ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার প্যারোল-নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে স্বজনদের

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

খালেদার প্যারোল-নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে স্বজনদের

শরীফুল ইসলাম ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য স্বজনরা এখনও বিভিন্ন দিকে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রাখলেও দলের নেতারা তাকিয়ে আছেন আদালতের দিকে। বিএনপি মহাসচিবসহ দলের কিছু নেতা এক সময় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য তৎপর থাকলেও তা এখন থেমে গেছে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা প্যারোলে হোক আর যেভাবেই হোক খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে মরিয়া। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না করায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার স্বজনদের দূরত্ব বাড়ছে। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বোন সেলিমা ইসলামসহ তার স্বজনরা কিছুদিন ধরে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, স্বজনদের পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকেও যেন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ফোনালাপ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি ওবায়দুল কাদেরকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলারও অনুরোধ করেন। মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ফোনালাপের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, তিনি বিএনপি মহাসচিবের অনুরোধের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। তারপর হয়তো বিষয়টি বিবেচনা করে শর্ত সাপেক্ষে প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আইনী প্রক্রিয়ায়। আইনের বাইরে গিয়ে এ বিষয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। দুই নেতার ফোনালাপের পর খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি যখন আলোচনায় তুঙ্গে; তখনই বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতারা বলতে থাকেন তারা খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চান না। তারা আইনী প্রক্রিয়ায় মুক্তি চান। তবে এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার স্বজনদের কোন সিদ্ধান্ত আছে কি না তা তারা জানেন না। জানা যায়, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে হলে দোষ স্বীকার করে তাঁর নিজের স্বাক্ষরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। কিন্তু এভাবে আবেদন করতে খালেদা জিয়া নিজেই রাজি নন। পরিবারের সদস্যরা বারবার চেষ্টা করেও খালেদা জিয়াকে রাজি করাতে না পেরে এক পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের এ বিষয়ে খালেদা জিয়াকে বোঝানোর অনুরোধ করেন। বিএনপি নেতারা মনে করেন, স্বজনদের অনুরোধে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির আবেদনে স্বাক্ষর করতে বললে তিনি হয়তো মানবেন না। আর মানলেও এভাবে তাঁকে মুক্ত করলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সে ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার উপক্রম হবে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে পিছু হটে আসেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার স্বজনরা নেতাদের এ ভূমিকা ভালভাবে নিতে পারেননি। তারা নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জনকণ্ঠকে জানান, খালেদা জিয়ার স্বজনরা চান যে কোনভাবে হোক খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যেতে। চিকিৎসা শেষে আপাতত তারা খালেদা জিয়াকে লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় রাখতে চান। কিন্তু খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে হলে যে প্রক্রিয়ায় যেতে হবে তাতে খালেদা জিয়া ও বিএনপির জন্য চরম অবমাননাকর পরিস্থিতি হবে। তাই দলের নেতারা এভাবে তাঁর মুক্তি চান না। তারা চান আইনী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন হোক। আর এখানেই খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিএনপির কোন কোন নেতার কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন হলে তাঁকে নিয়ে বিএনপি ও পরিবারের সদস্যদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে এবং জামিন না পেলে কি হবে এসব বিষয় নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে।
×