ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

সাকিব-মুস্তাফিজের রেকর্ড

অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রকে  হারাল  বাংলাদেশ

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০২:০১, ২৬ মে ২০২৪

অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রকে  হারাল  বাংলাদেশ

.

আগের দুই ম্যাচে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল ক্রিকেট বিশ্বের। একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে একতরফা জয় তুলে নেবে বাংলাদেশ দল। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টো। টানা দুই ম্যাচ বাংলাদেশ হেরেছে। হারের ধরন যেমন তাতে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কা তীব্র হয়ে ওঠে। তবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে ১০ উইকেটে যুক্তরাষ্ট্রকে বিধ্বস্ত করে হোয়াইটওয়াশ এড়িয়েছে বাংলাদেশ দল। তবে ক্ষুণœ হওয়া মর্যাদা  মোটেও পুনরুদ্ধার করতে পারেনি তারা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ৩ ম্যাচের সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। শনিবার হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে আগে ব্যাট করতে নেমে যুক্তরাষ্ট্র ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১০৪ রান করে। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০-তে ৬ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া ১ উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে ১৭তম বোলার হিসেবে এবং দ্বিতীয় বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ৭০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব আল হাসান। জবাবে তানজিদ হাসান তামিমের ঝড়ো ফিফটিতে ১১.৪ ওভারে বিনা উইকেটে ১০৮ রান তুলে অনায়াস জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র টানা দুই টি২০ জিতে বিস্ময়ের জন্ম দেয়। 
অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল, আলী খান, স্টিভেন টেইলর ও হারমিত সিং যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন। এর মধ্যে প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয়ে হারমিত ও দ্বিতীয় ম্যাচে সিরিজ জয় নিশ্চিত করা ম্যাচে আলী ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের মতো বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ায় শেষ ম্যাচে এই চারজনকে বিশ্রাম দিয়ে অ্যারন জোন্সের নেতৃত্বে  বেঞ্চের শক্তি পরীক্ষা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে তারা। শায়ান জাহাঙ্গীর ও আন্দ্রিয়েস গুস অবশ্য দুর্দান্ত শুরু করেন। ৪.৫ ওভারেই তারা ৪৬ রান তুলে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। তবে ওই ওভারের শেষ বলে সাকিবের বাঁহাতি স্পিনে ১৫ বলে ৫ চার, ১ ছয়ে ঝড়ো ২৭ রান করা গুস সাজঘরে ফেরেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৭০০ উইকেট এটি সাকিবের। ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে ৪৩৬ ম্যাচে ৪৭৪ ইনিংস বোলিং করেছেন সেজন্য তিনি। ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র ১৭তম বোলার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন সাকিব। এর মধ্যে স্পিনার মাত্র ৭ জন, বাঁহাতি বোলার সাকুল্যে ৪ জন। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টরির পরেই সাকিব। অর্থাৎ ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে এই কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। ভেট্টরি ৪৪২ ম্যাচের ৪৯৮ ইনিংসে ৭০৫ উইকেট নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সাকিব কীর্তিতে উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 
ষষ্ঠ ওভারে ২০ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ১৮ রান করা শায়ানকে সাজঘরে ফিরিয়ে নিজের বিধ্বংসী রূপের সূত্রপাত করেন মুস্তাফিজ। ফলে ৪৬ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়া যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী ৫৮ রানেই ৯ উইকেট হারিয়েছে। শুধু কোরি অ্যান্ডারসন ১৮ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ১৮ ও শ্যাডলি ভ্যান শ্যালকউইক ১৭ বলে ১২ রান করেন। বাকিরা কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারেননি। এদিন যেন বাংলাদেশ দল তাদের শক্তির প্রমাণ দিয়েছে।

জাকের আলী ও শরিফুল ইসলামকে বসিয়ে লিটন কুমার দাসকে ফেরানো ও বিশ্বকাপের রিজার্ভে থাকা হাসান মাহমুদকে নামিয়ে দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শনী দেখায় বাংলাদেশ। লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন ৪ ওভারে ১ মেডেনে মাত্র ৭ রান দিয়ে ১টি, সাকিব ৩ ওভারে ২৩ রানে ১টি উইকেট নেন। আর মুস্তাফিজ বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক টি২০-তে সেরা বোলিং পারফর্ম্যান্স দেখিয়ে ৪ ওভারে ১ মেডেনে ১০ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। ১৯ জন বোলার ২০ বার আন্তর্জাতিক টি২০-তে ৬ উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে টেস্ট খেলুড়ে দেশের পক্ষে মুস্তাফিজসহ মাত্র ৭ জন এই কীর্তি দেখাতে পেরেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে এর আগে সেরা বোলিং ছিল বাঁহাতি স্পিনার ইলিয়াস সানির। তিনি ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ রানে ৫ উইকেট নেন। মুস্তাফিজের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে মাত্র ১০৪ রান করে যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে তানজিদ ও সৌম্য সরকার দেখেশুনে চড়াও হয়ে খেলেন। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৪৮ রান ওঠে। এরপর আরো আক্রমণাত্মক হয়েছেন দু’জন। তানজিদ ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি করেন ৩৯ বলে এবং শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪২ বলে ৫ চার, ৩ ছক্কায় ৫৮ রানে। সৌম্য ২৮ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় করেন অপরাজিত ৪৩ রান। ৫০ বল হাতে রেখেই জয় পায় বাংলাদেশ।
 

×