ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রিমান্ডে সোনা চোরাচালানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে জনাথন

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 রিমান্ডে সোনা চোরাচালানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে  জনাথন

আজাদ সুলায়মান ॥ বিমানে আনা সোনার চালানপ্রতি ২০ হাজার টাকা পেতেন জনাথন মুক্তি বারিকদার (৩৪)। এ টাকার সবটাই তিনি পেতেন। এভাবে কয়েকটি চালান আনার পর ধরা পড়েন তিনি। এখন থানায় রিমান্ডের মুখে সব গলগলিয়ে বলে দিচ্ছেন। বিমানের কারা কতদিন ধরে, কিভাবে কত সোনা আনত সবই ফাঁস করে দিয়েছেন। সোনা চোরাচালান মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে থাকা বারিকদার এ সম্পর্কে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। বিষয়টি টের পেয়ে গাঢাকা দিয়েছে বিমানের আরও তিন কর্মকর্তা। তারা হলেন- শিফট ইনচার্জ আতিকুর রহমান ও ক্লিনার মামুনুর। তাদের ধরতে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। বিমানও ইতোমধ্যে তাদের বরখাস্ত করেছে। এ মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানোর পর বিমানবন্দরকেন্দ্রিক চোরাচালান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি দিয়েছে বারিকদার। পুলিশ জানিয়েছে, বারিকদার মূলত পেশাদার স্মাগলার। যদিও সে নিজেকে শুধুই ক্যারিয়ার দাবি করেছে। খুলনার খালিশপুরের বড় বয়রার বাসিন্দা সুমঙ্গল বারিকদারের ছেলে জনাথন দক্ষিণখানে বাস করেন। তিনি বিমানের সুইপার পদে কর্মরত। হাতেনাতে সোনাসহ ধরা পড়ায় তাকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করে বিমান। এ বিষয়ে বিমানের এমডি মোকাব্বির হোসেন জানিয়েছেন, বারিকদার আউটসোর্সিংয়ের স্টাফ ছিল। তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্যক্ষ সোনা চোরাাচালানে জড়িতÑ এমন তথ্য হাতে নিয়ে নজরদারি শুরু করেন এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের কো-অধিনায়ক এডিশনাল এসপি আলমগীর হোসাইন শিমুল। এজন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত ক’টি ফ্লাইটে ডিউটি পালনকারী কজন বিমানকর্মীর ওপর নজরদারি করতে থাকেন। সম্প্রতি তার কাছে খবর আসে বিমান ও এমিরেটসের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি ফ্লাইটে নিয়মিত সোনার চালান আসছে। একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন কৌশলে ফ্লাইট থেকে ওই সোনা বের করে বাইরে পাচার করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ৭নং বোর্র্র্ডিং ব্রিজের কাছে এপিবিএনের সাদাপোশাকধারী কজনকে মোতায়েন করা হয়। সকাল সাড়ে আটটায় ধৃত আসামি বারিকদার ওই ফ্লাইটে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে ভেতরে ঢোকে। বের হওয়ার সময় তাকে সন্দেহজনক জিজ্ঞাসাবাদ করেন কনস্টেবল ওবায়দুর রহমান। এ সময় বারিকদার উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সদুত্তর না দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন তার দেহ তল্লাশি করতে চাইলে বাধাও দেয়। এতে সন্দেহ আরও বাড়ায় তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় এপিবিএন অফিসে। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর দেহ তল্লাশি করে তার দু’পায়ের কেডসের ভেতর পাওয়া যায় কালো স্কচটেপে মোড়ানো অবস্থায় ৩২ সোনার বার। এক পায়ে ১৬ অপর পায়ে আরও ১৬। যার ওজন চার কেজি। ১০ তোলার ওজনের প্রতিটি গোল্ডবারের মোট দাম এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ সোনার জব্দ তালিকা তৈরি করে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিমানবন্দরের একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, বিমানের প্রকৌশল শাখার ক্লিনার ও নিরাপত্তাকর্মীদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আগাগোড়াই সোনা চোরাচালানে জড়িত। বছর দশেক আগে এই চক্র মনের মন সোনা চোরাচালান শুরু করলেও শুল্ক গোয়েন্দার তৎকালীন মহাপরিচালক ড. মইনুল খানের আমলে সাঁড়াশি অভিযানে একের পর এক ৮ মণ, ৬ মণ ও ৩ মণের মতো বড় বড় বেশ ক’টি চালান ধরা পড়ায় চোরাকারবারিদের ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়ে। টানা তিন বছরের অভিযানে সিন্ডিকেট গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর বেশ কিছু দিন চোরাচালান বন্ধ ছিল। কিন্তু ড. মইনুল খানকে শুল্ক গোয়েন্দা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ওই সিন্ডিকেট। বেশ কজন দুর্ধর্ষ স্মাগলার জামিনে বেরিয়ে এসে ফের সক্রিয় হয়ে বিমানে প্রকৌশল শাখার সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগ দিয়ে নবোদ্যমে শুরু করে চোরাচালান। রিমান্ডে থাকা জনাথন কাছ থেকে এ সম্পর্কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ সম্পর্কে এডিশনাল এসপি আলমগীর হোসাইন শিমুল বলেন, প্রথমে সে কারো নাম স্বীকার করতে চায়নি কিন্তু এক পর্যায়ে স্বীকার করে বিমানের একটি শক্তিশালী এ ঘটনায় জড়িত। ঘটনার সময় বারিকদার ওই ফ্লাইটের ভেতর অপর ক্লিনার মামুনুর তাকে এই সোনার বারগুলো দেয়। সে এগুলো নিয়ে বাথরুমে গিয়ে দু’পায়ের কেডসের ভেতর ভরে বের হয়ে আসে। তার দায়িত্ব শুধু বাইরে নিয়ে অপর একজনের কাছে পৌঁছে দেয়া, যার বিনিময়ে তাকে দেয়া হবে ২০ হাজার টাকা। তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় মামুনুরের বস কে? জবাবে শিফট ইনচার্জ আতিকুর রহমানের নাম জানায় সে। এভাবে বিমানবন্দরভিত্তিক সিন্ডিকেটের নাম পাওয়া যায়। এরপর তাকে থানায় হস্তান্তর করে এসআই অসীম মোদক বাদী হয়ে ’৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-বির ১ (বি) ও ২৫ ডি ধারায় মামলা দায়ের করেন। এতে মামুনুর ও আতিকুরসহ অজ্ঞাতনামা আরও কজনকে আসামি করা হয়।
×