ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবিতে দুই মাসে ১০ সাংবাদিকের ওপর হামলা

প্রকাশিত: ০২:৫০, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

ঢাবিতে দুই মাসে ১০ সাংবাদিকের ওপর হামলা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলছে। গত দুই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত ১০ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও কোনো ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। অভিযুক্ত ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও সংগঠন থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একটি প্রতিকূল পরিবেশে সাংবাদিকদের কাজ করতে হচ্ছে। এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান সমিতির সভাপতি আসিফ ত্বাসীন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নয়ন। সমিতির সদস্যরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো একটি ঘটনারও বিচার করেনি। কোনো কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি গঠনের নামে বিচারপ্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার কৌশল নেয়া হচ্ছে। ছাত্রলীগও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং এর আগে একাধিক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বহিষ্কৃতদের নতুন করে পদায়ন করা হয়েছে। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রত্যাশিত কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি রাতে বকশিবাজার এলাকায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন রেডিও টুডের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক নাজমুল হুদা ও সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল জুবায়ের। এ সময় বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন আবদুল লতিফকে বেধড়ক মারধর করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ডেইলি স্টারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আশিক আবদুল্লাহ অপু ও আলোকিত বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মামুন তুষারের ওপর হামলা করা হয়। তাদের ধাক্কা দিয়ে ও মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত দেরি করে অফিসে আসার অভিযোগের তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি কবিরুল ইসলাম কাননের ওপর হামলা করেন সেকশন অফিসার মো. নিজাম উদ্দিন, মো. আহসানুল কবির ও রেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত পিএস শেখ মো. গিয়াস উদ্দিন। এ ঘটনার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ২৮ নবেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিডিনিউজটুয়েন্টিফোর ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার মাসুম বিল্লাহ ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের একজন নারী সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগের বিজয় একাত্তর হলের কিছু নেতা-কর্মী। গত ১২ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার স্টাফ রিপোর্টার সাইফ সুজন ও বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোরডটকমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক কবির আবরারের ওপর চড়াও হন দর্শন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ক্যাম্পাস রিপোর্টাররা জাতির সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থাপন করেন। তাদেরকে লাঞ্ছিত করা কোনভাবেই কামন্য নয়। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধ পরিপন্থী। আশা করি সামনে আর এ ধরনের অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটবে না।’ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, ছাত্রলীগের যারাই এ ধরনের অনাকাক্ষিত ঘটনার সাথে জড়িত আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনকি ব্যবস্থা নিয়েছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছি।
×