ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বীকারোক্তি বিউটি বেগমের

রাকিব হত্যার আসামিদের আইনী সহায়তা দেবেন না আইনজীবীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ আগস্ট ২০১৫

রাকিব হত্যার আসামিদের আইনী সহায়তা দেবেন না আইনজীবীরা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ গ্যারেজ শ্রমিক শিশু রাকিব হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভের আগুন এখনও জ্বলছে। সর্বস্তরের মানুষের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন খুলনার আইনজীবীরা। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বর্বরোচিত এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত আসামিদের আইনী সহায়তা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট কাজী আবু শাহীন শিশু রাকিব হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সহযোগিতা না করার জন্য সকল আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে শিশু রাকিব হত্যা মামলার আসামি বিউটি বেগম শুক্রবার মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। জানা যায়, খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া কবরস্থানের নিকটবর্তী গ্যারেজের মালিক ওমর শরীফ ও সহযোগী মিন্টু খানের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে অপর এক গ্যারেজ শ্রমিক শিশু রাকিব গত সোমবার রাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এরপর থেকেই খুলনায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভের ঝড় শুরু হয়। হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে খুলনায় বিক্ষোভের আগুন এখনও জ্বলছে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে খুলনার আইনজীবীরাও সর্বস্তরের মানুষের কাতারে এসেছেন। তাঁরা শিশু রাকিব হত্যা মামলার আসামিদের আইনী সহায়তা দেবেন না বলে স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপিতি ও পি পি এ্যাডভোকেট কাজী আবু শাহীন বলেন, শিশু রাকিব হত্যা ঘটনায় খুলনার সর্বস্তরের মানুষের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। নির্মম, অমানবিক এ ঘটনায় খুলনার আইনজীবীরাও মর্মাহত। তিনি বলেন, আসামি যত বড় অপরাধী হোক না কেন তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রয়েছে। যে কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে আসামিদের পক্ষে না থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। কিন্তু মানবিকতা, নৈতিকতা ও বিবেকের তাড়নায় খুলনার আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ মামলার আসামিদের আইনগত সহায়তা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি শিশু রাকিব হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত আসামিদের আইনগত সহযোগিতা না করার জন্য খুলনাসহ দেশের সকল আইজীবীদের অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মেম্বর ও খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট এম এম মুজিবর রহমান বলেন, মানবিকতার বিষয় এক রকম এবং আসামির সাংবিধানিক অধিকারের বিষয়টি আর এক রকম। এক্ষেত্রে আইনজীবীরা ব্যক্তিগতভাবে বিবেক প্রসূত হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনা জেলা ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর স্থানীয় আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোমনিুল ইসলাম বলেন, শিশু রাকিব হত্যা মামলার বাদী পক্ষকে তাঁর সংস্থার পক্ষ থেকে সব রকমের আইনগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে। মামলাটির শেষ পর্যন্ত মনিটরিং ও বাদী পক্ষকে সহযোগিতা করা হবে। তিনি বলেন, বর্বর এ হত্যাকা-ের ঘটনায় আইজীবীরাও ক্ষুব্ধ। যে কারণে বৃহস্পতিবার আসামি বিউটি বেগমের রিমান্ড শুনানির সময় আদালতে তাকে সহয়তা করতে কোন আইনজীবী এগিয়ে আসেননি। আসামি বিউটি বেগমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ॥ শিশু রাকিব হত্যা মামলার আসামি বিউটি বেগম শুক্রবার মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। জবানবন্দী রেকর্ড করেন খুলনা মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমী। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার আদালতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর শিশু রাকিব হত্যা মামলার আসামি বিউটি বেগমকে জিজ্ঞাসবাদের জন্য থানায় আনা হয়। ওইদিন জিজ্ঞাসাবাদে বিউটি বেগম মুখ খোলেনি। ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে বার বার দাবি করেন। তবে রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালে তিনি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন এবং ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিতে সম্মত হন। এর পর বেলা ১১টার দিকে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালতে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ডেপুটি কমিশনার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে বিউটি বেগম হত্যাকা-ে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। রাকিব হত্যাকা- সম্পর্কে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন। শিশু রাকিব হত্যায় তিন প্রত্যক্ষদর্শীর জবাবনবন্দী ॥ শিশু রাকিব হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে এ পর্যন্ত এক শিশুসহ তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। খুলনা মহানগর হাকিম মোঃ ফারুক ইকবালের আদালতে বৃহস্পতিবার দু’জন এবং বুধবার এক শিশুর জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রত্যক্ষদর্শী রবিউল ইসলাম আদালতে তার জবানবন্দীতে বলেন, ঘটনার কয়েক মুহূর্ত আগে শিশু রাকিব একটি বাইসাইকেল যোগে টুটপাড়া কবরস্থানের পাশে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (হার্ডওয়ারের দোকান) থেকে ছোট এক কৌটা রং কেনে। এরপর শরীফ মটরস্ থেকে মিন্টু খান বেরিয়ে এসে রাকিবকে ডেকে ভিতরে নিয়ে যায় এবং রাকিবের প্যান্ট খুলে নিয়ে তার মলদ্বারের ভিতরে হাওয়া মেশিনের পাইপ ঢুকিয়ে হাওয়া দেয়। এ সময় শরীফ মটরসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশু ফাহিম ঘটনা দেখছিল। তিনি আরও বলেন, রাকিবের আর্তচিৎকার শুনে তিনি দোকান থেকে বেরিয়ে আসেন। মুহূর্তের মধ্যেই শিশু রাকিব নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী সুমন হাওলাদার ও শিশু নাবিল হাসান ফাহিম শিশু রাকিবকে নির্যাতনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছে ॥ খুলনায় চাঞ্চল্যকর রাকিব হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছে। মামলার দ্রুত চার্জশীট প্রদান এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) ব্যাপক তৎপর রয়েছে। প্রধান দুই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশীট প্রদান করে মামলাটির বিচার দ্রুত ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করার জন্য আবেদন জানানো হবে বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, কেএমপি চাঞ্চল্যকর রাকিব হত্যা মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি চাইছে। ঘটনা ঘটার পর থেকে পুলিশ এ ব্যাপারে ব্যাপক তৎপর রয়েছে। দ্রুত চার্জশীট প্রদানের পাশাপাশি চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েই পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। মামলার তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ কেএমপির উর্ধতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন। খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস জানান, মামলার তদন্ত কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। অপর দুই আসামি শরীফ ও মিন্টু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তারা সুস্থ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। রিমান্ডে পাওয়া তথ্য মামলার তদন্তে অনেক সহায়তা যোগাবে। তদন্ত সম্পন্ন হলে চার্জশীট প্রদান করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিচারের জন্য আবেদন জানানো হবে। আশা করা যায় দ্রুত কাজগুলো সম্পন্ন হবে এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিচার সম্পন্ন হবে।
×