ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়োগকারী রাষ্ট্রপতিই বিচারপতি অপসারণ করতে পারেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৪ মে ২০১৭

নিয়োগকারী রাষ্ট্রপতিই বিচারপতি অপসারণ করতে পারেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্টে বাতিলের আপীল শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা) এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেছেন, অধস্তন বিচার বিভাগ কব্জা করে নিয়ে নিয়েছেন। এখন চাচ্ছেন সুপ্রীমকোর্ট নিয়ে নিতে। অধস্তন আদালতের ৮০ ভাগ বিচারকের ওপর কার্যত সুপ্রীমকোর্টের নিয়ন্ত্রণ নেই। সুপ্রীমকোর্ট, অধস্তন আদালত পঙ্গু হয়ে গেছে। একটা জেলায় ৫ মাস ধরে জেলা জজ নেই। বিচার বিভাগ কি রকম কার্যকর আছে? জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিচার বিভাগ তখনই অকার্যকর হয়ে পড়বে যখন দেশে অরাজকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কিন্তু এখনও সে পর্যায়ে নেই দেশ। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ বলতে পারে না যে মূল সংবিধানের এই ব্যবস্থা ঠিক না। শুধু সংশোধনী সম্পর্কে বলতে পারে। তিনি আরও বলেন, এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ে কিছু কিছু মন্তব্য রূঢ় হয়ে গেছে। আশা করি, এগুলো বাদ দেবেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের সাত বিচারপতির আপীল বেঞ্চে ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়ে মঙ্গলবার পঞ্চম দিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও এ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন। সকাল ৯টা ১০ মিনিট থেকে টানা দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত শুনানি চলে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেনÑ বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন হাইকোর্ট বাতিল করলে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও আইন সভায় উত্তাপ ছড়িয়েছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপীলেও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেলের। মঙ্গলবার এ্যাটর্নি জেনারেল ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং রিটকারীর পক্ষে এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, অধস্তন বিচার বিভাগ কব্জায় নিয়েছেন। এখন চাচ্ছেন সুপ্রীমকোর্টকেও নিয়ে নিতে। ১১৬ অনুচ্ছেদের বিষয়ে আমাদের অভিমত কি ছিল? আপনি কি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চান? নাকি চান না। জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অবশ্যই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই। প্রধান বিচারপতি বলেন, তাহলে অধস্তন বিচার বিভাগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলে কিভাবে হবে। জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন এটা অন্য বিষয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, ৮০ ভাগ বিচারক অধস্তন আদালতে ওখানে কার্যত সুপ্রীমকোর্টের নিয়ন্ত্রণ নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বললে এটাও আসবে। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা একটা ইস্যু হয়ে গেছে। যেমন আপনার ভাস্কর্যও এটা ইস্যু। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি এর সঙ্গে ওটা টানবেন না। সুপ্রীমকোর্ট, অধস্তন আদালত পঙ্গু হয়ে গেছে। এ কারণে বলতে বাধ্য হচ্ছি। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মাসদার হোসেন মামলায় বিচারপতি মোস্তফা কামাল যে রায় দিয়ে গেছেন তার সঙ্গে আমাদের কিছু দ্বিমত ছিল। ১১৬ তো ভিন্ন বিষয়। এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি আমাকে বলেন বিচার বিভাগ কিভাবে কার্যকর আছে। একটা জেলায় ৫ মাস জেলা ও দায়রা জজ নেই। তাহলে বিচার বিভাগ কি ধরনের কার্যকর হচ্ছে? জেলা জজ না থাকলে বিচার বিভাগ কার্যকর হবে কি না, প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির। জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচার বিভাগ অকার্যকর হবে তখনই, যখন দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার জবাব হলো এটা আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয়। উচ্চ আদালত নিয়ে গেলেন সংসদে। তাহলে আর কি থাকল? আপনারা আমেরিকার সংবিধানের কথা বলেছেন, আমেরিকার সংবিধান কতবার পরিবর্তন হয়েছে সেটা জানেন? জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মূল সংবিধান একবারও পরিবর্তন হয়নি। সংযুক্ত হয়েছে। আমাদেরও দোষ আছে। আমরা মূল সংবিধান সংশোধন করেছি। তান না করে সংযুক্ত করতে পারতাম। তবে বিচার বিভাগ এটা বলতে পারবে না, যে মূল সংবিধানের এই প্রভিশন সঠিক নয়। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, হাইকোর্টের রায়ে কিছু কিছু রূঢ় মন্তব্য হয়ে গেছে। এগুলো বাদ দেবেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সংবিধান মাথায় রেখেই রায় দেব। একটি গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে ১১১ ও ১১২-এর শর্তগুলো থাকা উচিত। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অনেক কিছু চিন্তা করে রায় দিতে হয়। মানবাধিকার, সংবিধান, আইনের শাসন এসব কিছু বিবেচনায় নিতে হয়। সুপ্রীমকোর্টের ছুটির সময়ও আমরা পারিবারিক জীবন ভোগ করতে পারি না। এক পর্যায়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মার্শাল ’ল প্রিয়ডে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিধান আনা হয়েছে। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা মার্শাল ল’-এর কথা বলছেন? এখনও ১৯৮২ সালের আইন রয়ে গেছে। আমরা বিচারকরা চিন্তাভাবনা করি, রাষ্ট্রের কাজের ব্যাঘাত না ঘটে। বিচার বিভাগ সব সময় অন্যায় আইনগুলো কে সহ্য করে যাচ্ছে। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, ১৯৭২-এর মূল চেতনায় ফিরে যেতে সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু সেখানে মিস হওয়ায় দেশের স্বার্থে ১৬তম সংশোধনী আনা হয়েছে। জনগণ ক্ষমতার মালিক। সপ্তম অনুচ্ছেদের চেতনা পুনর্বহালের জন্যই ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়েছে। এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, খুবই দুঃখজনক একটি অধ্যায় আছে। উচ্চ শিক্ষিত নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বাধ্য হলেন বিদায় নিতে। সামান্যতম নিরপেক্ষতা দেখিয়েছিলেন। এসব বিষয়ও আমাদের ভাবতে হবে। পড়ে এ্যাটর্নি জেনারেল আবার তার লিখিত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। এর কিছুক্ষণ পর বেলা ১১টায় বিরতিতে যায় সুপ্রীমকোর্ট। বিরতির পর বেলা সাড়ে ১১টায় আবারও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত আপীল শুনানি শুরু হয়। শুরুতেই এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাইকোর্টের রায়ে সংসদ সদস্যদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, সে রকম কিছু থাকলে আমরা বিবেচনা করব। তিনি বলেন, মন্ত্রী সাহেবরা অনেক কথা বলেন। যা আমরা হজম করছি। করতে পারি। আমি প্রধান বিচারপতি হিসেবে যা বলি তা বিচার বিভাগের জন্যই বলি। আপনারা মন্ত্রীর কথা হজম করতে পারবেন তো। আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচারকদের বেতন বেড়েছে। এটা হলেই কি বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়ে যায়? মন্ত্রীদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের বেড়েছে এক বছর আগে। আমাদের এক বছর পর। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন আমি আপনার সঙ্গে আছি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি তো রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি বিচার বিভাগের সঙ্গেই থাকব। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রীর যে বিতর্ক তা বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা তৈরি হয়। শুনানির এক পর্যায়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা ১৯৭২ সালের সংবিধানে ছিল। প্রধান বিচারপতি বলেন, এখন ওই সময় থেকে আর্থসামজিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭২-এর চিন্তা-চেতনা থেকে ২০১৭ সালের চিন্তা চেতনা। পেছনে থাকবেন। সামনের দিকে তাকাতে হবে। সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানও পরিবর্তন হবে। এটা ব্যালেন্স করতে হবে। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা (সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল) সামরিক আইন জারির মাধ্যমে হয়েছে। সেই সামরিক আইনের কলঙ্ক মুছতেই ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনস্থাপন করা হয়েছে। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, সামরিক আইনের কলঙ্ক মুছে ফেলতে একমাত্র বিচার বিভাগ ভূমিকা রেখেছে। এ সময় অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, একজন প্রধান বিচারপতিও শপথ ভঙ্গ করে সামরিক আইন প্রশাসক হয়েছিলেন। সংবিধান স্থগিত করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, মার্শাল ’ল পিরিয়ডে কিছু ভাল কাজও হয়েছে। জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ভাল কিছু থাকতে পারে। ডাকাতেরও কিছু ভাল গুণ থাকতে পারে। তাই বলে ডাকাতকে তো আর ভাল বলা যাবে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, সংসদে এমপিরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছেন না। আপনারা বিচার বিভাগকে সেই সংসদের কাছেই নিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান বিচারপতির অনুরোধের পরেও বিচারক নিয়োগ হচ্ছে না। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধান বিচারপতি স্ট্রং হলেই সব ঠিক থাকবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের প্রধান বিচারপতি স্ট্রং নয়। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি তা বলিনি। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, স্ট্রং আছি বলেই গত দেড় বছরে একজনও বিচারক নিয়োগ হয়নি। এক পর্যায়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংসদে এমপিরা হাত তুললেই বিচারক অপসারণ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন না। একটা আইন থাকবে। সমস্ত বিষয় শেষ করেই সংসদে যাবে। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, যে আইনের কথা বলছেন সেটা তো কিছুদিন পরেও করা যেত। এত তাড়াহুড়ো করে করার কোন প্রয়োজন ছিল না। প্রধান বিচারপতি চিঠি দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে নিষেধ করার পরও আইনটা কেবিনেটে পাস করালেন। এত তাড়াহুড়োর কি প্রয়োজন ছিল? সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবীদের রিট করার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তাদের রিট করার এখতিয়ার নেই। এ সময় বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, এ যুক্তি ঠিক নয়। যারা এসেছেন তারা অপরিচিত আইনজীবী। তারা এ বারেরই (আইনজীবী সমিতি) সদস্য। বিচার বিভাগে মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে তারা এটা করতে পারেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, তারা এই সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী। তারা সচেতন নাগরিক। তাদের রিট করার এখতিয়ার আছে। তিনি বলেন, আপনি বলছেন, তাদের এখতিয়ার নেই। তাহলে কি আমি নিজে রিট করব? এ সময় তিনি ভারতের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত রায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ওই মামলায় আবেদনকারী ছিলেন সেখানকার বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। শুনানির শেষ পর্যায়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাইকোর্টের রায়ে একজন বিচারপতি সংসদ সদস্যদের ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড থাকার কথা বলেছেন। এই বক্তব্য সত্য না হলে তাকে অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো উচিত। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতি কি একজন বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারেন? জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা নেই। আইনও নেই। আইন না থাকলেও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজন বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারেন। এ্যাটর্নি জেনারেলের এ বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা কি বললেন? আইন না থাকলেও রাষ্ট্রপতি একজন বিচারপতিকে সরিয়ে দেবেন? কত হাজার বছর পেছনে নিয়ে যাচ্ছেন? বিচার বিভাগকে কি মনে করছেন? জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা আমার অভিমত। আপনারা বিষয়টি রায়ে বলে দিতে পারেন। এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে অপরাপর বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করেন। তখন ঘড়িতে সময় বেলা সোয়া একটা। আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকেই আবার এই আপীল শুনানি শুরু হবে বলে জানা গেছে সুপ্রীমকোর্ট ওয়েবসাইট সূত্রে। কার্যতালিকার ১ নম্বরেই এই আপীল মামলাটি রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। বঙ্গবন্ধুর সময় চতুর্থ সংশোধনী হলে তা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যাস্ত হয়। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পরে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনা হয়। এর বিরুদ্ধে কয়েকজন আইনজীবী আদালতে গেলে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে হাইকোর্টে ওই রায় আসে। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৮ মে পেপারবুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে এই মামলার আপীল শুনানি শুরু হয়। ৯ মে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হয়। এ দুইদিন রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা হাইকোর্টের রায় আদালতে পড়ে শোনান। এরপর ওইদিনই আদালতে চারজন এ্যামিকাস কিউরি তাদের লিখিত মতামত জমা দেন। এই চারজন হলেনÑ সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এম আই ফারুকী ও আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া।
×