ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ॥ শিক্ষাঙ্গনে জামায়াতী আধিপত্য!

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

রাজশাহীতে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ॥ শিক্ষাঙ্গনে জামায়াতী আধিপত্য!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দাওয়াত ও লোভনীয় উপহার দিয়ে ম্যানেজ করে শিক্ষাঙ্গনে জামায়াত-শিবিরের আধিপত্য বিস্তারের নতুন কৌশলের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নড়েচড়ে বসেছে শিক্ষা প্রশাসন। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ ও সরকারের একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশের পর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জামায়াত-শিবিরের সব ধরনের অনুষ্ঠান বর্জনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এমনকি তাদের দেয়া উপহার নেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে শিক্ষকদের। এদিকে রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জামায়াতের সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার তৎপরতা সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে তৎপর হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া চিঠির পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে। আদেশে, গাজীপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, ব্যক্তিগত দাওয়াতে অংশ নেয়া এবং উপহারসামগ্রী নেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবির গাজীপুরে গোপন তৎপরতার অংশ হিসেবে শিক্ষকদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত করে উপহারসামগ্রী দিয়েছে। এমনকি তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত্র একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে গত ১৫ মার্চ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। ২৩ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। গত মঙ্গলবার জনকণ্ঠ পত্রিকার তথ্যপ্রমাণসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জামায়াত-শিবিরের তৎপরতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে জামায়াত-শিবিরের নতুন তৎপরতার নানা তথ্য। জানা গেছে, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দাওয়াত ও লোভনীয় উপহার দিয়ে ম্যানেজ করে শিক্ষাঙ্গনে আধিপত্য বিস্তারের নতুন কৌশলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবির। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে স্বাধীনতাবিরোধী উগ্রবাদী এ সংগঠনটি। জামায়াত-শিবিরের এ গোপন তৎপরতাকে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি অভিহিত করে সরকারকে সতর্ক করেছে একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষাঙ্গনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে সেখানে গোপনে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে জামায়াত-শিবির। ব্যক্তিগত দাওয়াত, উপহারসামগ্রী প্রদান, শিক্ষা বৈঠক, খেলাধুলার আড়ালে চলছে উগ্রবাদী তৎপরতা। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ ও উপহারসামগ্রী প্রদান করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে, যা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। সূত্র বলছে, সম্প্রতি সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে রাজধানীর পাশে গাজীপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে জামায়াত-শিবিরের নয়া তৎপরতার প্রমাণ পাওয়ার পর দেশের সকল শিক্ষাঙ্গন বিষয়েও সুনির্দিষ্ট চিত্র ও সুপারিশ করা হয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। যেখানে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক কলেজের অধ্যক্ষের দফতরে জামায়াত-শিবির নেতাদের গোপন বৈঠকের ছবিও দেয়া হয়েছে। গাজীপুরের টঙ্গী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম তার অফিস কক্ষে শিবিরের নেতাদের দেয়া উপহারসামগ্রী গ্রহণ করছেন এমন ছবিও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া একাধিক প্রতিষ্ঠানে জামায়াত-শিবিরের ‘দায়িত্বশীল শিক্ষা বৈঠক-২০১৭’ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এ সকল কাজই চলছে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ম্যানেজ করে। এদিকে রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার তৎপরতা সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) মহাপরিচালকের কাছে এ তথ্য জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। জরুরী ভিত্তিতে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতেও বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত আদেশ আসে মাউশিতে। ওই আদেশে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না তা জানানো হয়নি। জরুরী ভিত্তিতে তা জানানোর নির্দেশও দেয়া হয় আদেশে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এর আগে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর ভিত্তিতে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দেয় সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনের আলোকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাউশির মাধ্যমে রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার তৎপরতা বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মাউশির নীরবতায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নতুন করে আদেশ দেয়া হয়েছে।
×