ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

ফিরে দেখা ২০১৭॥ মানবিক বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১ জানুয়ারি ২০১৮

ফিরে দেখা ২০১৭॥ মানবিক বাংলাদেশ

২০১৭তে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ স্থাপন করেছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ২৫ আগস্ট পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনে সেনাবাহিনী যে জাতিগত নির্মূল অভিযান শুরু করে তার ফলশ্রুতিতে জীবন বাঁচাতে মরিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী স্রোতের মতো প্রবেশ শুরু করে বাংলাদেশে। শতাব্দীর সেরা এই মানবিক বিপর্যয়ে বিপন্ন মানবতার দাবিতে সাড়া দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি বাংলাদেশ। নিজেদের হাজারো সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছে বিপন্ন মানবতার পাশে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃপ্তকণ্ঠে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ‘প্রয়োজন নিজেরা কম খেয়ে হলেও তাদের মুখে খাদ্য তুলে দেব।’ যদি নিকট অতীতে তাকাই তাহলে দেখব লাখ দেড়েক সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ায় জার্মানির মতো বিত্তশালী দেশেও চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেল তুমুল সমালোচিত। জার্মানির সঙ্গে তুলনা চলে না বাংলাদেশের। কিন্তু কেবল ২০১৭ আমরা আশ্রয় দিয়েছি প্রায় ৬ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা জাতি। বাংলাদেশের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিম-লে তাকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সারা বিশ্বে পরিচিত মাদার অব হিউম্যানিটি পরিচয়ে। এ কথা আজ নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ভবিষ্যতে সভ্যতার ইতিহাস রচনার সময় এক মানবিক রাষ্ট্রের উদাহরণ হিসেবে উঠে আসবে বাংলাদেশের নাম। ৭ মার্চের ভাষণ ও ইউনেস্কোর স্বীকৃতি একটি স্বীকৃতির ঘোষণা সারা জাতির প্রাণে আনন্দের ঢেউ তুলে ছড়িয়ে পড়ল এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে। ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো সদর দফতর প্যারিস থেকে ডিরেক্টর জেনারেল ইরিনা বোকোভা জানালেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ডের তালিকাভুক্ত হয়েছে। এটি এখন থেকে গণ্য হবে ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ বলে। সারা জাতি মেতে ওঠে আনন্দে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের এই স্বীকৃতিকে ২০১৭’র অর্জন তালিকায় উপরের দিকে রাখতে হবে দুটি কারণে। প্রথমত, এই ভাষণ জড়িত বাংলাদেশের জন্মকথার সঙ্গে। ৭ মার্চের সেই বিকেলে তার উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এর চূড়ান্ত পরিনতি ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। দ্বিতীয়ত, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকা-ের পর তাঁর নাম ইতিহাস থেকে মুছে দিতে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্রের জালে বিকৃত হয়েছে ইতিহাস। আজ ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি বলে বঙ্গবন্ধু মুছে যাওয়ার নয়। দেশ ছাড়িয়ে তিনি আজ বিশ্বের সম্পদ। এ যেন ইতিহাসের দায় শোধ কেউ তাকে ‘দাবায়ে’ রাখতে পারেনি। থেমিস ও এস কে সিনহা ২০১৭ পুরোটা জুড়ে আলোচনায় ছিল সুপ্রীমকোর্ট অব বাংলাদেশ। সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে ২০১৬’র ডিসেম্বরে স্থাপিত গ্রীক বিচারের দেবী থেমিসের বাংলাদেশী আদলে নির্মিত ভাস্কর্যটিকে ঘিরে সূত্রপাত বিতর্কের। ফেব্রুয়ারিতে হেফাজতে ইসলামের আমির আহমেদ শফি ভাস্কর্যটি সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অপসারণের দাবি জানান। জাতীয় ঈদগাহের বিপরীতে বলে অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোও একই দাবিতে সোচ্চার হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আগেই হাল ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১১ এপ্রিল বিশিষ্ট আলেমদের সঙ্গে এক সভায় তিনি তাদের ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেন। অনুরোধ করেন তার ওপর আস্থা রাখার। অবশেষে ২৫ মে রাত এগারোটা ত্রিরিশে ভাস্কর্যটি অপসারণ শুরু হয়। দ্বিতীয় অনাকাক্সিক্ষত বিতর্কের সূত্রপাত সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ঘিরে। এস কে সিনহা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ১৭ জানুয়ারি ২০১৫। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন আলোচনায় যা বাংলাদেশের অন্য কোন প্রধান বিচারপতির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। তাকে ঘিরে বড় ধরনের বিতর্কের সূত্রপাত দৈনিক জনকণ্ঠের মামলাটিকে কেন্দ্র করে। সাকা চৌধুরী ও মওদুদ আহমদ প্রসঙ্গও ছিল আলোচনায়। সর্বশেষ ষোড়শ সংশোধনীকে কেন্দ্র করে মামলার রায় ১ আগস্ট প্রকাশ পেলে মামলার কিছু পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে তিনি চলে আসেন বিতর্কের কেন্দ্রে। মূল মামলার সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক অযাচিত কিছু মন্তব্য তীব্র সমালোচনার স্বীকার হয় সরকারী দলনেতাদের। পরিস্থিতি আরও ঘোলা করে তিনি টানেন পাকিস্তানের উদাহরণ। অক্টোবর ২-এ ছুটির আবেদন করে ১৩ অক্টোবর রাতে দেশ ছাড়েন। দেশ ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে সাংবাদিকদের উদ্দেশে চিঠি ছুড়ে মেরে জন্ম দেন নতুন বিতর্কের। বিরোধী বিএনপির নেতৃত্বাধীন সুপ্রীমকোর্ট বার নেতৃবৃন্দ মেতে ওঠেন গুজব প্রচারে। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে দৃশ্যপটে আসেন রাষ্ট্রপতি এমএ হামিদ, তিনি আপীল বিভাগের মাননীয় বিচারপতিদের ডেকে এস কে সিনহার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের পক্ষে দলিলাদি উপস্থাপন করেন। সুপ্রীমকোর্ট এক নজিরবিহীন বিবৃতিতে জানায়, আপীল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এস কে সিনহার সঙ্গে বেঞ্চে না বসার। স্বভাবতই রুদ্ধ হয়ে যায় এস কে সিনহার ফেরার পথ। নবেম্বরের ৬ তারিখে তিনি সিঙ্গাপুরে পৌঁছেন, সেখানে থেকে প্রেরিত তার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির দফতরে পৌঁছে ১১ নবেম্বর। বাংলাদেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে ২১ জন প্রধান বিচারপতির মধ্যে তিনিই প্রথম যিনি মেয়াদপূর্তির আগে বিদায় নিলেন। তার এই বিদায়কে একজন প্রধান বিচারপতির জন্য কোনভাবেই সম্মানজনক বলা যায় না। এ জন্য মূল দায় তার নিজের ত্রুটি এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না। পদ্মা সেতু দৃশ্যমান বাস্তবতা পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন আজ বাংলাদেশের প্রাণের দাবি। শুরুতেই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়া এই প্রকল্পটি আজ দৃশ্যমান বাস্তবতা। ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নং পিলারের ওপর বসানো হয় প্রথম স্প্যানটি। সেতু কর্তৃপক্ষের মতে মোট কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ। পদ্মা সেতুর এই দৃশ্যমান্যতা ২০১৭’র একটি বড় অর্জন। পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে রক্ষণাবেক্ষণে দুর্বলতার কারণে সড়কগুলোর বেহাল দশাও ছিল আলোচনায়। জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সাফল্যের বছর প্রশাসনিক সাফল্যের পাশাপাশি জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় ২০১৭তে অর্জিত রাজনৈতিক সাফল্যের গুরুত্ব অনেক বেশি। সরকার সাফল্যের সঙ্গে পুরোজাতিকে জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছে। এটি নিঃসন্দেহে সরকারের একটি বড় অর্জন। বছরজুড়ে ঢাকা, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জে, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশব্যাপী একের পর এক জঙ্গী ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ধ্বংস করেছে জঙ্গী ঘাঁটি। ২৫ অক্টোবর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে বলা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক থেকে জিহাদ সম্পর্কিত বিষয় অপসারণ করতে। জঙ্গী তৎপরতার অভিযোগে নবেম্বর ৭-এ বন্ধ করা হয়েছে লেকহেড গ্রামার স্কুল। ২০১৭তে জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাফল্য অবশ্যই প্রশংসনীয় তবে জঙ্গীবাদের জড় নির্মূলে আমাদের যেতে হবে অনেক পথ। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বছর আগের বছরগুলোর মতো ২০১৭তে অনুষ্ঠিত প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে কম- বেশি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রশ্নপত্র ফাঁস। সরকারের সাফল্য যেন এখানে এসে থমকে গেছে। এ ছাড়াও বছরের শুরুতে আলোচনায় ছিল প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তকে ছাগল, ওড়না ইত্যাদি প্রসঙ্গে। অর্থনীতিতে সাফল্যের বছর সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার মুখে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ধরে রাখতে পেরেছে এটি নিঃসন্দেহে ২০১৭তে একটি বড় অর্জন। সবচেয়ে বড় চমক ছিল বাজেটের অঙ্ক। স্বাধীনতার পর এটি সবচেয়ে বড় বাজেট। বছরের শেষদিকে এসে কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে ব্যাংকিং খাত। আস্থার সঙ্কটে পড়ে নতুন অনুমোদনপ্রাপ্ত দুয়েকটি ব্যাংক, মূল্যবৃদ্ধিসহ কিছু বিষয় আলোচনায় ছিল। তবে সব মিলিয়ে এ বছরেও সার্বিক অর্থনীতির চিত্র আশাব্যঞ্জক। প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এ বছর অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল ‘চিকুনগুনিয়া’ জ্বর। মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ব্যধি আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনজীবনে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণে, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা আলোচনার জন্ম দিলেও সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। । সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকার ছিল কঠোর অবস্থানে। ২০১৭’র রাজনীতির মাঠ ছিল সরকারী দলের নিয়ন্ত্রণে। প্রতিপক্ষ না থাকায় সরকারী দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল হয়েছে সংবাদ শিরোনাম, সংসদ সচল রাখতে সরকার ছিল আন্তরিক। অগ্নিপরীক্ষায় সফলভাবে উৎরে গেছে নির্বাচন কমিশন। কুমিল্লা এবং রংপুরে দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। ৩০ নবেম্বর শুরু হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। টাকার অঙ্কে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে পারমাণবিক ক্লাবে। পাশাপাশি এগিয়েছে কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজও। ইউনেস্কোর নির্বস্তক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকা ঠাঁই পেয়েছিল আমাদের বাউল গান, জামদানি, মঙ্গল শোভাযাত্রা, এবার ঠাঁই পেল শীতলপাটি। ইউনেস্কোর আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিটি ৬ ডিসেম্বর এই স্বীকৃতি দেয়। আগস্টের ৭ তারিখে জিআই সনদ পেয়েছে ইলিশ মাছ। নারীর ক্ষমতায়নে বছরটি ছিল উল্লেখযোগ্য। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা থেকে থেকে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুততম সময়ের মধ্যে তৎপর হয়ে গ্রেফতার করেছে অপরাধীদের। গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার গৃহীত নানামুখী প্রকল্পের সুফল দৃশ্যমান। ক্রীড়াঙ্গনে জাতির প্রত্যাশার কেন্দ্রে এখন ক্রিকেট। চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সেমিফাইনালে ঠাঁই করে নেয়া ২০১৭তে আমাদের একটি বড় অর্জন।কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ব্যর্থতা ব্যতীত ক্রিকেট বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ লড়েছে সমান তালে। কত শতাব্দীর আশির দশকে আউলা চুলে বাউলা বাতাসের ঢেউ তোলা ছেলেদের ফুটবল আজ কেবলই স্মৃতি। তাদের পরিবর্তে অনুর্ধ ১৫ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিজয়ের মাসে জাতিকে আনন্দের উপলক্ষ উপহার দিয়েছে আমাদের মেয়েরা। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের পক্ষে বিশ্বজনমতের সমর্থন আদায়। নিজের মর্যাদা বজায় রেখে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধান ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কূটনীতিও ছিল লক্ষণীয়। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ফোরামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন তৃতীয় বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭তে বাংলাদেশ সফরে আসেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আসেন ২২ অক্টোবর। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে সামনে রেখে আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফর। মিয়ানমার হয়ে তিনি বাংলাদেশে পা রাখেন ৩ নবেম্বর। ১৬ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর মুখে শোনেন তাদের দুর্দশার কথা। বিপন্ন মানবতার পাশে থাকার জন্য পোপ বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ফার্স্ট লেডি ইমিনে এরদোগান। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসেন ১৯ ডিসেম্বর। সেপ্টেম্বর ১৩তে উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিয়োজিত ৪০টি দেশের প্রতিনিধি ও দাতা সংস্থার প্রধানরা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন ১৯ নবেম্বর। ২০১৭তে আমরা হারিয়েছি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। ৫ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে বিদায় নেন তিনি। সত্য বলতে কুণ্ঠাবোধ করেননি কখনও। গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সঙ্গে যোগ হয়েছিল তার অসাধারণ রসবোধ। সংসদীয় রাজনীতিতে তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। ২০১৭ আজ পেছনে ফেলে আসা অতীত। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনে অপার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে শুরু আরেকটি নতুন বছরের পথ চলা-২০১৮। সম্ভাবনার বাস্তবায়ন বা স্বপ্নপূরণ ভবিষ্যত এর গর্ভে নিহিত। কিন্তু বাংলাদেশ, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়নের স্বার্থে দুটি আহ্বানে আমাদের সাড়া দিতে হবে এবং তাতে সাফল্যের কোন বিকল্প নেই। ২০১৮ নির্বাচনের বছর। যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯-এর শুরুতেও অনুষ্ঠিত হয় তার ক্ষেত্রটি তৈরি হবে এ বছর। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারকে প্রচলিত সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য থেকেই নিশ্চিত করতে হবে সকলের অংশগ্রহণে একটি সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনের পরিবেশ। আর সাধারণ মানুষকে স্থির করতে হবে তারা কি চান? উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবমান, জঙ্গীবাদ মুক্ত এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নাকি উন্নয়ন যাত্রা থেকে ছিটকে পড়া জঙ্গীবাদের ভয়াল থাবায় এক ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশ।
×