ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে যেসব কারণে

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে যেসব কারণে

অনলাইন ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে সম্প্রতি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে অন্তত ১৭টির কার্যক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এসব অ্যান্টিবায়োটিক মূলত মূত্রনালির সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং জখম সারানোসহ নানা ধরণের সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। এর ফলে এখন কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে অন্য ওষুধও। গবেষকেরা বলছেন, এর ফলে শিশু এবং হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। কী আছে গবেষণায়? আইইডিসিআরের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. জাকির হোসাইন হাবিব দেশের ৯টি মেডিকেল কলেজের রোগীদের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি দেখেছেন, দেশে গত কয়েক দশকের মধ্যে অন্তত ১৭টি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। "অর্থাৎ এগুলো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট হয়ে গেছে, যারা মানে হলো অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধী হয়ে ওঠা। অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় এমন অবস্থায় রোগীদের ওপর রিজার্ভ অর্থাৎ প্রচলিত নয় এমন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ বেড়ে গেছে।" ডা. হাবিব জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গেছে, জীবাণুর মধ্যে ক্ষত সংক্রমণ জীবাণু প্রায় ৫৭ শতাংশ সক্রিয় ছিল, অর্থাৎ এগুলো প্রচলিত ওষুধ দিয়ে সারানো সম্ভব হচ্ছিল না। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট হবার কারণ কী? স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা নেই। কিছু নির্দেশনা থাকলেও সেগুলো বিক্রেতা বা ক্রেতা কেউই মানে না। তিনি জানিয়েছেন, কয়েকটি কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট হয়ে থাকে, এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো--- • বিনা প্রেসক্রিপশনে ঘনঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে • পুরো কোর্স শেষ না করে মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করলে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না • প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হলে • ভাইরাসজনিত কোন অসুখে, অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে এমনি সেরে যেত, সেখানে বিশেষ করে শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দিলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ? আইইডিসিআরের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিব জানিয়েছেন পরিস্থিতি যথেষ্ট ভয়াবহ। "কারণ বাংলাদেশে বহু মানুষ বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসীতে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করে। তাদের মধ্যে ধারণাই নাই যে এর ফলে তার শরীর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট হয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তীতে কোন সংক্রমণ হলে সেটা আর কোন ওষুধে হয়তো সারবে না।" এর ফলে যে অ্যান্টিবায়োটিককে মনে করা হতো যে কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে অব্যর্থ, তা এখন অনেক ক্ষেত্রে কাজই করছে না। অধ্যাপক তাহমিনা বলছেন, আরেকটি ঝুঁকি হচ্ছে, মানুষের সঙ্গে-সঙ্গে প্রাণীর ওপরেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়, যা কখনোই পুরোপুরি বিলীন হয় না, মাটিতে রয়ে যায়। এর ফলে আমরা যা খাই, সবজি, ফল বা মাছ মাংস এর মধ্যে থেকে যাওয়া অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট হয়ে থাকে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাচ্ছি তার অনেকগুলো থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন- • মুরগীর মাংস • গরু বা খাসীর মাংস • দুধ এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার • মাছেও হরমোন ব্যবহার করা হয়, সেখানেও এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয় রোগ প্রতিরোধী করার জন্য • শাক-সবজি যদিও এতে সরাসরি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়না। তবে কীটনাশক দেওয়া হয়। কারা বেশি বেশি ঝুঁকিতে? চিকিৎসক এবং গবেষকেরা বলছেন, এর ফলে শিশু এবং হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। সেজন্য সরকারকে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন তারা। ঢাকার আহসানিয়া মিশন জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাসুমা নাওয়ার বলছেন, "শিশুদের ক্ষেত্রে প্রথমত পরিবার থেকে যদি নিশ্চিত করা যায় যে বিনা প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না, তাহলে এ সমস্যার একটি সমাধান হতে পারে। দ্বিতীয়ত ডোজ শেষ করতে হবে, মানে অসুখ একটু প্রশমন হলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।" "বিনা প্রয়োজনে বা অল্প অসুখে ঘাবড়ে গিয়ে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের স্বল্প শিক্ষিত মানুষেরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, কারণ তারা জানেও না বিষয়টির ভয়াবহতা।" যে কারণে ডা. মাসুমা মনে করেন এক্ষেত্রে সরকারকেই মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×