ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টি২০তেও আফগানদের কাছে হারল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৫০, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

টি২০তেও আফগানদের কাছে হারল  বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ আফগান পরীক্ষায় এবারও ফেল মার্ক পেল টাইগাররা। একমাত্র টেস্ট হারের পর ত্রিদেশীয় সিরিজে টি২০তেও আফগানিস্তানের কাছে হারল বাংলাদেশ। মোহাম্মদ নবীর (৮৪*) অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর মুজিব উর রহমানের (৪/১৫) ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২৫ রানের হার হলো। বাংলাদেশকে হারিয়ে টানা দুই ম্যাচ জিতে নিল আফগানিস্তান। ম্যাচের প্রথম বলেই যে গতির ঝড় তুলে রহমানুল্লাহ গুরবাজের উইকেট উপড়ে ফেলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সেখানে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠে। দিনটিতে যে সাইফউদ্দিন কিছু করবেন, তা তখনই বোঝা হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ৪ উইকেট শিকার করে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংও করেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু মোহাম্মদ নবীর (৫৪ বলে অপরাজিত ৮৪) ব্যাটিং তান্ডবে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসে যেন চিড় ধরতে শুরু করে। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের লড়াইটিই ঢাকা পর্বে সিরিজের লীগ পর্বের শেষ ম্যাচ ছিল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আফগানিস্তান আগে ব্যাটিংও করে। নবীর অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৪ রান করে আফগানিস্তান। তখনই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি হয়ে যায়। সেই চাপে তছনছ হয়ে যায় বাংলাদেশ। ১৯.৫ ওভারে ১৩৯ রান করে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সর্বোচ্চ ৪৪ রান করতে পারেন। মুজিব এমনই ঘূর্ণি জাদু দেখান, তাতে হাওয়া হয়ে যায় বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট হারের পর টি২০ ম্যাচে চাপে ছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। নিজেদের সেরা প্রমাণ করতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না। কিন্তু ব্যাটিং লাইনআপ দেখেই যেন গ-গোল মনে হতে শুরু করে দেয়। লিটন কুমার দাসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয় মুশফিকুর রহীমকে! টি২০ ক্যারিয়ারে প্রথমবার ওপেনিংয়ে নামেন মুশফিক। দুইজনই ফেল মারেন। সাকিব একটু ভরসা হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনিও খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। দলের ৩১ রানের সময় আউট হয়ে যান সাকিব (১৫)। রশিদ খান বোলিংই আসেননি। তার আগেই যা বিপদে পড়ার পরে যায় বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার ব্যাট হাতে নামেন। আর মুজিব উর রহমানের স্পিন বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ৩২ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তিনটিই শিকার করে নেন মুজিব। এই বিপত্তি থেকে বাঁচতে হলে একটি বড় জুটি হওয়া দরকার। সেই জুটি গড়েনও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমান রুম্মন। দুইজন মিলে দলের ভরসা হয়ে ওঠেন। শুরুর ধাক্কা সামলান। দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটি গড়ে ৬০ রানেও চলে যাচ্ছিলেন। দলকেও ১০০ রানের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গুলবাদিনের একটি বল বুঝতে না পেরে ক্যাচ আউট হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ (৪৪)। বিপদের সময় সাব্বিরের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়ে দলের ৯০ রানের সময় সাজঘরে ফিরেন। রান পাচ্ছিলেন না। অবশেষে রান পান। দলকেও বিপদমুক্ত করে একটা সুবিধাজনক অবস্থানে রেখে যান। মাহমুদুল্লাহ যখন আউট হন, তখন বাংলাদেশের জিততে ৪০ বলে ৭৫ রান লাগে। মাহমুদুল্লাহ আউটের পর সাব্বিরও টিকতে পারেননি। মুজিবের ঘূর্ণিতে আউট হয়ে যান সাব্বির (২৪)। সাব্বিরকে আউট করে মুজিবও ৪ উইকেট শিকার করে নেন। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। আফিফকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে গিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দুইজন এবার এক হন। আফিফ কী আর প্রতিদিন ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে জেতাতে পারবেন? পারেননি এবার। ১৬ রান করে নজিবুল্লাহর দুর্দান্ত এক ক্যাচে মাঠ ছাড়েন আফিফ। দলের সব আশা শেষও হয়ে যায়। সাইফউদ্দিন (২) আসেন আর সাজঘরে ফেরেন। মুস্তাফিজ ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ ওভারে ছক্কা হাঁকান। যেটি বাংলাদেশের ইনিংসেরই একমাত্র ছক্কা। টি২০ খেলতে নেমে ব্যাটসম্যানরা যেখানে ছক্কা হাঁকাতে পারেননি, সেখানে মুস্তাফিজ একজন বোলার হয়েও ছক্কা হাঁকান। কিন্তু ১ বল বাকি থাকতে মুস্তাফিজও (১৫) আউট হয়ে যান। বাংলাদেশও অলআউট হয়ে যায়। সাইফউদ্দিন দুর্দান্ত বোলিং করলেন। রানের খাতা খোলার আগেই গুরবাজকে আউট করার পর নজিব তারাকাইকেও (১১) সাজঘরের পথ দেখান। মাঝপথে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই সাকিব আল হাসান যে হযরতুল্লাহ জাজাইকে (১) আউট করার সঙ্গে মেডেন ওভারও করেন, তাতে শুরুতেই আফগানিস্তানকে বিপদে ফেলে দেয় বাংলাদেশ। ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়েই খাদের কিনারায় পড়ে যায় আফগানিস্তান। অবশ্য তখনও বিপদ কাটিয়ে ওঠার সুযোগ আফগানিস্তানের কাছে থাকে। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ঝড়ো ইনিংস খেলা নজিবুল্লাহ জাদরান যে তখনও আউট হননি। উইকেটে থাকেন। আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবীও থাকেন। আর তাই বিপদমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু সাকিব কী আর সেই সুযোগ দেবেন? দেননি। নিজের তৃতীয় ওভারে বোলিং করতে এসে এবার ঘূর্ণি ফাঁদে ফেলেন নজিবুল্লাহ জাদরানকে (৫)। জাদরান হয়ত ভেবেছিলেন, জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচের মতই খেলবেন। তাইতো সাকিবের ছোড়া ঘূর্ণি বলটিতে উড়িয়ে মারতে চেয়েছেন। আউটও হয়েছেন। আফগানদের ম্যাচ জয়ের স্বপ্নও যেন ফিকে হয়ে যেতে শুরু করে দেয়। ৪০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তান মহা বিপদে পড়ে যায়। আফগানিস্তান ব্যাটসম্যানদের ওপর কী চাপটাই না তৈরি করেন সাইফউদ্দিন, সাকিব; নবম ওভারে গিয়ে ৫০ রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়। এই চাপে আফগানদের ছন্নছাড়া হয়ে পড়ার কথা। কিন্তু আসগর আফগান ও মোহাম্মদ নবী মিলে হাল ধরেন। বিপদে পড়া আফগানিস্তানকে রক্ষার পথ দেখান। দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দলের ৯৩ রানে একবার ৩১ রানে থাকা আসগর ‘নতুন জীবন’ পেয়েও খুব বেশিদূর আর এগিয়ে যেতে পারেননি। সাইফউদ্দিন আবার বল হাতে নিয়ে আসগরকে (৪০) আউট করে দেন। নবীর সঙ্গে গুলবাদিন ৭৯ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ফিরেন। গুলবাদিন নাইবকেও আউট করে দিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৪ উইকেট শিকার করেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু সাইফউদ্দিনের এ ঝলকানি বাকিরা দেখাতে পারেননি। আর তাতে করে আফগানিস্তানও শেষপর্যন্ত বড় স্কোর গড়ে ফেলে। মোহাম্মদ নবী যে ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন, শেষপর্যন্ত তা বজায় রাখেন। সৌম্য সরকারের এক ওভারেই তিনি ২১ রান নিয়ে ফেলেন। দলের রানও দ্রুত বাড়তে থাকে। নবীও হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। একটা সময়তো মনে হয়েছে প্রথম সেঞ্চুরি করেই ফেলবেন। কিন্তু তা করতে পারেননি। তবে ৫৪ বলে ৩ চার ও ৭ ছক্কায় যে অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস উপহার দেন, তাতেই আফগানিস্তান ১৬৪ রানে চলে যায়। শেষ ১০ ওভারে ১০৪ রান যোগ করে আফগানিস্তান। নবীর ঝড়ো ব্যাটিংয়েই তা সম্ভব হয়। তাতে আফগানিস্তান যে স্কোর গড়ে তাতেই কাজ হয়ে যায়। এরপর মুজিব উর রহমানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে আফগানিস্তানের কাছে আবারও হারে বাংলাদেশ।
×