ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

 সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। বর্তমান সরকার জনগণের মাঝে এই উপলব্ধি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যে, সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং কোন অপরাধীই অপরাধ করে পার পাবে না। সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধনী, গরিব নির্বিশেষে সকলের জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরও বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে যেমন বহুমাত্রিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি প্রযুক্তি ব্যবহার করেই অপরাধীদের আইনের জালে ধরে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার সুনিশ্চিত করা আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সংসদ নেতা বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ’৭৫ পরবর্তী সময়ে এ দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যেসব খুনী বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদের ফিরিয়ে আনার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকারী দলের শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকারের উদ্যোগ ও গবেষণার ফলে মৌসুমি তরিতরকারি ও শাক-সবজি সারা বছর উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এসব তরিতরকারি প্রক্রিয়াজাত করার জন্যও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারজাত করা কিংবা রফতানি করার সুযোগ পান। বেসরকারী উদ্যোগে তরিতরকারি রফতানি করা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামীতে এই প্রক্রিয়ার আরও আধুনিকায়ন করা হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারী ও বেসরকারীভাবে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকের পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও বাজারজাত করার পদক্ষেপ বিদ্যমান রয়েছে। যাতে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে। পুরনো সমবায় আইনকে যুগোপযোগী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘বাউল ঐতিহ্য যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়’ আইসিটি মামলায় টাঙ্গাইলের বাউল শরিয়ত বয়াতির গ্রেফতার সংক্রান্ত জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাউল শিল্পীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে বাউল গানের তো কোন দোষ নেই। বাউল গানে সম্পৃক্ত কেউ যদি কোন অপরাধে সম্পৃক্ত হন- তাহলেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইন অনুযায়ীই তার অপরাধের বিচার হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নকর্তা কী এমন কোন গ্যারান্টি দিতে পারবেন- বাউল গান করছেন বলেই ওই শিল্পী কোন অপরাধে জড়িত নন। নিশ্চয়ই তিনি এমন কোন অপরাধ করেছেন, যার জন্য তার বিরুদ্ধে এমন আইনী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন সরকার বাউল গানকে বিশ্বঐতিহ্য করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। তাই অনুরোধ করব, বাউল গানে সম্পৃক্তরা যেন এমন কোন কাজ না করেন, যাতে বিশ্বঐতিহ্য বাউল গান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এর আগে রাজবাড়ীর পাংশার বাউল সম্প্রদায়ের চুল কেটে দেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকদের মতো এখনও যদি চুল কেটে দেয়ার মতো কোন অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সরকার সেটা দেখবে। কারণ অহেতুক চুলকাটা বা বাউলদের প্রতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি গ্রহণযোগ্য নয়। কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের বাউল সম্প্রদায়ের কল্যাণে তাঁর সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পঁচাত্তরের পর সামরিক শাসকদের যারাই ক্ষমতায় এসেছে তাদের মধ্যেই এমন প্রবণতা দেখা গেছে। ক্ষমতায় এসে প্রথমেই তারা চারপাশটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে শুরু করেন, অর্থাৎ সুইপারের দায়িত্ব তারাই নিয়ে নেন। যারা ক্ষমতায় আসেন, তাদের কেউ টিশার্ট পড়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন, কৃচ্ছ্র সাধনের কথা বলেন, কেউ সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাওয়া শুরু করেন। পরে দেখা যায় তারাই সবচেয়ে দামী গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ান, প্যারিস থেকে স্যুট নিয়ে আসেন, শিফন শাড়ি নিয়ে আসেন। মানুষের চুলকাটাসহ এসব কাজগুলো তারাই করেছেন। অবশ্য তাদের এমন উদ্যোগ বেশি দিন টেকে না। ছয় মাস থাকে, তারপরই দেখা যায় তারা নিজেদের আসল রূপকে প্রকাশ করে ফেলেন। সরকারের অন্যতম সাফল্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আইনশৃঙ্খলায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। বর্তমান সময়ে মাদক সমস্যা সমাজের একটি বিষফোঁড়া। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। মাদক সংক্রান্ত মামলাসমূহের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। মাদকের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও বর্তমানে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সংসদ নেতা জানান, সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের লক্ষ্যে ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গঠন করা হয়েছে, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধসমূহের যে দ্রুত বিচার সম্পন্ন হচ্ছে তার প্রমাণ চাঞ্চল্যকর ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা। মাত্র ৬২ কার্যদিবসে এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। মুনাফাখোর ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে সরকার দলীয় অপর সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট। অসৎ মুনাফাখোর কতিপয় ব্যবসায়ী মাঝে মধ্যে নিত্য পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন এবং অধিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করে থাকে। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, আমাদের সরকার এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। এ ধরনের কর্মকান্ডে লিপ্ত কাউকে শনাক্ত করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বাজারমূল্যে নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য খঃ মমতা হেনা লাভলীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু ঝুঁকি ইনডেক্সে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অনাবৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। দেশজ উৎপাদন উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হচ্ছে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। কৃষি অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় সমৃদ্ধ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস কৃষি। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কৃষি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আবাদি জমির ক্রমহ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত এবং বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলছে।
×