ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২৯ জুন ২০১৭

সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৭ পাসের মাধ্যমে এই বাজেট পাস হয়। এই বাজেট পাসের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের সকল ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে সংযুক্ত তহবিল থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে। বিলের ওপর আনীত ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৭ সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের দফাগুলো সংসদে গৃহীত হওয়ার পর বিলটি সংসদে উপস্থিত সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হয়। সংসদে পাসকৃত এই বাজেটটি মুলত গ্রস বাজেট। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও অন্যান্য খাতে বাজেটে সরকারের অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই অর্থ কখনও ব্যয় হয় না। যা বাজেটের আয় ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাবে মেলানো হয়। এই বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের বাজেটেও ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪২ ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা ব্যয় হবে না। অর্থমন্ত্রী গত ১ জুন জাতীয় সংসদে যে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছেন, সেটাই ব্যয় হবে। সেটাই আগামী অর্থবছরের নীট বাজেট। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। প্রথমেই স্পীকার বাজেট পাসের কার্যক্রম শুরু করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ৫৯টি দাবির বিপরীতে ৩৫২টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র দলীয় সংসদ সদস্যরা। এর মধ্যে বিরোধী দলের সদস্যরা মোট ৭টি দাবির ওপর আলোচনায় অংশ নেন। বাকি প্রস্তাবগুলো গিলোটিনের মাধ্যমে কন্ঠভোটে পাস করা হয়। বাজেট পাসকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশদ এরশাদসহ সরকার ও বিরোধী দলের বেশিরভাগ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে গত পহেলা জুন জাতীয় সংসদে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যস্থতায় ৭টি দাবির ওপর আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এ আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন, নুরুল ইসলাম ওমর, কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম রওশন আরা মান্নান, ফখরুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। দীর্ঘ প্রায় চার ঘন্টা আলোচনার পর বেলা পৌনে দুইটায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নির্দিষ্টকরণ বিল উত্থাপন করলে সর্বসম্মতক্রমে ২০১৭-১৮ সালের বৃহৎ বাজেটটি কন্ঠভোটে পাস হয়। তবে গত তিন বছরের তুলনায় এবারই প্রথম বাজেট নিয়ে সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের প্রানবন্ত আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারি দলেরও অনেক সিনিয়র নেতা-মন্ত্রীরাও বাজেটের কয়েকটি বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে তুলোধুনো করতে ছাড়েননি। বিশেষ করে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি এবং ভ্যাট নিয়েই বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হয় অর্থমন্ত্রীকে। তবে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের প্রেক্ষিত্রে অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আইন আগামী দুই বছরের জন্য স্থগিত এবং ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারী শুল্ক পুনর্বিন্যাস করলে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে বাজেটটি পাস করেন। এবারের বাজেটের ওপর মোট ১৯ কার্যদিবস আলোচনা হয়। এই ১৯ দিনে সরকার ও বিরোধী দলের প্রায় দুই শতাধিক সংসদ সদস্য ৫৫ ঘন্টা আলোচনা করেন। এদিকে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের নারীদের নিয়ে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন নারী সংসদ সদস্যরা। বাজেটের ওপর মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘মেয়েদের বড় গুণ তারা শোনে তিন লাইন, বোঝে ১৩ লাইন আর লেকচার দেয় ৯৩ লাইন।’ তাঁর এই বক্তব্যে তীব্র আপত্তি জানান নারী সংসদ সদস্যরা। তীব্র আপত্তির মুখে ফখরুল ইসলাম তাঁর এই বক্তব্যে প্রত্যাহার করে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত স্পর্শকাতর- অর্থমন্ত্রী ॥ অর্থ বিভাগ খাতে ৫৩ হাজার ৮৩৩ কোটি ৮০ লাখ ৭১ হাজার টাকা দাবির বিপরীতে ৭ জন এমপি ছাঁটাই প্রস্তাব বলেন, অর্থই অনর্থের মূল। অভিযোগ আছে, নানাভাবে টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। বেসরকারি ব্যাংক শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংক কমিশন গঠন করা দরকার তাহলে ঋণখেলাপিরা টাকা দিতে বাধ্য হবে। ব্যাংক খাতে শৃংখলা ফিরে আসবে। বেসরকারি ব্যাংকে সব পরিচালক পারিবারিক। এখানে স্বতন্ত্র কোন পরিচালক নেই। এ কারণে এসব খাতে লুটপাট হচ্ছে। এখানে দুই তৃতীয়াংশ স্বতন্ত্র ব্যাংক পরিচালক থাকা দরকার। তারা বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ যারা ব্যাংক লুটপাট করেছেন অর্থমন্ত্রী তাদের চেনেন না। জবাবে অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে যেসব অভিযোগ এসেছে তাতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলো পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছ। এ খাতে সুশাসন দুর্লভ। ব্যাংকের পরিচালকদের অবশ্যই রেসপন্সিবল আছে। এ নিয়ে আইন তৈরি করা হয়েছে। এটা সংসদীয় কমিটি বিবেচনা করছেন। কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর সরকারের অভিমত জানানো হবে। তিনি বলেন,ব্যাংকগুলোকে খামাখা ভর্তুকি দিচ্ছি বলে অনেক অভিযোগ করেছেন। এটা ঠিক নয়। কারন ব্যাংকিং খাত হচ্ছে খুবই স্পর্শকাতর খাত। ব্যাংকিং খাতের কোন ধরণের বিপর্যয় সারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তিনি বলেন, সরকার ব্যবসা করে কোনদিনই ভালো করেনি। এজন্য সরকারকে ব্যবসা থেকে দূরে রাখি। সুশাসন শব্দটির সীমা ব্যপক। গত ৮ বছরে সরকার ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের জন্য অত্যন্ত ন্যয়নিষ্ঠভাবে কাজ করেেছ। এরইমধ্যে এর সুফল আপনারা দেখতে পেয়েছেন। ব্যংকিং খাতে ৫৮ টি ব্যাংক কাজ করছে। আশা করি আমাদের দেশেও ব্যাংকিং খাত অনেক অগ্রসর হবে।
×