ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজ্ঞান ও মলম পার্টির তৎপরতা বাড়ছে ৭৮ জনকে সাজা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৭ আগস্ট ২০১৫

অজ্ঞান ও মলম পার্টির তৎপরতা বাড়ছে ৭৮ জনকে সাজা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ সামনে রেখে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির তৎপরতা বাড়ছে। সম্প্রতি ৭৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে ডিবি পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গ্রেফতার হয়েছে শতাধিক। উদ্ধার হয়েছে অজ্ঞান করার পাকিস্তানের তৈরি এটিভ্যান ট্যাবলেট। বিভিন্ন ওষুধের দোকানে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারপরও মৌসুমি এই অপরাধীদের তৎপরতা থেমে নেই। তাই এ ধরনের অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করার ঘোষণা দিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। পাশাপাশি অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছেন পুলিশ প্রধান। বুধবার পুলিশ সদর দফতরে এক সমন্বয় সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির তৎপরতা রোধে কঠোর নির্দেশ দেন। সভায় জানানো হয়, হকার, ফেরিওয়ালা, অচেনা সহযাত্রী বা হঠাৎ করে বন্ধুবেশে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির সদস্যরা আবির্ভূত হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক অস্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ দোকানের উন্মুক্ত খাবার, ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, ক্রিম জাতীয় বিস্কুট, চকোলেট, নানা ধরনের পানীয়। এসব পানীয়তে মানুষ অজ্ঞান করার বিভিন্ন দ্রব্য মেশানো হয়। এর মধ্যে এটিভ্যান নামক ট্যাবলেটটির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অজ্ঞান করার ওষুধ মিশ্রিত খাবার বা পানীয় গ্রহণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেবনকারী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা দামি মালামাল টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। এসব অপরাধীদের তৎপরতা রোধে অস্থায়ী দোকানের খোলা খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফুটপাথ, লঞ্চঘাট, রেল ও বাস টার্মিনালে থাকা অস্থায়ী না বসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব জায়গায় সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ ভিডিও প্রচারণা চালানোর জন্য পুলিশ ও পরিবহন মালিকদের পরামর্শ দেন। সভায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, ইতোমধ্যেই সচেতনতা বাড়াতে ১০ হাজার লিফলেট ছাপানো হয়েছে। দ্রুত তা বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে লাগানো হবে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, চলতি বছর রাজধানী থেকেই ডিবি পুলিশ ১০৯ জন অজ্ঞানপার্টির সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ৭৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ২৬টি মামলা বিচারাধীন আছে। গত বছর অজ্ঞানপার্টির কবলে পড়ে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি পবিত্র হজের নামে সৌদি আরবে গিয়ে হাজীদের অজ্ঞানকারী চক্রের দলনেতাসহ ১২ জন গ্রেফতার হয় ডিবির হাতে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞানপার্টি মূলত একটি বিশাল সংঘবদ্ধ চক্র। এ চক্রে চোর, ডাকাত, খুনী ও অনেক অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জড়িত। অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে পাকিস্তানের তৈরি আমদানি নিষিদ্ধ এটিভ্যান ট্যাবলেট। ট্যাবলেটটি বিমানবন্দর ও পাকিস্তান-ভারত স্থলসীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। অজ্ঞানপার্টির মহিলা সদস্যও রয়েছে। তারা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করার নাম করে চা বা কফি বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে অজ্ঞান করার ওষুধ মিশিয়ে দেয়। এরপর সবাই অচেতন হয়ে পড়লে বাড়ি থেকে মালামাল লুটে নেয়। ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এমনই ঘটনা ঘটেছিল পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ আর খন্দকারের বনানীর বাসায়। গৃহকর্মী আমেনা বেগম চায়ের সঙ্গে অজ্ঞান করার এটিভ্যান ট্যাবলেট মিশিয়ে সবাইকে খাইয়ে দেয়। বাড়ির সবাই অচেতন হয়ে পড়লে ৩০ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, দেড় লাখ টাকা ও দামি মালামালসহ প্রায় এগারো লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় ওই মহিলা ও তার সহযোগীরা। এসব স্বর্ণালঙ্কার কেনার সঙ্গে একশ্রেণীর অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী জড়িত। আইজিপির বাসা থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার কেনার দায়ে গ্রেফতার হয় রাজধানীর তাঁতী বাজারের আদি কার্তিক জুয়েলার্স মালিকের তিন ছেলে। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ডিবি সূত্র জানায়, অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের সঙ্গে বহু স্বর্ণ ব্যবসায়ী জড়িত। কারণ লুণ্ঠিত স্বর্ণ অজ্ঞানকারীরা নিজস্ব সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছে বিক্রি করে। অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নিজস্ব অজ্ঞানকারী দলও আছে। অচেতন করার ওষুধের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিউনী। এছাড়া শরীরে নানা রোগের জন্ম হয় বলে বহু দিন ধরেই জানিয়ে আসছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ।
×