ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খান আতাকে বিরুপ মন্তব্য করায় চলচ্চিত্র পরিবারের নিন্দা

প্রকাশিত: ০১:১৩, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

খান আতাকে বিরুপ মন্তব্য করায় চলচ্চিত্র পরিবারের নিন্দা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রয়াত বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানকে ‘রাজাকার’ মন্তব্য করায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফের বিচার দাবি করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার। সাথে সাথে খান আতাউর রহমান নির্মিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিটিকে নেগেটিভ ছবি হিসাবেও আখ্যায়িত করায় তার প্রতি নিন্দাও জানানো হয়। নিউইয়র্কে সাংস্কৃতিক অভিবাসীদের সমাবেশে সম্প্রতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব-মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু আতাউর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলে মন্তব্য করেন। খান আতার নির্মিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিটিকে তিনি নেগেটিভ ছবি হিসাবেও আখ্যায়িত করেন। এ কারণে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে গত কয়েকদিন ধরেই। সেই ইস্যুতে উত্তাল বিএফডিসিও। সাম্প্রতিক এই বির্তকের জেরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবারের আয়োজনে বিএফডিসির জহির রায়হান ভিআইপি প্রজেকশন হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন চিত্রনায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, নির্মাতা আমজাদ হোসেন, সিবি জামান, আজিজুর রহমান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, খান আতার মেয়ে সঙ্গীতশিল্পী রোমানা ইসলাম, ছেলে সঙ্গীতশিল্পী-অভিনেতা আগুনসহ আরও অনেকে। চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন বলেন, কিছু দু:খের কথা বলতে চাই। সে বড় সুখের সময় নয়, সে বড় দু:খের সময় নয়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলটল করে ওঠে, দেয়ালে দেয়াল কার্নিশে কার্নিশ, ফুটপাত দখল হয় মধ্যরাতে। আমার বড় ভাই, আমার বাবাকে একজন গালি দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে আমরা একটা গালি তৈরি করেছিলাম। সে গালিটির নাম ‘রাজাকার’। যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলেন তাদের আমরা এই গালিটি দিতাম। আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশের প্রথম নায়ক খান আতাউর রহমান। যিনি এজে কার্নারের ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। বাচ্চু সাহেব তুমি আমার দেশের লোক। তুমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তুমি কেন এই গালিটা আতা ভাইকে দিলে? সে তো তোমার কোন ক্ষতি করে নাই। তিনি দশ বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তুমি কেন তার সম্পর্কে এই গালিটা উচ্চারণ করলে? তুমি যদি সত্যিই এ কথাটা বলে থাক, তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে চলচ্চিত্রের মানুষের কাছে, বাংলার মানুষের কাছে। খান আতা আমার হৃদয়ের ৩২ টি হাড়ের মতো। ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিটি দেখানোর জন্যই এ আয়োজন। সবাই দেখে বুঝুক কি ছবি খান আতা তৈরি করেছিলেন। একজন মৃত মানুষকে কবর থেকে তুলে তাকে অপমান করার অধিকার তোমার নেই। এর বিচার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের কিছু তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, আমরা কিছু দু:খের কথা বলার জন্য এখানে আসছি। একজন গুণী ও সুন্দর মনের মানুষ, যিনি মানুষ হতে হতে কখন যে শিল্পী হয়ে গেছেন নিজেও জানেন না। আমার সেই পিতৃসম খান আতাউর রহমানের কথাই এখানে বলতে হাজির হয়েছি। হঠাৎ করে এই গুণী মৃত মানুষটাকে কবর থেকে এনে বলা হচ্ছে তুই রাজাকার। কারণটা কি ভাই? এর পেছনে কে বা কারা আছেন? আতা ভাই নিজেই আমাকে কিছু কথা বলে গেছেন। তিনি বলেছিলেন দেখ একাত্তরে হঠাৎ করে আমার বাড়িতে পাক আর্মি ঢুকে পড়ে। গান পয়েন্টের সামনে আমাকে একটি কাগজে সই করতে বলে। তখন ঘরের ভেতরে ঢোকার অনুমতি নিয়ে একজনের সাথে টেলিফোনে কথা বলি। তখন তিনি সই করতে বলেন। আমি বলেছিলাম আমার দেশের জন্য এটা করতে পারি না। তখন সেই মানুষটি বলেছিলেন-আল্লাহ-পাক তার কোরানে লিখে দিয়েছেন জীবন বাঁচাবার জন্যে মিথ্যে হলেও মিথ্যে বলো। তিনি সই করেছিলেন। বাচ্চু সাহেব বলছেন নয় নম্বরে খান আতা সাহেব সই করেছেন। তিনি এক থেকে নয় পর্যন্ত শুধু নয় নম্বরটার কথা বললেন, এক থেকে আট পর্যন্ত নাম তো বললেন না। আতা ভাই সহসী ছিলেন। তার পরেও সংসারের কথা ভেবে, সন্তানদের কথা ভেবে তিনি এটা করেছিলেন। সেই জন্যেই কি তাকে আজকে রাজাকার বলা হবে? বাচ্চু সাহেব আমেরিকায় বসে বলেছেন, ‘আবার তোরা মানুষ হ’ এ কথাটা নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের বলা হয়েছে। ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিটি তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের সেন্সরবোর্ড অনুমোদন দিয়েছিল। ছবিটি অনেক মুক্তিযোদ্ধারাও দেখেছিল। ছবিটি নেগেটিভ নয়, পজেটিভ। বাচ্চু সাহেব আপনি কেন যে ছবিটিকে নেগেটিভ বলছেন? আপনি স্বাধীনতার পক্ষের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। আমরা এটা মানতে পারি না। আমরা এর বিচার চাই। খান আতা সাহেব কে আপনি রাজাকার বলছেন। রাজাকার-আলবদরদের বাহিনী থাকে। লিষ্টে তাদের এক একটা নাম থাকে। এ দেশের মুক্তিপ্রাণ মানুষদের হত্যা করার জন্যে, মা বোনদের শাসকদের ভোগের সামগ্রী করায় তারা লিপ্ত। আতা ভাই এর কি করেছেন? তার প্রমান আপনাকে দিতে হবে। আর তা না হলে জাতীর কাছে আপনার জবাবদিহি করতে হবে। আপনার বিচার চাই। পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, খান আতা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঝুঁকি নিয়েও বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করেছেন। পাকিস্তানিদের হুমকি মাথায় নিয়েও যিনি কাজ করেছেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা না রাজাকার? খান আতা ছিলেন, আছেন, থাকবেন। পরিচালক সিবি জামান বলেন, খান আতার মতো মানুষকে নিয়ে যারা এমন মন্তব্য করতে পারে তাদেরকে ঘৃণা করি। খান আতাউর রহমানের কন্যা সঙ্গীতশিল্পী রোমানা ইসলাম বলেন, আমার বাবার কালজয়ী সৃষ্টির পেছনে ছিল দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা। গুটিকয়েক ভ্রষ্ঠ মানুষের কথায় খান আতাউর রহমানের মান সম্মান বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হবে না। সোনার বাংলা থাকলে খান আতাউর রহমানও অমর হয়ে থাকবেন। খান আতাউর রহমানের সন্তান কণ্ঠশিল্পী ও অভিনেতা আগুন বলেন, সুপ্রিয় সুধী আমার বাবা আজ কাঁদছে। সবাই আমার ফেসবুকের পাতায় খেয়াল রাখবেন। যে কোন দিন ফাটবে বোমা। যুদ্ধ যখন একটা লেগেছে এই যুদ্ধে আমি জিতবই। কারণ খান আতাউর রহমান আমাকে ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে তুলেছেন। সবশেষে, খানা আতার ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিটি বড় পর্দায় দেখানো হয়।
×