ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ঘরে ঘরে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়তে হবে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ঘরে ঘরে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়তে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে সামাজিক প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই। জঙ্গীবাদের ছড়িয়ে দেয়া বিষবাষ্প প্রতিরোধে ঘরে ঘরে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজের প্রতিটি শ্রেণীকে এ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর কোন বকধার্মিক যাতে ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য বর্মধার্মিকদের মুখোস উন্মোচন করে দিতে হবে। শুধু সন্ত্রাসী ওই ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করলেই চলবে না; তাদের মনন ও চিন্তাভাবনাও জানার প্রয়োজন রয়েছে। বিকৃত ওই চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটাতে বুদ্ধিভিত্তিক চিন্তনের চর্চায় তাদের আহ্বান জানাতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি আয়োজিত ‘জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে সামাজিক প্রতিরোধ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসার ইমিরিটাস ড. আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশ আজ এক নতুন সঙ্কটের মুখে। সেটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার প্রত্যাবর্তন ও জঙ্গীবাদের উত্থান। একে প্রতিরোধ করতে না পারলে বাংলাদেশ নামে থাকবে, তবে প্রকৃত বাংলাদেশ থাকবে না। তিনি বলেন, সমাজ আজ একাত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধ নয়। এ অবস্থায় সামাজিক প্রতিরোধ কতটুকু সম্ভব, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সামাজিক প্রতিরোধের প্রস্তাব ভাল, তবে তা সময়সাপেক্ষ। জঙ্গীবাদ শুধু আমাদের ভেতরের জিনিস নয়, এরসঙ্গে বাইরের অর্থ ও অস্ত্রের যোগসূত্র রয়েছে। তা বন্ধ করতে না পারলে জঙ্গীবাদ বন্ধ হবে না। যারা জঙ্গীবাদের এ বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছেন, তাদের সামাজিকভাবেই প্রতিরোধ করতে হবে। মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, জঙ্গীবাদ দমনে সামাজিক প্রতিরোধকে আমি প্রধান উপায় বলে মনে করি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আইএস আমাকে ভাবান্বিত করে তুলছে। বুদ্ধিমত্তাকে চর্চা করার সম্পূর্ণ সুযোগ পাওয়ার পরও তারা কিভাবে এর সঙ্গে যোগ দেয়? মানুষে মানুষে যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে তা দূর করতে হবে। জঙ্গীবাদ দমনে যারা নীরব রয়েছেন তাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্যায় দেখে প্রতিবাদ না করা বোবা শয়তানের সমতূল্য। তাই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রশিদ বলেন, সমাজের প্রতিটি মানুষ একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। যারা সহিংসতার বার্তা পৌঁছান তারা অর্ধশিক্ষিত। কাউকে বাদ দিয়ে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে এ লড়াই করা যাবে না। সম্মিলিতভাবেই জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করতে হবে। জঙ্গীবাদের সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে ড. নুজহাত চৌধুরী বলেন, প্রগাঢ় ধর্মভিরু হলেও ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব। ধর্মে মানুষ হত্যার কথা বলা হয়নি। জঙ্গীবাদ দমনে দেশে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চলছে। করণীয় প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে হবে। দেশের সম্ভাবনার কথা তাদের জানাতে হবে। ঘরে ঘরে সাংস্কৃতিক চর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার ক্রাইমস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক এম এ হাসান। এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, সাংবাদিক নাসির আহমেদ, ড. মোঃ সেলিম, ক্যাপ্টেন (অব) শচীন কর্মকার প্রমুখ।
×