাল্ডো ১৭ গোল করে নতুন একটি রেকর্ড গড়েছিলেন। টটেনহ্যামের সাবেক মিডফিল্ডার যোগ করেন ৬টি এবং ফ্রান্সের ফরোয়ার্ডের ৫টি। বিবিসি আগের মৌসুমের চেয়ে ২০১৪-১৫ মৌসুমে করেছিলেন আরও বেশি গোল। রোনাল্ডোর ৬১, বেলের ১৭ ও বেঞ্জামার ২২ গোলে ত্রয়ীর গোলসংখ্যা কাটাই কাটাই ১০০। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে উজ্জ্বল ছিলেন এদের দুজনÑরোনাল্ডোর ১০ গোলের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ৭ গোল করেন বেঞ্জামা, মাত্র দুইটি পান বেল। তবে সবচেয়ে প্রয়োজনের সময় এ আক্রমণত্রয়ীর ধার কমে যায়। আগের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে শেষ চারে জুভেন্টাসের কাছে হারে তাদের ক্লাব রিয়াল। স্প্যানিশ লা লীগাতেও এবার বার বার এ দৃশ্য দেখা যাচ্চে। তবে গত মৌসুমে জ্বলজ্বলে তারকারাজি ছিলেন বার্সিলোনার তিন ফরোয়ার্ড। লুইস এনরিকের দলকে তিনটি ক্লাব শিরোপা জেতাতে দৃশ্যপটে ছিলেন মেসি (৫৮ গোল), সুয়ারেজ (২৫) ও নেইমার (৩৯)। পুরো মৌসুমে রেকর্ড ১২২ গোল করেন তারা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা উরুগুয়ান তারকা ছিলেন দুর্দান্ত। ইউরোপের শীর্ষ প্রতিযোগিতায় মেসি ও নেইমার ১০টি করে গোল করেন, সুয়ারেজের গোলসংখ্যা ৭। বার্সিলোনাকে পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ এনে দিতে সম্মিলিতভাবে তাদের গোল ২৭টি। গত মৌসুমের শেষ দিকে দুর্বল ফর্মের কারণে সমালোচনা শুনতে হয়েছে বিবিসিকে। অবশ্য বেঞ্জামার দাবি, গোলের চেয়েও বেশি কিছু করেছেন তারা তিনজন। কথা সত্যি, কিন্তু গোল বানিয়ে দেয়ার হিসেবে গত মৌসুমে বার্সিলোনার চেয়ে রিয়ালের ত্রয়ী ছিলেন অনেক নিচে। তারা ৪৬ গোল বানিয়েছেন, যেখানে তিন দক্ষিণ আমেরিকান ক্যাটালানদের ৫৫ গোলে সহায়তা করেছেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমেও দুই দলের ত্রয়ী দারুণ সূচনা করেন। যে ধারা অব্যাহত আছে এখনও। গত মৌসুমেও রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণভাগের তিন পুরোধাকে পেছনে ফেলেছিলেন বার্সিলোনার ত্রয়ী। চলতি মৌসুমের মাঝপথে পরিসংখ্যান বলছে, এ যাত্রায়ও হয়ত তেমন কিছুরই পুনরাবৃত্তি করতে চলেছেন ক্যাটালান তারকার। চোট নিয়ে বেশ লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকায় বার্সিলোনার হয়ে বেশকিছু ম্যাচ মিস করেছিলেন মেসি। কিন্তু তারপরও বার্সা ফরোয়ার্ডদের মোট গোল তিন মাদ্রিদিস্তার চেয়ে বেশি। এমএসএন এই মৌসুমে এ পর্যন্ত গোল করেছে ৩২টি, বিপরীতে বিবিসির গোলসংখ্যা ২২। অবশ্য স্প্যানিশ ও ইউরোপিয়ান সুপার কাপের দুই ম্যাচ বাদ দিলে এমএসএনের গোলসংখ্যা ২৮। তবে দুই ত্রয়ীর এই দ্বৈরথে এবার মেসি বা রোনাল্ডো নন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেইমার। এই মুহূর্তে লা লীগার সর্বোচ্চ স্কোরার ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন। দ্বিতীয় স্থানটি বার্সিলোনারই লুইস সুয়ারেজের। এরপর তিনে আছেন রোনাল্ডো।
×