ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা

কিশোরগঞ্জে ৩শ’ বছরের পুরোনো খাল পুনরুদ্ধার, খনন কাজে একাট্টা ৫ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ১১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৫৪, ১১ জুন ২০২৫

কিশোরগঞ্জে ৩শ’ বছরের পুরোনো খাল পুনরুদ্ধার, খনন কাজে একাট্টা ৫ গ্রামের মানুষ

সদর উপজেলার লতিবাবাদে মাকুয়ার খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা, ছোট ছোট কালভার্ট এবং মাটি ভরাটের কারণে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, দূষণ ও ভরাটের ফলে স্থানীয় পূর্ব চরপাড়া, ডুবাইল, নামাপাড়া, লতিবাবাদ ও মুন্সিপাড়া—এই ৫টি গ্রামসহ আশপাশের হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।

জলাবদ্ধতার কারণে ওইসব এলাকায় গত ৫–৬ বছর ধরে পানিবন্দী অবস্থায় প্রায় আড়াইশ’ একর ফসলি জমিতে কোনো চাষাবাদ হচ্ছে না। এ বিষয়ে স্থানীয়রা একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো সমাধান না পেয়ে নিজেরাই খালটি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছেন।

খবর পেয়ে বুধবার (১১ জুন) দুপুরে নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একটি গবেষক দল সরেজমিনে খাল পরিদর্শন করেন। এর আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে নিজের উদ্যোগে জেলা পুলিশ লাইনস ও কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসের পাশ থেকে ভেকু মেশিন নিয়ে খাল খনন কার্যক্রম শুরু করেন। এতে আশপাশের পাঁচ গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।

এলাকাবাসী জানান, লতিবাবাদ ইউনিয়নের মাকুয়ার বিল থেকে খালটি শুরু হয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে মুকসেদপুরের ভাস্করভিলা বিলে গিয়ে মিলিত হয়েছে। খালটি দীর্ঘদিন দখল ও দূষণের ফলে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে আশপাশের গ্রামগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে কৃষিজমি অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েন।

স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন বলেন, “প্রায় তিনশ’ বছরের পুরোনো মাকুয়ার বিলের এই খালের নকশা এখনও সিএস জরিপে রয়েছে। গত ১৫–২০ বছর ধরে ভূমি ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে খালটি ভরাট করে ফেলেছে। আগে এটি ছিল ১৬–১৮ ফুট প্রস্থের, এখন কিছু জায়গায় তা কমে ১৪ ফুটে নেমে এসেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা পাঁচ গ্রামের মানুষ মিলে মতবিনিময় সভা করে খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিই। এজন্য মাইকিং, নোটিশ—সবই করেছি। যেহেতু এটি সরকারি খাল, তাই কেউ বাধা দেয়নি। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই খনন করছি।”

এ বিষয়ে সরেজমিনে কথা হলে গবেষক ফয়সাল আহমেদ, কলামিস্ট গাজী মহিবুর রহমান ও শিক্ষক আমিনুল ইসলাম সেলিম বলেন, “নদীমাতৃক এই দেশে দখল ও দূষণের কারণে নদী ও খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ। যদিও আইন রয়েছে, তবে অনেক সময় স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে তা বাস্তবায়ন হয় না। এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে মাকুয়ার খাল খননের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। তারা একযোগে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদী রক্ষণাবেক্ষণ কমিটি গঠনের পরিকল্পনাও করছে। এটি দেশের অন্য এলাকার জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে।”

খাল খনন কার্যক্রমের উদ্যোক্তা লতিবাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব, বসতবাড়ি ও কৃষিজমি রক্ষার্থে এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খালটি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুদিন ধরে খনন কাজ চলছে এবং আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে।”

তিনি আরও জানান, “স্থানীয় প্রশাসন এই উদ্যোগ সম্পর্কে অবগত এবং খননের সময় কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।”

সজিব

×