ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশে!

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২১ মে ২০১৭

দু’টি পাতা একটি  কুঁড়ির দেশে!

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মাহমুদা ম্যামের প্লানেটরি জিওলজি ক্লাস দিয়ে শুরু আর বিকেল সাড়ে ৪টায় দেলোয়ার স্যারের জিওলজিক্যাল ডাটা ইন্টারপিটেশন দিয়ে শেষ। মাঝখানে একটুও দম ফেলার সুযোগ নেই। বিভাগের টানা ক্লাস-পরীক্ষা আর এ্যাসাইনমেন্টের চাপে সবাই যেন রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছে। তাই বিভাগের শত ব্যস্ততাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৪২তম ব্যাচের একঝাঁক শিক্ষার্থী কয়েকদিনের জন্য বেরিয়ে পড়ল দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশে। ক্যাম্পাস থেকে বাসে করে কমলাপুর রেলস্টেশন সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে সোজা সিলেট। প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর ড. মোঃ শরীফ হোসেন খান, এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ও এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. রুমানা ইয়াছমিন ম্যামকে সঙ্গে পেয়ে আমাদের আনন্দের মাত্রা যেন বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল। রাত ১০টায় ট্রেনে উঠার পর সৈকত আর সুমনের ভাঙ্গা গলার বেসুরো গানে ঘুম যে কোথায় উড়ে গেল সে কথাই যেন ভাবছিল তমা, শিরিন, শান্তরা। সকালে স্টেশনে নেমেই পরিপক্বতার জনক সৈকত ফেসবুকে ছবি পোস্ট দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিল; পরিপক্ব হওয়ার প্রচেষ্টায় আমরা এখন সিলেটে। আর অপরিপক্বতার জনক শফিক তখনও সুরমা বেসিনের প্রেমে হাবু-ডুবু খাচ্ছিল। রেলস্টেশন থেকে আমরা সোজা জৈন্তাপুর জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে গিয়ে উঠলাম। তারপর শুরু হল উঁচু উঁচু পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, রং বেরঙের পাথর আর নির্জন মনকাড়া সারি সারি চা বাগানের সঙ্গে মিতালী। সারি নদীর স্বচ্ছ নীল জলরাশি, মনকাড়া অপরূপ সৌন্দর্যম-িত সারি সারি চা বাগান, হিম শীতল পানির সঙ্গে রং বেরঙের পাথরের সারি, পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি আমাদের সকল ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর গ্লানিগুলোকে ক্ষণিকের জন্য ভুলিয়ে দিয়েছিল। এটি ছিল আমাদের শেষ ফিল্ডওয়ার্ক। তাই স্মৃতির মণিকোঠায় রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলোকে বন্দী করে রাখতে ফটোসেশনের মোটেই কমতি ছিল না। শরীফ স্যারও ক্ষণিকের জন্য হয়ে গেলেন একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। আমরা সবাই স্যারের ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দী হলাম। জানে আলম তো একাই তিন শ’ সেলফি তুলে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছে। সারি নদীতে নৌকা ভ্রমণে গিয়ে সারি বেঁধে সেলফি তুলতে ভুল করেনি আতিক, শাওন, তরিক, রহিম, শওকত ও সাজ্জাদরা। শেষ পর্যন্ত ছবি তোলায় সেলফি কুইন অর্থিকেও হার মানতে হলো ইভার কাছে। তীব্র গরমের কথা মাথায় রেখে সাজ-সজ্জায় একটু বাড়তি সতর্ক ছিল লিমা আর শুক্লা। রোদের দাবদাহ তাদের সৌন্দর্য বিন্দুমাত্র ঘায়েল করতে পারেনি। এ দুজনের সৌন্দর্যের রহস্য খুঁজে বের করতে সৌম্য আর অনিককে রীতিমতো মাথার ঘাম ঝরাতে হয়েছে। এদিকে সাইপ্রাস সেন্টারে দুপুরের টাট্কা রোদে ঘুরে বেড়ানোর সময় রোমানা ম্যামের কাছ থেকে সানস্কিন নিতে গিয়ে আমাদের হাতে ধরা পড়ে যান সাখাওয়াত স্যার। স্যার তখন কনফিডেন্টলি এটাকে মশার ওষুধ বলে চালিয়ে দিলেন। অন্যদিকে ‘বিষবৃক্ষ’ ও ‘মান্না ভাই’ নাম নিয়ে বড্ড বিপাকে পড়ছে তানভীর আর বাতেন। ‘বিষবৃক্ষ’ আর ‘মান্না ভাই’ স্লোগানে মুখরিত পুরো ডাক বাংলো। ইভার আর মান্না ভাইয়ের কমলা আদান-প্রদানের কেমেস্ট্রি নিয়ে ডাক বাংলোতে ইনস্ট্যান্ট গান বানালো অনিক। ‘মান্না ভাই, মান্না ভাই, একটা কমলা খেতে চাই। সেই কমলা দিয়ে আমরা রস বানাইয়া খাই।’ অনিকের বানানো গানটি তখন উঠতে বসতে গাইতে শুরু করল সবাই। এদিকে ‘বিষ ট্রি বৃক্ষের সমাহার’ আর ‘বিষ রূপ বৃক্ষ’ বিষবৃক্ষের এমন ব্যাসবাক্য আবিষ্কার করে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিল সৈকত। তার মতে ‘বিষবৃক্ষ’ নাকি একটি বহুরুপী সমাস। দিনভর ঘোরাঘুরির পাশাপাশি স্যাম্পল কালেকশন, হ্যামার, ক্লাইনোমিটার ও ম্যাপ নিয়ে ছোটাছুটি করতে করতে কখন যে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল তা আমরা মোটেও টের পেলাম না। বেলা শেষে ঘড়ির কাঁটা আবারও মনে করিয়ে দিল এবার ঘরে ফেরার পালা। দু-ধারে সিলেটের ঘন সবুজ প্রকৃতিকে পেছনে ফেলে আমাদের ট্রেন ছুটল ইট-পাথরের নগরীর দিকে।
×