ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২৮ দফা

প্রকাশিত: ০১:২৪, ২০ মার্চ ২০১৭

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২৮ দফা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’ যাত্রীবান্ধব করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এছাড়াও পরিবহনে নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানী বন্ধ করা, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করাসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ২৮ দফা দাবি জানানো হয়েছে বেসরকারী এই সংগঠনের পক্ষ থেকে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া এক স্মারকলিপিতে এসব দাবি দাওয়া উল্লেখ করা হয়। এদিকে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালকদের নিয়ে ধারাবাহিক কর্মশালা শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। কর্মশালায় ট্রাফিক আইন মেনে চলা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা, বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন গাড়ী না চালাতে চালকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি যত্রতত্র গাড়ী পাকিং না করার, ঝুঁকিপূর্ণ অভার-টেকিং থেকে বিরত থাকা, অভার-লোডিং ও অভার স্পিডে গাড়ী না চালানোর জন্য চালকদের পরামর্শ দেয়া হয়। যাত্রী কল্যান সমিতির দাবি দাওয়ার মধ্যে রয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ী চালক, মালিক, যাত্রী, হেলপার, কন্ডাক্টর, সড়ক নির্মাণ প্রকৌশলী, সড়ক সুপারভিশন কর্মকর্তা, ঠিকাদার, বিলবোর্ড স্থাপনকারী, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বা অন্য যে কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা এবং এসব অপরাধে অপরাধীর মামলা ৩০২ ধারায় অন্তর্ভূক্ত করা। সড়ক দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনা তহবিল’ গঠনের দাবি জানিয়ে বলা হয়, এই তহবিল থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। গণপরিবহনে নিবন্ধন নম্বর, রোড নম্বর, কোম্পানীর লেগো ব্যতিত যাত্রীর সাথে প্রতারণা মূলক শব্দ যেমন- সিটিং সার্ভিস, গেইট লক সার্ভিস, ডাইরেক্ট সার্ভিস, স্পেশাল সার্ভিস, সময় নিয়ন্ত্রণ সার্ভিস, কম স্টপেজ সার্ভিস, ক্লোজডোর সার্ভিস ইত্যাদি লেখা যাবে না। পিক আওয়ারে দরজা বন্ধ করে গণপরিবহন চালানো যাবে না। দেশের যাত্রী ছাউনি ও বাস টার্মিনালে “ডিজিটাল যাত্রী সেবা তথ্য কেন্দ্র” চালু করার বিষয়টিও আইনে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে বলা হয়, যানবাহনে প্রতারণা যেমন- অজ্ঞানপার্টি, মলমপাটি, হিজড়া, ইভটিজার, পকেটমার, ছিনতাইকারী, টিকেট কালোবাজারীর কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সকল শ্রেণীর গণপরিবহণে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়াও সংগঠনের প্রস্তাবিত দাবি দাওয়ার আরো উল্লেখ করা হয়, ছাত্র-ছাত্রী ও প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতে সকল শ্রেণীর গণপরিবহণে হাফ ভাড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করা। মহানগর, জেলা, উপজেলা ভিত্তিক “যাত্রী অভিযোগ কেন্দ্র” চালু করা। এসব অভিযোগ কেন্দ্রে টোল ফ্রি হটলাইন ফোন নম্বর চালু করা। এসব ফোন নম্বর গণপরিবহণের ভিতরে যাত্রী সাধারণের দর্শনীয় স্থানে লিখে রাখা। পরিবহনের অনলাইন সেবা সমুহ, ই-টিকেটিং, ই-সার্ভিস, ই-ক্যাব সার্ভিস, ই-টেক্সি সার্ভিস, ই-রন্ট-এ কার সার্ভিস ইত্যাদি আইনে অন্তর্ভূক্ত করা। রোড ফ্রেনসাইজ সিস্টেম, গণপরিবহনের জন্য আলাদা লেইন বিষয়টি আইনে অন্তর্ভূক্ত করা। মহানগর, জেলা ও বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিতে মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করা। গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ কমিটি ও ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটিতে মালিক শ্রমিকদের সংখ্যানুপাতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করা। অযান্ত্রিক যানবাহন, অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভূক্ত করা। যাত্রী হয়রানী ও প্রতারণা বন্ধে বাস টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করা। পরিবহনের নিবন্ধন, নিয়ন্ত্রণ, লাইফটাইম নির্ধারণ, এ্যাক্সেল লোড, কর মওকুপ, রোড পারমিট ইস্যু, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়মনিটরিংসহ সময়ে-সময়ে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নির্ধারণের কমিটিসমুহে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করা। আইন লঙ্ঘন করে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলসহ জেল-জরিমানা বা উভয় দন্ডের ব্যবস্থা রাখা। গণপরিবহনের নারী নির্যাতন, ধর্ষন-এর শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করা। সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করা যাবে না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের শাস্তি কঠোর করা। ঈদ যাত্রা, পূজাপার্বন বা সরকারী ছুটির দিবসকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করা যাবে না। গণপরিবহনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বা নিবন্ধীকরণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত আসনের অধিক সংখ্যক আসন সংযোজন করা যাবে না। যাত্রী ছাউনী, পাবলিক টয়লেট, সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনের টয়লেটসমুহ লিজ বা ইজারা দেয়া যাবে না। প্রতি জেলায়, মহানগরে আলাদা ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠনের মাধ্যমে এগুলো পরিচালনা নিশ্চিত করা। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল, সড়ক পরিবহন উপদেষ্ঠা পরিষদসহ সকল পরিবহন কমিটিতে মালিক-শ্রমিকদের সংখ্যানুপাতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করা। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের শাস্তি ও দন্ড যুগ উপযোগী করা। বাস স্টপেজ, জেব্রা ক্রসিং অমান্য করলে গাড়ী-পথচারী উভয়ের শাস্তির বিধান করা। যাত্রী ছাউনী, ফুটপাত, বাস স্টপেজ, বাস-বে অবৈধ দখলকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান করা। নিবন্ধনবিহীন ভূয়া নম্বরধারী, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি নসিমন, করিমন যানবাহন চালানোর শাস্তি বিধান করা। গণপরিবহন পারমিটের শর্ত লংঘন করলে, যাত্রীকে মাঝপথে নামিয়ে দিলে, নির্ধারিত গন্তব্যে না নামিয়ে জোরপূর্বক বেশি দূরত্বে নিয়ে গেলে শাস্তি ও জরিমানার বিধান করা ও জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক, জেলা সড়ক, ফিডার রোডের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রস্তাাবিত “বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৭” এ এসব দাবীনামা সমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হলে এই আইনটি একটি জনবান্ধব ও যাত্রীবান্ধব আইনে পরিণত হবে। এতে সড়ক পরিবহণ সেক্টরে নৈরাজ্য বন্ধ হবে। একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
×