ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সফল উদ্যোক্তা জাহিদ

চাকরির পেছনে না ছুটে স্ট্রবেরি চাষে ভাগ্য বদল

তাহমিন হক ববী

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১০ মার্চ ২০২৪

চাকরির পেছনে না ছুটে স্ট্রবেরি চাষে ভাগ্য বদল

স্ট্রবেরি চাষে সফল লালমনিরহাটের তরুণ জাহিদ হাসান (বাঁমে)

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের মনোরম গ্রামের জাহিদ হাসান বসুনিয়া। ২০১৮ সালে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাসের পর সরকারি চাকরির জন্য তিন বছর চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার’ আহ্বান তার কানে বেজে ওঠে। ঘুরে দাঁড়ান জাহিদ হাসান। কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজে নেমে পড়েন।

বাংলাদেশে এখন স্ট্রবেরির ব্যাপক চাষ হচ্ছে। চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় স্ট্রবেরি চাষে মনোযোগী হন জাহিদ। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে তিন বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেছেন। দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন। স্ট্রবেরিতে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এক একর জমিতে প্রথমে আলুর আবাদ শুরু করেন। লাভ হওয়ায় পরের চার মৌসুমে আলুর আবাদই চালিয়ে যান। কিন্তু ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে ছিল জাহিদের। সেই ইচ্ছে থেকেই স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হন। ইউটিউব, গুগলে চাষের পদ্ধতি খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে বগুড়ার স্ট্রবেরি চাষি হাসানের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে জমি প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। পুঁজির অভাবে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে প্রথমদিকে বিপাকে পড়তে হয় তাকে। 
এনজিও থেকে চার লাখ টাকা ঋণ আর নিজের জমানো দুই লাখ টাকা নিয়ে গতবছর ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখ প্রথমবারের মতো আলুর জমিতে রোপণ করেন ১৮ হাজার স্ট্রবেরির চারা। এ কাজে সহায়তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োগ করেন চারজন অভিজ্ঞ শ্রমিক। চলতিবছর ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে প্রথম ফলন তোলেন জাহিদ। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হয়েছে তার। আশা করছেন, আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফলন তুলতে পারবেন। তাতে খরচ বাদে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
জাহিদ হাসানের স্ট্রবেরি বাগানের কৃষি শ্রমিক সন্তোষ রায় বলেন, শুরু থেকে আমরা তিনজন কাজ করছি। প্রথমদিকে কঠিন মনে হলেও এখন চাষের নিয়ম-কানুন বুঝে গেছি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিচর্যা ও পাকা স্ট্রবেরি তোলার কাজ করি। আরেক শ্রমিক বিষ্ণু রায় বলেন, জাহিদ ভাইয়ের কারণে আমাদেরও কাজের ব্যবস্থা হয়েছে। তার আবাদ বাড়লে আরও মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি মনে করেন। জাহিদের স্ট্রবেরি বাগান দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন এই ফল চাষে। 
জাহিদ হাসান বলেন, যারা শিক্ষিত বেকার যুবক আছে, তারা শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানকে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কিছু করেন তাহলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব। আধুনিক কৃষির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া এখন সহজ। এক সময় চাকরির জন্য অনেক ঘুরেছি, সৃষ্টিকর্তা হয়ত ভাগ্যে সেটা রাখেনি। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান শুনে নিজেই নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছি। আমার প্রত্যাশা, স্ট্রবেরি চাষ করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সক্ষম হবো। পাশাপাশি আমার দেখাদেখি অন্যরাও এগিয়ে আসলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হবে।
স্থানীয়রা জানান, জাহিদের স্ট্রবেরি চাষ এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও তার চাষ করা স্ট্রবেরি যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শিফাত জাহান বলেন, এ অঞ্চলে স্ট্রবেরি চাষ সাধারণত স্বল্প পরিসরে নিজের চাহিদা পূরণে কিংবা শখের বশে করেন কেউ কেউ। তবে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে হলে প্রথমে বাজারজাতকরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা স্ট্রবেরি সংবেদনশীল ফল, অল্প সময়ের জন্য তাজা থাকে। কিন্তু জাহিদের মতো তরুণ উদ্যোক্তা সেই চ্যালেঞ্জ নিতে পারছেন এটা বড় ব্যাপার।

×