ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চাই

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলছে মাতৃভাষার জন্য শহীদের রক্তস্নাত মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষা শহীদদের পুণ্য স্মৃতিবিজড়িত এই মাসটিতে চলছে অবরোধ-হরতালের নামে সহিংসতা। আর রাজনীতির নামে অপতৎপরতার মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেয়া ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার উচ্চারণ এলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতায়। দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশকে যখন আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখন দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা সহ্য করা হবে না। বিশ্বে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে আমি দেশের সকল সচেতন জনগণের সহায়তা চাই। অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে, নিজের ব্যর্থতার কারণে, দায় চাপবে বাংলাদেশের মানুষের ওপর; আর তাদের এভাবে মরতে হবেÑ এটা কখনও মেনে নেয়া যায় না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্বৃত্তদের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে দেশকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে দেশকে যেন মুক্ত করতে পারি; তাতে সকলের সহযোগিতা আমার কাম্য। বক্তব্যে ভাষার মাসে একুশের চেতনার কথা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বাঙালীর গৌরবগাথার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বারবার আঘাত এসেছে, তারপরেও বাঙালী জাতি কখনও পরাভব মানেনি। বাঙালী এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আর একুশে ফেব্রুয়ারি এলে যোগ হয় ভিন্নমাত্রা। আমরা পাই ভিন্ন ধরনের অনুভূতি। একুশ আমাদের চেতনার অগ্নিশিখাকে প্রজ্জ্বলিত করে আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করতে। একুশ আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি-আমাদের আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। গণমানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ যখন শান্তিতে আছে, বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন বাঙালী জাতির ওপর আঘাত কেন? প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মানুষ সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। মানুষ এখন ভালভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাদের সেই স্বপ্নকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হচ্ছে। তাদের স্বপ্ন পুড়িয়ে দেয়াÑ এটা কোন ধরনের রাজনীতি? এটা কোন আন্দোলন নয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন ব্যর্থতা থাকত আমাদের, হয়তো সেটা অজুহাত হতে পারত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট দেশকে ধ্বংস করার খেলায় মেতে ওঠেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। শিক্ষাব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষিত জাতি ছাড়া বাংলাদেশকে কখনও আমরা দারিদ্র্য মুক্ত করতে পারব না। কিন্তু আজকে তাদের পড়াশোনার সব পথ যেন বন্ধ। প্রায় ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঠিক যেদিন থেকে পরীক্ষা শুরু, সেই দিন থেকে প্রতিটি কর্মদিবসে দেয়া হচ্ছে হরতাল। মনে হচ্ছে এ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই যেন হরতাল দেয়া; তাদের পরীক্ষা দেয়া বা পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থী, তাদের অপরাধ কি? তারা কেন পড়তে পারবে না? এরাই তো আমাদের ভবিষ্যৎ। তিনি আরও বলেন, পহেলা জানুয়ারি ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি আমরা। তারা অপেক্ষায় ছিল, এই বই নিয়ে তারা স্কুলে পড়তে শুরু করবে। ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হলো হরতাল-অবরোধ, মানুষ হত্যা করা। আর সেই সঙ্গে বন্ধ হলো তাদের স্কুলে যাওয়া। মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এটা তো রাজনীতি না। আমরা আন্দোলন করেছি সেই স্কুলজীবন থেকে। সেই আন্দোলন তো মানুষ হত্যা করে না, বরং মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন হলে তার প্রতিবাদ করার জন্য। কিন্তু আজকে এটা কী আন্দোলন, কোন ধরনের আন্দোলন সেটা আমরা বুঝি না। গোপন জায়গা থেকে একটা ঘোষণা, আর পেট্রোলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টাইগারদের বীরোচিত বিজয়ের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে বলেন, আজকে দেশের ভেতর যখন এ অবস্থা। তখন মন খুলে খেলাও তো কঠিন। অথচ আমাদের টাইগাররা আজকে দেখিয়ে দিয়েছে তাদের দক্ষতা। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত, শিক্ষা, অবকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে গত ছয় বছরে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসেন ভুইঞার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী, বিচারকগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ১৫ ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হয় একুশে পদক। একুশে পদকপ্রাপ্তদের তালিকা ॥ পদকপ্রাপ্তরা হলেনÑ ভাষা আন্দোলনের জন্য পিয়ারু সরদার (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধে অধ্যাপক মোঃ মজিবর রহমান দেবদাস, ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, শিল্পকলায় আব্দুর রহমান বয়াতি (মরণোত্তর), এস এ আবুল হায়াত ও এ টি এম শামসুজ্জামান, শিক্ষায় অধ্যাপক ডাঃ এম এ মান্নান ও সনৎ কুমার সাহা, গবেষণায় আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, সাংবাদিকতায় কামাল লোহানী, গণমাধ্যমে ফরিদুর রেজা সাগর, সমাজসেবায় ঝর্না ধারা চৌধুরী, সত্যপ্রিয় মহাথের ও অধ্যাপক ডাঃ অরূপ রতন চৌধুরী।
×