ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাতার–সংকট

সম্পদশালী দেশগুলো কি পরস্পরের বিরুদ্ধে ইচ্ছে করে বিরোধে জড়ায়?

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ২৪ জুলাই ২০১৭

সম্পদশালী দেশগুলো কি পরস্পরের বিরুদ্ধে ইচ্ছে করে বিরোধে জড়ায়?

অনলাইন ডেস্ক ॥ উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর (জিসিসি) সঙ্গে কাতারের বিরোধের জেরে চলমান সংকট একটা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে আর তা হলো—সম্পদশালী দেশগুলো কি পরস্পরের বিরুদ্ধে ইচ্ছে করে বিরোধে জড়ায়? সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সম্প্রতি যে রকম দুঃসাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে মনে হয় উল্লেখযোগ্য ধনী দেশগুলো আদর্শিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার স্বার্থে কিছু অর্থনৈতিক লোকসানও সইতে পারে। মিসরে ২০১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসিকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে উৎখাতের ঘটনায় পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল সৌদি, আমিরাতি ও কুয়েতি সরকার। তারা ওই ঘটনার পর প্রথম দেড় বছর জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির টালমাটাল সরকারকে বহাল রাখতে ২ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রস্তাব করেছিল। আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছ থেকে এমন সহায়তা পাওয়ার ফলেই সিসির নেতৃত্বে মিসর জিসিসির বাইরের প্রথম দেশ হিসেবে কাতারকে একঘরে করার উদ্যোগে যোগ দেয়। একইভাবে ইয়েমেনে বিপর্যয়কর যুদ্ধের প্রথম বছরে ৫৩০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে, যার অর্থায়ন করতে গিয়ে সৌদি আরব গত কয়েক দশকের মধ্যে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বাজেট ঘাটতির সমস্যায় পড়ে। বলা বাহুল্য, এই যুদ্ধে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটির (ইয়েমেন) জনসাধারণ সীমাহীন দুর্দশার কবলে পড়েছে। সৌদি ও আমিরাতি নেতারা তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলাফল প্রভাবিত করতে শত শত কোটি ডলার খরচ করেছেন এবং লিবিয়া ও সিরিয়ায় ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন বাহিনীকে একই ধরনের সহায়তা দিয়েছেন। প্রতিবেশী দেশ কাতারের পররাষ্ট্রনীতির ওপর হস্তক্ষেপের চেষ্টার অংশ হিসেবে চারটি আরব দেশ গত মাসে কাতারের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তখন সৌদি আরব, ইউএই ও বাহরাইন এই সংকট জিইয়ে রাখতে চাইবে—এমনটা অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ কাতার এই তিন দেশের সঙ্গে বছরে ৯৫০ কোটি ডলারের বার্ষিক বাণিজ্য করে এবং ইউএইর চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করে। অবশ্য এই তিন দেশের সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে অর্থনৈতিক স্বার্থের চেয়ে যে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, এমন দৃষ্টান্ত এটিই প্রথম নয়। ২০১৪ সালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ার জবাবে সৌদি আরব নিজেদের তেল উৎপাদন কমায়নি, যদিও এতে তাদের লোকসান হয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতার-সংকট নিরসনে কূটনৈতিক তৎপরতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে কাতারে অবরোধ অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে বলেই মনে হচ্ছে। পরিণামে একধরনের আঞ্চলিক স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হবে। সৌদি-আমিরাতি জোট এখন যেকোনো মূল্যে কাতারকে আঞ্চলিক জোট (জিসিসি) থেকে বের করে দিতে চায়। এই জোট সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইরানবিরোধী তৎপরতা জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
×