ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবিতে টানা অনশনে ১৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

ঢাবিতে টানা অনশনে ১৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনের তৃতীয় দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ১৩ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে জগন্নাথ হল সংসদের নেতারা ছাড়াও আছেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকতও। এদিকে সরস্বতী পূজার কারণে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শনিবারও সংহতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা। দাবি আদায়ে দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ। নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট। প্রতিবাদ হয়েছে ঢাকার বাইরেও। সরস্বতী পূজার দিন আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ অনশনে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এছাড়া অনশনে যোগ দিয়েছেন ঢাবির হল ছাত্র সংসদ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। শনিবার বেলা ১২টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী অভিদাস প্রিতমকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। বাকিদের অনশনস্থলেই স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। টানা অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা হলেন জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস, জিএস কাজল দাস, সমাজসেবা সম্পাদক প্রদীপ দাস, বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক অর্ণব হোড়, বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অপূর্ব চক্রবর্তী, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অর্ক সাহা, জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী দীপ্ত সাহা, জয়ন্ত বণিক, সবুজ কুমার, সুকেশ দেবনাথ, ভবতোষ চন্দ্র রায় ও ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, মহসিন হলের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রবি। সকাল থেকে সংহতি জানাতে এসেছেন জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক গোবিন্দ ম-ল, গণিত বিভাগের শিক্ষক নেপাল চন্দ্র রায়, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. মুকুল কুমার বাড়ৈই, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন প্রমুখ। সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণের দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশন একগুয়েমি করছে। সরস্বতী পূজার দিন নির্বাচন হতে পারে না। ইতোমধ্যে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছি, সরস্বতী পূজার দিনে সিটি নির্বাচনের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও গণঅবস্থান কর্মসূচী পালন করব। তিনি জানিয়েছেন, ২২ জানুয়ারি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ২৭ জানুয়ারি গণঅনশন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০ তারিখে কোন নির্বাচন মেনে নেয়া হবে না, প্রতিরোধ করা হবে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির দায় ইসিকেই নিতে হবে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ধর্মীয় অনুভূতি ক্ষুণœকারী বক্তব্য প্রদানের জন্যে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন সচিবকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ রতে হবে। ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিনে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আপামর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইতোমধ্যে মেনে নেয়নি এবং মানবে না। অনশনের তৃতীয় দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), প্রতিটি হল ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ, কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অনশনকারীদের শিক্ষার্থীতের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করেছেন। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে তারাও বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ভরসার প্রতীক। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেন। আশা করি তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচী চলবে। অনশনে আছেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। তিনি বলছিলেন, ইসির সিদ্ধান্ত সাম্প্রদায়িক। এটা কোনভাবেই বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নয়। উৎসব সকল সম্প্রদায়ের। দাবি একটাই। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন এবং ভবিষ্যতেও যাতে কোন দিন এমন কাজ ইসি না করে তার কথা দিতে হবে। সম্প্রীতি বাংলাদেশ এদিকে নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। এ দাবিতে ৫১ জন নাগরিকের স্বাক্ষর সংবলিত একটি যুক্ত বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সদস্য সচিব ডাঃ মামুন আল মাহতাব সপ্নীল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ওই দিনই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা। বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কারণে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর নজির আছে। সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছে। বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে রাজনৈতিক দল, প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোও নমনীয়। কাজেই নির্বাচনের তারিখ পুনঃনির্ধারণ করলে কোন রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেবে না। আমরা আশা করব, এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং সরস্বতী পূজা যেন ভিন্ন ভিন্ন দিনে অনুষ্ঠিত হয় সেই ব্যাপারটি বিবেচনা করবে। তারা বলেছেন, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়ে সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। বাঙালীর শত সহস্র বছরের চিরায়ত সংস্কৃতি, জাতির পিতার ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের প্রতিও সম্প্রীতি বাংলাদেশ গভীর শ্রদ্ধা রাখে। বিবৃতিকে সাক্ষর করেছেন শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীর চৌধুরী, অধ্যাপক আঃ মান্নান, শুদ্ধানন্দ মহাথেরো, আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, মাহফুজা খানম, ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. মোহাম্মদ সামাদ, সাংসদ শফিকুর রহমান, বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ড. আতাউর রহমান, অধ্যাপক কামরুল হাসান খান, রামেন্দু মজুমদার, সাংসদ অ্যারোমা দত্ত, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক প্রণব সাহা, আলি হাবিব, ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারী, ড. মিল্টন বিশ^াস, রেজা সেলিম, অধ্যাপক ডাঃ উত্তম বড়–য়া প্রমুখ। হিন্দু মহাজোট এদিকে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহাজোট এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে। সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায় বলেন, সরস্বতী পূজা এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একই সঙ্গে একই দিনে হতে পারে না। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- ডাঃ এম কে রায়, উত্তম কুমার দাস, ডাঃ সোনালী, সুভাষ চন্দ্র সাহা, বিমল কৃষ্ণ শীল, তাপস কুমার বিশ্বাসসহ জাতীয় ছাত্র মহাজোট, যুব মহাজোট ও মহিলা মহাজোটের নেতারা। সরস্বতী পূজার মধ্যে ভোটগ্রহণে সিদ্ধান্ত থেকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সরে না আসায় নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সিপিবির সম্পাদক ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স স্বাক্ষরিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ফ্যাক্সযোগে পাঠানো এক চিঠিতে দলটির এ অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে- আমরা অবিলম্বে ৩০ জানুয়ারি তারিখ পরিবর্তন করে নির্বাচনে নতুন তারিখ নির্ধারণের অনুরোধ করছি। সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ পেছানোর দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদ বরিশাল জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে এ মানববন্ধন পালন করা হয়। মানববন্ধনে, ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটির নির্বাচন-বাংলাদেশের মৌলবাদী আচরণ, ‘সুস্থ মানুষ সুস্থ জ্ঞানে-ভোট রাখে না পূজার দিনে, ‘সরস্বতীর পূজার দিন নির্বাচন কেন-ইসি তুমি জবাব দাও, ‘পূজার দিন ভোট পূজার দিন পরীক্ষা-আমরা মেনে নেব না, ‘মা সরস্বতীর হাঁসে চড়ে নির্বাচন যাবে উড়ে’ লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন তারা। মহানগর ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি শুভ সাহার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ংকর পাল, অদিতি দাস, সুমন কুমার দাস ও জয়ন্ত আচার্য। তাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ মানববন্ধনে অংশ নেন জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি একে আজাদ ও গণফোরাম জেলা কমিটির সভাপতি হিরণ কুমার দাস মিঠু। পূজার দিনে ভোটেরপ্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন ॥ জাবি সংবাদদাতা জানান, পূজার দিনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের তারিখ নির্ধারণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে এ কর্মসূচী পালন করেন তারা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানান। মানববন্ধনে জাবি সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সাবেক সভাপতি রবিন কর্মকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েও মৌলিক অধিকার খর্ব করার আয়োজন করছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন অতিসত্ত্বর নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনা না করলে আমরা কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো।’ জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক ম-ল বলেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এমন কর্মকা- করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। পূজার দিন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন আমাদের রক্তার্জিত সংবিধানের বুকে ছুরিকাঘাত করেছে।’ প্রণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পূজার দিনে ভোটের আয়োজন করলে তা হবে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার অপচেষ্টা। ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত হেনে নির্বাচন কমিশন দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে না।’ এ সময় শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
×