ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগের পর যুবলীগ ধরেছি ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ছাত্রলীগের পর যুবলীগ ধরেছি ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোন নালিশ শুনতে চাই না। ছাত্রলীগের পর যুবলীগ ধরেছি। সমাজের অসঙ্গতি এখন দূর করব। একে একে এসব ধরতে হবে। জানি কঠিন কাজ কিন্তু আমি করব।’ বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগ নেতারা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে সরিয়ে দেয়ার পর দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবার গণভবনে যান ছাত্রলীগের ২৩ নেতা। ছাত্রলীগ নেতাদের সততা, আদর্শ নিয়ে সংযমের সঙ্গে চলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ইমেজ বাড়াতে হবে। নীতি আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। সবার মাঝে আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। ছাত্রদলের মতো আচরণ না করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের পর যুবলীগকে ধরেছি। সমাজের সব অসঙ্গতি দূর করব। অপরাধ, অনাচার রোধে যা যা করার করা হবে। যাকে যাকে ধরা দরকার, তাদের ধরা হবে। তিনি বলেন, জানি, কাজটা কঠিন, বাধা আসবেই, কিন্তু জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফেরাতে সরকার তা করবে। অনিয়মকারীদের কাউকে ছাড়া হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাসিনো নিয়ে মারামারি, খুনাখুনী হবে এগুলো টলারেট করব না। আমি কষ্ট করে সব কিছু করছি দেশের জন্য, দেশের উন্নয়ন করছি, এর ওপর কালিমা আসুক সেটা আমি কোনভাবে হতে দেব না। আমি কাউকেই ছাড়ব না। ক্যাসিনোতে যেসব বিদেশী কাজ করছে তাদের যারা এনেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাসিনোর সঙ্গে যারা জড়িত বিদেশী, তারা আসল কিভাবে, তারা ভিসা পেল কিভাবে, তাদের বেতন দেয়া হয় কিভাবে, ক্রেডিট কার্ডে না ক্যাশে। কে ভিসা দিয়ে আনল সমস্ত কিছু তদন্ত করা হচ্ছে। সবই ধরা হবে। ছাত্রলীগ নেতাদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছি। বিশ্বাস ও আস্থার মর্যাদা রেখে কাজ করবে। ক্ষমতা প্রদর্শনের রাজনীতি ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র নেতাদের বিনয়ী থাকতে হবে। যত ওপরে উঠবে তত বিনয়ী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে চলতে হবে, প্রোটোকল নিয়ে চলতে হবে, ক্ষমতার সঙ্গে চলতে হবে, এগুলো করা যাবে না। এগুলো করলে সাময়িকভাবে কিছু টাকা পয়সা হবে কিন্তু হারিয়ে যাবে। সেটা হবে দুঃখজনক। এটা আমি তোমাদের কাছ থেকে চাই না। শেখ হাসিনা বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পেলেই নিয়ে নিতে হবে এই ধারণা নিয়ে রাজনীতি করলে কিছু পাওয়া যায় না। যখন যেভাবে চলার সেই শিক্ষা নিয়ে চলতে হবে। সেই শিক্ষা বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলাম। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজের জীবনে ত্যাগ স্বীকার করার কথা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কম্প্রোমাইজ করতে বলেছিল, তখন বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে নেই। নিজের জীবনে রাজনৈতিক প্রতিকূলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যত প্রতিকূল অবস্থা আমার জীবনে মোকাবেলা করতে হয়েছে, বাংলাদেশের আর কারও হয়নি। আমাকে অনেক অফার দেয়া হয়েছে। জীবনে কখনও কম্প্রোমাইজ করিনি। ছাত্রলীগকে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে। সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে নিতে হবে। যাতে সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়। তিনি বলেন, নীতি আদর্শ, সততা, সংযম নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। যদি সেটা না কর, একটা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি না করলে ভবিষ্যতে কার কাছে দেশ রেখে যাব। তোমাদের কাজে মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে আসতে হবে, আগামী দিনের নেতৃত্বে। মানুষ তাহলে সাদরে গ্রহণ করবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমি চাই, একটা আদর্শ নিয়ে চল, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাও। ২০৪১ পর্যন্ত তোমরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্ররা লেখাপড়া করতে এখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) আসে। তাদের সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র নেতাদের বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবন, কারাগারের রোজনামচা, বঙ্গবন্ধুর সিক্রেট ডক্যুমেন্ট পড়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখান থেকে ভাল রাজনৈতিক শিক্ষা পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির ছাত্র সংগঠন ২০০১ সালের পরে ক্ষমতায় এসে যা করেছে, সেই রকম আচারণ করা যাবে না। তিনি বলেন, সত্যিকারের নীতি আদর্শ রাজনীতি করলে সংগঠন একটা ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। তাহলে মানুষের আস্থা বিশ্বাস ছাত্রলীগের ওপর অনেক বাড়বে। এটা না করে যদি ওদের (বিএনপি) আচারণ করা হয় তাহলে আমাদের অবস্থাও তাদের মতো হবে। ছাত্রলীগের প্রতি যদি মানুষে আস্থা-বিশ্বাস না থাকে তাহলে বিএনপি, ছাত্রদল যা করে গেছে সেই একই ধরনের কাজ হবে। কোন কাজই যেন সরকারের সুনাম নষ্ট না করে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। ক্ষমতায় গেলে সাধারণ মানুষ বিরক্ত হলে কষ্টার্জিত সফলতা, সরকার পরিচালনার সুনাম নষ্ট হবে। সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয় এমন কোন কাজও করা যাবে না। সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের শ্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খেটে দেশকে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি, এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। যারা বলেছিল এদেশ বটমলেস বাস্কেট হবে তারাও স্বীকার করেছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। ছাত্রলীগ নেতারা গণভবনে গিয়ে তাঁর হাতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান। শেখ হাসিনা বিভিন্ন সাংগঠনিক নির্দেশনা দেন ছাত্রলীগ নেতাদের। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
×