ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত

মোঃ মামুন চৌধুরী,হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ১৮ আগস্ট ২০২২

হবিগঞ্জে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত

হবিগঞ্জে চা বাগানে আন্দোলনরত শ্রমিকরা।

হবিগঞ্জে ৩০০ টাকা মজুরির দাতিতে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত আছে। দাবি আদায় হলেই ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে। দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকালে এসব কথা বলেছেন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের চানপুর চা বাগানের বাসিন্দা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল।

জানা গেছে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে শ্রীমঙ্গলে আসেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তিনি ধর্মঘট স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে চা শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। একইভাবে বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে চা-বাগান মালিক শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর এই বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় ৬টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত ১১টায়। চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে প্রায় ঘণ্টার মতো ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরও কোনো সমঝোতা হয়নি। ফলে চলমান ধর্মঘটও প্রত্যাহার করেননি শ্রমিকরা। 

তাই জেলার ৪১টি চা বাগানে ধর্মঘট  অব্যাহত রয়েছে। তাদের একটাই দাবি শ্রমের মজুরি দৈনিক ৩০০ টাকা দিতে হবে, না হলে তারা ঘরে ফিরে যাবে না। শ্রমিক ধর্মঘটে চা বাগানের উৎপাদন বন্ধ আছে। এতে লাখ লাখ টাকার পাতার ক্ষতি হচ্ছে। অবস্থায় অচল হয়ে পড়েছে চা বাগানগুলো।   

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল জানান, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, আমাদের দাবি দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি। মালিকপক্ষ ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা মজুরি দিতে রাজি হয়েছে। আমরা প্রস্তাব মেনে নেইনি।

তিনি বলেন, শ্রমিকরা আন্দোলনের যে পর্যায়ে আছেন, সেখান থেকে ফেরা কঠিন। তৃণমূল পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা আসা ছাড়া ফেরা যাবে না। শ্রমিক নেতারা বলেন, দীর্ঘ ১৯ মাস থেকে তাদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে মালিকপক্ষ কথা বলতে রাজি হচ্ছে না। দুই বছর পরপর মজুরি বৃদ্ধির করার কথা।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন জেলার চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে টাকা অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা দৈনিক দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের ১০ জন শ্রমিক নেতার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দফতরের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসলেও আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি। তাই শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে টানা ধর্মঘটের ডাক দেয় শ্রমিকরা।

চা বাগান সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাট, মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার ৭০৩.২৪ হেক্টর জমিতে ২৫টি ফ্যাক্টরিযুক্ত চা বাগান রয়েছে। এছাড়া ফাঁড়িসহ প্রায় ৪১টি বাগানের প্রায় প্রতি হেক্টর জমিতে ২২-২৫ কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়। এসব বাগানে বছরে কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ চা বোর্ড চা-শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবমিলিয়ে ২৫৬ টি চা-বাগান আছে। এতে নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা লাখ হাজারের উপরে। অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩০ হাজার। দেশে মোট চা শ্রমিক পরিবারের বাসিন্দা প্রায় লাখ। এরমধ্যে স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় লাখ ৩৩ হাজার। বাগানে কাজ না পেয়ে হাজার হাজার শ্রমিক বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। 

×