ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরের জঙ্গী রবিনের লাশও ঘৃণায় গ্রহণ করল না পরিবার

প্রকাশিত: ০২:৫১, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

শেরপুরের জঙ্গী রবিনের লাশও ঘৃণায় গ্রহণ করল না পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ রাজধানী ঢাকার নাখালপাড়ায় জঙ্গী আস্তানায় নিহত ৩ জনের একজন শেরপুরের নকলা উপজেলার কুর্শাবাদাগৈড় গ্রামের মৃত ফজর আলীর পুত্র রবিন মিয়া (১৭)। রবিবার রবিনের পরিবারের পক্ষে বড় ভাই ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা ও ভগ্নিপতি আল আমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। তবে রবিনের জঙ্গী কানেকশনে বিব্রত হয়ে ও ঘৃণায় তার লাশ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েই সোমবার তারা এলাকায় ফিরে এসেছেন। এদিকে ওই জঙ্গি আস্তানায় নিহত ৩ জনের একজন রবিন কি-না তা নিয়ে সংশয় শেষ হওয়ায় সোমবার তার জঙ্গি কানেকশনের বিষয়ে এলাকায় আফসোসের পাশাপাশি বিরাজ করছে উদ্বেগ। সোমবার দুপুরে নকলা পৌর শহরের কুর্শাবাদাগৈড় এলাকায় অবস্থিত রবিনদের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার মা মালেকা খাতুন (৫৫) ঘরের বারান্দায় বসে কাঁদছেন। রবিনের বড়ভাই গোলাম মোস্তফা ও তার স্ত্রী লাকি বেগমও শোকে-লজ্জায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাড়িতে ভিড় করেছেন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ উৎসুক লোকজনও। ওই সময় গোলাম মোস্তফা জানান, তারা ৩ ভাই ও এক বোন। রবিন ছিল সবার ছোট। সে স্থানীয় সাহারিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। প্রায় ১৩ বছর আগে তাদের বাবা মারা যান। ২০১৩ সালে রবিন পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। এরপর থেকে সে তার (মোস্তফার) চালের দোকানে কাজে যোগান দিতো। এক বছর ধরে সে ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ে। কাজের একটু ফাঁক পেলেই মোবাইল ফোন সেট নিয়ে পড়ে থাকত। ওই অবস্থায় ৭ জানুয়ারি হঠাৎ করে সে (রবিন) বাসা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনায় ২০ জানুয়ারি নকলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরই মধ্যে ১২ জানুয়ারি ঢাকার পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবি ভিলার পঞ্চম তলায় র্যাবের অভিযানে নিহত হয় ৩ জঙ্গী। তাদের মধ্যে কুমিল্লার মেজবা ও চট্টগ্রামের নাফিজের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও পরিচয় না পাওয়ায় তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা ছবি শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত অজ্ঞাতনামা যুবকের ছবি দেখে রবিনের সাদৃশ্য পায় তার পরিবারের লোকজন। গোলাম মোস্তফা একই আস্তানায় নিহত নাফিজের ছবি দেখে তাকেও শনাক্ত করে জানান, রবিন ৩ মাস আগে নাফিজকে তাদের বাড়িতে গিয়েছিল এবং ওই সময় তাদের বাড়িতে এক রাত ছিল। নাফিজের পরিচয় বলেছিল তার বাসা পুরান ঢাকায়। ৬ মাস আগে রবিন কাউকে না বলে সম্ভবত ওই বাসায় গিয়েছিল। তার মতে, রবিন উগ্রবাদী ফেসবুক আইডির মাধ্যমে বন্ধুদের প্ররোচনায় পরে স্বাভাবিক জীবন-যাপন ছেড়ে হয়তো জঙ্গী কার্যক্রমে যোগ দিয়েছিল। এজন্য তারা অনুতপ্ত। তার লাশটি জঙ্গীর হওয়ার কারণে তা গ্রহণ করিনি আমরা। রবিনের মা মালেকা বেগম বলেন, নিখোঁজের দিন দুপুরে তার ছোটছেলে রবিন ভাত খেয়ে দোকানের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি দাবি করেন, রবিন কোনো খারাপ কাজ করতে পারে না। দিনের বেশির ভাগ সময়ই রবিন তার বড় ভাই গোলাম মোস্তফার চালের দোকানে কাজ করত। কাজের চাপে অনেক সময় ভাত খাওয়ারও সময় পেত না সে। রবিনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন, আব্দুস সামাদসহ বেশ কয়েকজন জানান, রবিনের জঙ্গী কানেকশনের খবরে এলাকাবাসী বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) রফিকুল হাসান গণি বলেন, জঙ্গী আস্তানায় নিহত যুবক রবিনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ঘৃণায় তার পরিবার লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তা এলাকায় নিয়ে আসা হয়নি। তবে পরিবারটি রবিনের কৃতকর্মের কারণে অনুতপ্ত।
×