ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

জেড ক্যাটাগরি ঘিরে কারসাজি

প্রকাশিত: ০১:১৫, ১৬ জুলাই ২০১৭

জেড ক্যাটাগরি ঘিরে কারসাজি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে সূচকের উর্ধমুখী প্রবণতায় কারসাজির সুযোগ নিচ্ছে একটি চক্র। এই চক্রটি জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিকে ঘিরে সহজেই বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছেন। অল্প সংখ্যক শেয়ার কেনা-বেচা তারা নিজেদের মথ্যে কেনা-বেচা করে দরবৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে টানা দরবৃদ্ধি দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হচ্ছেন। তাদের কেউ হয়তো মুনাফা করছেন আবার কেউ হয়তো লোকসান করছেন। তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সাধারন বিনিয়োগকারীরা লোকসানেই বেশি পড়ছেন। রবিবারে সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধির দিনে দরবৃদ্ধির সেরা ১০টি কোম্পানির মধ্যে জেড ক্যাটাগরির সাতটি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ছয়টিই জেড ক্যাটাগরির শেয়ার। কোন লভ্যাংশ না ঘোষণা করেও শুধুমাত্র আগের তুলনায় লোকসান কমানোর কারণে পিপলস লিজিং নামের কোম্পানিটির দিনভর বিক্রেতাশূণ্য অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির আগের দিনের তুলনায় মোট ১.২০ টাকা বা ১০ শতাংশ দর বেড়েছে। সারাদিনে কোম্পানিটির মোট ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ৩ কোটি ৩৩ হাজার টাকা। আগেরদিনও কোম্পানির দরবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় ছিল। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কোম্পানিটি কোন লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করতে পারেনি। এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল দুলামিয়া কটন নামের কোম্পানিটি। কোম্পানির দর বেড়েছে ১ টাকা বা ৯.৭১ শতাংশ। এই কোম্পানিটিরও বিক্রেতাশূণ্য অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। ১৯৮৯ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত ৫ বছরে বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ প্রদান করতে পারেনি। বর্তমানে এটির উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। ঢাকা ডাইং নামের বস্ত্র খাতের কোম্পানিটির বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ। কোম্পানিটি আগের চার বছরে লভ্যাংশ প্রদান করলেও গত অর্থবছরে কোম্পানিটি কোন লভ্যাংশ না প্রদান করায় জেড ক্যাটাগরিতে নেমে যায়। অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার বিবেচনায় কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে কোন মার্জিণ ঋণ পায় না বিনিয়োগকারীরা। এই দিনে কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় মোট ৯.৪৭ শতাংশ বেড়েছে। সারাদিনে কোম্পানিটির মোট ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যার বাজার মূল্য ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এরপরই রয়েছে বস্ত্র খাতের মেট্রো স্পিনিং নামের কোম্পানিটি। সারাদিনে কোম্পানিটির মোট ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। ২০১৬ সালে কোন লভ্য্ংাশ না ঘোষণা করায় কোম্পানিটিকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ দিতে না পারা ইমামবাটনও শীর্ষে উঠে এসেছে। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের রহিমা ফুড নামের কোম্পানিটির মোট ৪১ হাজার ৭০৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। সিটি গ্রুপ কোম্পানিটির শেয়ার ব্লক মার্কেটে কিনে নেওয়ার পর থেকেই অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন ভুক্ষেপ নেই। গত এক মাসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৩৫ টাকা। এছাড়া দরবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা আরও একটি কোম্পানিটির নাম বিচ হ্যাচারী। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২০.৮০ টাকা করে। অথচ দুই মাস আগেও কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ১০ টাকার নীচে। একই সময়ের মধ্যে ১শ শতাংশ কোম্পানিটির দর বাড়লেও কোন তদন্তের উদ্যোগ নেই কোম্পানিট্ওি মালিকানা পরিবর্তনসহ নানা গুজবে দর বাড়ছে। যদিও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বরাবরই তা অস্বীকার করছে। বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ চারবছরের প্রতীক্ষার পর বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। এই সময়ে অশুভ একটি চক্র জেড ক্যাটাগরি বা উৎপাদন বন্ধ থাকা লোকসানী কোম্পানিকে ঘিরে কারসাজি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনভাবেই এই ফাদে পাঁ দেওয়া চলবে না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, বাজারে যখন তারল্য প্রবাহ বাড়তে থাকে। যা নতুন টাকা আসতে থাকে। তখন ভাল-মন্দ সব কোম্পানিতেই বিনিয়োগ আসে। যেসব কোম্পানির শেয়ার অবমূল্যায়িত বা কম দামে রয়েছে ওই সব কোম্পানির দর বাড়ে। সেক্ষেত্রে অনেকেই বাছ-বিচার করে না। তাই তারল্য প্রবাহ না বাড়ালে শেয়ার অতিমূল্যায়িত হবেই। জেড ক্যাটাগরির প্রতি আগ্রহ থাকবেই। সেকারণে নতুন শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানো জরুরি। আবার বিনিয়োগকারীদেরও নিজেদের ভাল-মন্দ বুঝে বিনিয়োগ করা উচিত। কারণ গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। কারণ গুজব থাকলেও সেটি খোঁজ নিয়ে বিনিয়োগে আসা দরকার।
×