ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলম্বে হলেও রিজার্ভের পুরো টাকা ফেরত আসবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:৪৬, ২৩ আগস্ট ২০১৭

বিলম্বে হলেও রিজার্ভের পুরো টাকা ফেরত আসবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিলম্ব হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের পুরোটাই ফেরত পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি এগিয়ে নেয়া হচ্ছে বিধায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আপাতত প্রকাশ করবে না সরকার। বন্যা ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে যেসব অঞ্চলে রাস্তাঘাট খারাপ হয়ে গেছে তা মেরামতে প্রয়োজনে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হবে। এছাড়া সঙ্কট মেটাতে দেড় লাখ টন চাল ও গম আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্যে ১ লাখ মেট্রিক টন গম এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি চাল। বুধবার সবিচালয়ে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই সময় তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ চুরির সব টাকা যাতে ফেরত পাওয়া যায় সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে টাকার একটি অংশ ফেরত এসেছে, এখন পুরো টাকা ফেরত আনার কার্যক্রম চলছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রাখা বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে মার্চের শুরুতে। পরে ১৫ মার্চ এ ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপাইনের একটি জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। চুরি হয়ে ফিলিপাইনে চলে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার ইতোমধ্যে ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার ফেরতের বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে গবর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। গত বছরের মার্চ মাসে সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিনকে। এদিকে, গত ডিসেম্বর মাসে রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ দ্রুত উদ্ধারে সহায়তার জন্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে চুরির সবচেয়ে বড় এই ঘটনায় বাংলাদেশের তদন্ত প্রতিবেদন চায় ফিলিপিন্স সরকার। তবে রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়ার অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী ওই সময় জানিয়েছিলেন, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষকে এটি দেয়া হবে না। রিজার্ভ চুরির পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই এ প্রতিবেদন তাদের দেয়া হবে না। এটি অন্যদের দিতে সরকার দিতে বাধ্য নয়। এটা কাউকেই দেয়া হবে না। বরং চুরির টাকা উদ্ধারে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) বাংলাদেশের পক্ষে আইনি লড়াই করবে। অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কয়েকদফা উদ্যোগ নিলেও দেশটির পক্ষ থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
×