ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুখে গামছা বেঁধে শিশু নির্যাতন ॥ মামলা নিতে ওসির গড়িমসি

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ১২ আগস্ট ২০১৭

মুখে গামছা বেঁধে শিশু নির্যাতন ॥ মামলা নিতে ওসির গড়িমসি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ টাকা চুরির অপবাদে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেনীর আবাসিক হোস্টেলের শিশু ছাত্রীকে (৮) মুখে গামছা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় মামলা নিতে ওসির গড়িমসির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশেষে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় ১২ আগস্ট “মাদ্রাসায় মুখে গামছা বেঁধে তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রীর ওপর নির্যাতন” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর টনগ নড়েছে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের। নির্যাতিতা ওই শিশু ছাত্রীর মা জেলার গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম শাওড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোঃ কামাল হোসেন বেপারীর স্ত্রী রেনু বেগম জানান, তার একমাত্র শিশু কন্যা কামরুন নাহার সুমাইয়াকে একশ’ টাকা চুরি করার মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মুখে গামছা বেঁধে আবাসিক হলে বসে অমানুষিক নির্যাতন করে উপজেলা সদরের খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) মহিলা কওমী মাদ্রাসার সুপার খাদিজা বেগমসহ তিন শিক্ষক। শুক্রবার সকালে তিনি ওই মাদ্রাসার আবাসিক হল থেকে মুর্মুর্ষ অবস্থায় সুমাইয়াকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় তিনি শুক্রবার বিকেলে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর রাতে থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রেনু বেগম অভিযোগ করেন, গৌরনদী মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলাম রহস্যজনক কারণে বিষয়টিকে ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য মামলা না করে তাকে একটি সাধারণ ডায়েরী করার পরামর্শ দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শরীফ আহম্মেদ জানান, জনকন্ঠ পত্রিকার অনলাইন সংস্করনের সংবাদ দেখেই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শুক্রবার রাতে তিনি হাসপাতালে গিয়ে আহত শিশুর সাথে কথা বলে তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় শিশু নির্যাতন আইনে মামলা নেয়ার জন্য থানার ওসির সাথে কথা বলেছেন। নির্যাতিতা ওই শিশুর মা রেনু বেগম আরও জানান, থানার ওসি মনিরুল ইসলামের রহস্যজনক আচরনে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার সকালে ওসিসহ অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর কাছে রওয়ানা হয়েছিলেন। এরইমধ্যে থানার ওসি তাদের ফোন করে থানায় আসার জন্য অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে থানায় যাওয়ার পর ওসি পুরনো (শুক্রবার বিকেলে দায়ের করা) লিখিত অভিযোগ বাদ দিয়ে নতুন করে অভিযোগ লিখিয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসার সুপার খাদিজা বেগমসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বিকেলে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে মামলা রুজু করার মতো কোন বিষয় ছিলোনা। তাই শনিবার সকালে নতুন করে অভিযোগ লিখিয়ে চারজনকে আসামি করে শিশু নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার কার সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুল ইসলামের এক নিকট আত্মীয় পুলিশে চাকরি করার সুবাধে প্রথমে গৌরনদী থানার ওসি মামলা নিতে তালবাহানা করেছেন। পরবর্তীতে জনকন্ঠ পত্রিকার সংবাদের কারণেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাঁপের মুখে ওসি মামলা নিতে বাধ্য হলেও এখন আসামিদের গ্রেফতার করবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
×