ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁচতে চায় পাপড়ি, দেখতে চায় আগামীর সুন্দর স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০১:৫৫, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

বাঁচতে চায় পাপড়ি, দেখতে চায় আগামীর সুন্দর স্বপ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমি বাঁচতে চাই, দিতে চাই এসএসসি পরীক্ষাও। সুন্দর আগামীর দিনগুলো নিয়ে দেখতে চাই স্বপ্ন। গরিব হিসেবে নয়, আমাকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসুন, একটু সাহায্য করুন, একটু হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসুন। আপনাদের সম্পদ কমে যাবে না, তবে আমার মতো অভাগি হয়তো বেঁচে যাবে।’ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত পাপড়ি আক্তারের এই করুণ আর্জিতে ভারি হয়ে উঠেছিল হাসপাতালের পরিবেশ। আশপাশের বিছানার রোগি ও তার স্বজনরাও এমন কথা শুনে ঝর ঝর চোখের পানি ছেড়ে কেঁদেছেন। বেঁচে থাকার এমন আর্তনাত শুধু অসুস্থ পাপিয়ারই নয় গোটা পরিবারেরও। তবে আর্থিক দিক দিয়ে অসচ্ছল এই পরিবারের কাছে কান্না আর আর্তনাত জানানো ছাড়া যেন কিছুই করার নেই। তবে আশা ছাড়েননি। পরিবারটি এখনো স্বপ্ন দেখেন সুস্থ্য হয়ে আবারো হাসৌজ্জ্বল ভাবে চলাফেরা করবে তাদের আদুরের মেয়েটি। মেয়েটির নাম পাপড়ি আক্তার। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট হওয়ার কারণে সবার খুব আদরের এই মেয়ে। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই শরীরে বেধেছে ক্যান্সারের মতো রোগ। এ বছরই নীলফামারী ছমির উদ্দিন স্কুল থেকে এস এস সি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা তার। ফুলের মতোই দেখতে মেয়েটি। অনেক আনন্দ নিয়ে এস এস সি পরীক্ষার ফরম পূরন করেছিলো সে, স্বপ্ন দেখেছিলো বড় মানুষ হবে। কিন্তু তার সেই আনন্দ ও স্বপ্ন এখন ম্লান হতে চলেছে। কারন মেয়েটি এখন ‘ব্লাড ক্যান্সার’ এ আক্রান্ত। পরীক্ষাতো পরের কথা, এখন জীবন-মৃত্যুর সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে সে। কবে থেকে এই রোগ বাসা বেধেছে শরীরে জানে না পরিবারও। এর আগে একাধিক বার জ¦র ও বমি হওয়ার কারণে টাইফয়েড ভেবে সেই চিকিৎসা করানো হয় রংপুরে। কিন্তু পরিবার কি আর জানতো আরো ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে পাপড়ির জীবনে। গত অক্টোবরে শেষের দিকে টেস্ট পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই প্রথম জানতে পারলো এই রোগের কথা। গোটা পরিবারের উপর যেন আকাশ ভেঙে পরলো। কোথা থেকে আসবে চিকিৎসার কয়েক লাখ টাকার খরচ তাও জানেনা নীলফামারী পৌর শহরের শাহীপাড়ার বাসিন্দা পাপড়ির বাবা মো. বাদল। যিনি পেশায় একজন দর্জি। চিকিৎসাতো দুরের কথা নিজের স্ত্রী ও ৪ সন্তানদের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে দিতেই হিমশিম খান তিনি। তবুও হাল না ছেড়ে সাহায্যের আবেদন জানান ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে। অসহায় বাবার এমন আর্জিতে প্রথমেই সাড়া দেন নীলফামারী কতিপয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী। আর গোটা বিষয়টা তদারকি করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল শাহ্ আপেল। যিনি খবর পাওয়া মাত্রই অতি দ্রততার সাথে সরকারি কলেজ’র অধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং ছাত্র ছাত্রীদের সাথে কথা বলে ১৮ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দেন। যেখানে দুইজন দয়াবান ব্যক্তিও রয়েছে বলে জানা গেছে। এর পর ঐ ছাত্রনেতা নীলফামারীর এমপি ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সাথেও বিষয়টা নিয়ে কথা বলেন। সর্বশেষ ৪৮ হাজার টাকা সাথে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ২৯ নবেম্বর রাতের ট্রেনে চলে আসেন রাজধানীতে। পরদিন সকালে অসহায় পাপড়িকে ঢাকা মেডিকেলের ক্যান্সার বিভাগে ভর্তি করা হয়। যেখানে সে ৯০২ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডে ৮ নম্বর রুমে ৪৬ নম্বর বিছানায় প্রতিটি দিন পাড় করছেন। ডাক্তাররাও জানিয়েছেন এমন চিকিৎসার জন্য অন্তত দেড় দুই লাখ টাকা হাতে রাখা ভালো। আরো অনেক বেশি টাকা লাগে। পরিবারও বুঝতে পারছেন মাত্র ৪৮ হাজার টাকায় ক্যান্সার আক্রান্ত অসহায় পাপড়ির চিকিৎসা সম্ভব নয়। পাপরির চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন কয়েক লাখ টাকার। যা কারো একার পক্ষে বহন করা অনেক কষ্টসাধ্য। তাইতো সকল দয়াবান মানুষের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার উদাত্ত আহ্বান জানায় পাপড়ির পরিবার। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে প্রথমে অনেকগুলো পরীক্ষার বিষয় থাকে। একটু সময় লাগে রোগির স্টেজ কোন অবস্থানে। এছাড়াও নিয়মিত ঔষুধ থাকবে। একটা সময় ধিরে ধিরে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। পাপিয়াকে নিয়েও একাধিক পরীক্ষা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। চিকিৎসার পারম্ভিক পক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান চিকিৎসক। নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল শাহ্ আপেল মুঠোফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, এমন একটি বিষয় শুনা মাত্রই যতো দ্রুত সম্ভব কিছু টাকা সাহায্য করার চেষ্টা করি। আমরা এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি আরো কিভাবে সাহায্য করা যায়। এটা একার পক্ষে অসম্ভব। যার সাধ্য আছে এমন সবাইকে অনুরোধ জানাবো পরিবারটি পাশে দাঁড়াতে। পাপড়ির সুস্থ্যতার মধ্য দিয়ে পাপড়ি ও তার পরিবারের স্বপ্নটাও বেঁচে থাকুক। সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখা যায়, ফুলের মতোই দেখতে পাপড়ি শুয়ে আছেন বিছানায়। কথা বলতেও কষ্ট হয় তার। মাজে মধ্যেই বেশ কথা বলেন আবার চুপ থাকেন। কেউ আসলে এক দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। কোমল মেয়েটি মনটাও সহজ সরল যা তার কথায় বুঝা গেলো। আর সেই সরল মেয়েটি এখন প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে মৃত্যুর সাথে। এ যুদ্ধ বেঁচে থাকার যুদ্ধ। যেখানে কিশোরী বয়সেরই ভেঙে যাচ্ছে সুন্দর আগামীর স্বপ্নগুলো। চোখে যেখানে থাকবে আগামীর রঙিন দিনের স্বপ্ন সেখানে ক্যান্সার নামক অসুখ সব স্বপ্ন কেড়ে নিতে চাচ্ছে। ভেস্তে যেতে বসেছে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষাও। মেয়েটির পাশে বসতেই দু’চোখ থেকে গাল গড়িয়ে জল পরছিল। এতোদিনে মেয়েটিও বুঝে গিয়েছে সে বড় অসুখে অসুস্থ। দয়াবান এবং সামর্থ্যবান মানুষদের কাছে আর্জি জানালেও পাপড়ির বেঁচে থাকার সে প্রাণের আকুতি কতোজন ধনাঢ্য ব্যক্তির কর্ণকুনহরে পৌঁছাবে তা হয়তো জানেনা এই শিক্ষার্থী। সে শুধু বেঁচে থাকার জন্য স্বপ্নই দেখে যাচ্ছে। আর ভাবছে কেউ না কেউ তার জন্য এগিয়ে আসবেন। পাপড়ির মা সাজেদা বেগম জনকণ্ঠকে বলেন, অসুখটা আগে বুজিনাই। এখনতো মেয়ের দিকে তাকাতেও কষ্ট হয়। আমার মেয়েটার জন্য আপনার সবাই একটু সাহায্য করুন। মেয়ের বাবাও স্বপ্ন দেখেন সুস্থ হবেন তার আদরের মেয়েটি। পাপড়ির বাবা মো. বাদল বলেন, সবার সহযোগিতায় ৪৮ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকা আসলাম। চিকিৎসার খরচ হিসেবে এই টাকা খুবই সামান্য টাকা। ডাক্তারাও বলেছে সাথে টাকা পয়সা বেশি রাখতে। আল্লাহ যদি ব্যবস্থা করেন। নীলফামারীর মানুষ ও পাপড়ির পরিবার মনে করছেন, হয়তো সকলের একটু সহযোগিতায় এবং মহান আল্লাহর রহমতে বাঁচতে পারে একটি ফুলের মতো এই পাপড়ির জীবন। আবারও স্বপ্ন দেখতে পারে বড় মানুষ হবার। কিছু দিন আগেই একবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতালে ভর্তি করানে হলেও ব্যয় বহন করতে না হাসপাতাল ছেড়ে চলেও গিয়েছিল এই পরিবারটি। আবার অসুস্থ্য মেয়েকে নিয়ে ফিরতে হলো রাজধানীতেই। এবার কি হবে জানেনা পরিবারের কেউ। সবাই শুধু আল্লাহকে ডাকছেন আর ভাবছেন কোন দয়াবান ব্যক্তিতে আল্লাহ নিশ্চয় পাঠাবেন...। যেকোন দাতা বা দয়াবান ব্যক্তি এই অসহায় মেয়ের চিকিৎসায় পাশে দাঁড়াতে বা যে কোন ধরনের সাহায্য করতে যোগাযোগ করতে পারেন নিচের নম্বরে: পাপড়ির বাবার নাম্বার ০১৭৪৭৯০৫০১২
×